৬ বছর আগে ২০১৪ সালে জিম কলিন্স এর নেতৃত্বে এমআইটি ও হার্ভার্ড এর কয়েকজন বিজ্ঞানীর একটি ছোট দল এমআইটির বায়োটেকনোলজি ল্যাবে ভাইরাস শনাক্তকারী সেন্সর আবিষ্কারের লক্ষ্যে কাজ শুরু করেন। তাদের আবিষ্কৃত এই সেন্সর পরবর্তীতে ইবোলা ও জিকাভাইরাস শনাক্তকরণে ব্যবহৃত হয়। বর্তমানে তারা এই সেন্সরকে করোনাভাইরাস শনাক্তকরণের কাজে ব্যবহার করতে চেষ্টা করছেন।
বিজ্ঞানীদের দলটি একটি ফেইস মাস্ক তৈরি করতে চেষ্টা করছেন, যা করোনাভাইরাস আক্রান্ত কোনো ব্যক্তির শ্বাস প্রশ্বাস, হাঁচি বা কাশি থেকে ভাইরাস শনাক্ত করে একটি ফ্লুরোসেন্ট সংকেত দিবে। যদি এই প্রযুক্তিটি সফল হয় তবে এটি অন্যান্য শনাক্তকরণ পদ্ধতি (যেমন: তাপমাত্রা পরীক্ষা) সম্পর্কিত ত্রুটি গুলো সমাধান করতে পারবে।
কলিন্স বিজনেস ইনসাইডারকে বলেন, “আমরা এই মাস্কটি এয়ারপোর্ট, রাস্তায় বা আমাদের কর্মক্ষেত্রেও ব্যবহার করতে পারি। হাসপাতালে রোগীরা চূড়ান্ত শনাক্তের আগে এই মাস্ক ব্যবহারের মাধ্যমে প্রাথমিক শনাক্তকরণ করে প্রয়োজনীয় সতর্কতা মেনে চলতে পারে।”
কলিন্স জানান, তাদের এই প্রজেক্টটি এখনও প্রাথমিক পর্যায়ে থাকলেও এর ফলাফল আশানুরূপ হতে যাচ্ছে। গত কয়েক সপ্তাহে তারা সেন্সরের সাহায্যে লালায় করোনাভাইরাসের উপস্থিতি শনাক্ত করার চেষ্টা করছেন। এছাড়াও তারা মাস্কের ডিজাইনের উপর কাজ করছেন। দলটি আশা করছে পরবর্তী কয়েকসপ্তাহের মধ্যে এই ধারণাটি বাস্তবে কাজ করতে শুরু করবে। কলিন্স বলেন: “বাস্তবে কাজ শুরু করার পর আমরা সম্ভাব্য আক্রান্ত সকলের উপরেই পরীক্ষা করে দেখবো গবেষণাটি আসলেই সফল কিনা। আমরা প্রাথমিকভাবে কাগজের উপর সেন্সরটির কার্যক্ষমতা যাচাই করেছিলাম। পরবর্তীতে দেখেছি এটি প্লাস্টিক, কাঁচ ও কাপড়ের উপরেও কর্মক্ষম।”
সেন্সরটিতে ডিএনএ ও আরএনএ ব্যবহার করা হয়েছে, যা ভাইরাসের সাথে যুক্ত হয়। এই জেনেটিক পদার্থগুলো কাপড়ে শুকনো খটখটে ভাবে মিশে থাকে। এজন্য লায়োফিলিজার (lyophilizer) নামক একটি যন্ত্র ব্যবহৃত হয়, যা ডিএনএ ও আরএনএ কে না মেরে আর্দ্রতা টুকু টেনে নেয়। এই পদার্থগুলো সাধারণ তাপমাত্রায় বেশ কয়েকমাস স্থায়ী হয়, সে হিসেবে মাস্কটিও দীর্ঘস্থায়ী।
মাস্কে ব্যবহৃত সেন্সরটির সক্রিয় হতে ২ টি জিনিসের প্রয়োজন। প্রথমটি হলো আর্দ্রতা, যা দেহ থেকে নিঃসৃত লালা বা মিউকাস থেকে আসবে। দ্বিতীয়ত একটি ভাইরাসের জিনোম সিকোয়েন্স শনাক্ত করতে হবে। এক্ষেত্রে সেন্সরটি জিনোম সিকোয়েন্সের খুব ছোট একটি অংশ শনাক্ত করতে পারলেও এক থেকে ৩ ঘন্টার মধ্যে ফ্লুরোসেন্ট সংকেত দিতে শুরু করবে। এই সংকেতটি খালি চোখে দেখা সম্ভব নয়, এর শনাক্তকরণের জন্য ফ্লুরোমিটার নামক ছোট্ট একটি যন্ত্র প্রয়োজন, যা সংকেতটিকে পরিমাপ করবে।
জিম এর দল এর আগে রঙ পরিবর্তনকারী সেন্সর তৈরি করেছিলো, যা ভাইরাসের উপস্থিতিতে হলুদ থেকে বেগুনি রঙ ধারণ করত। তাই ফ্লুরোসেন্ট সংকেত ছাড়াও রঙ পরিবর্তনকারী সেন্সর ও সম্ভাবনার দুয়ার খুলে দিতে পারে।
এই সেন্সরের সাহায্যে আগের ডায়াগনস্টিক পদ্ধতির চেয়ে তুলনামূলক দ্রুত, সুক্ষ্মভাবে ও কম খরচে ভাইরাস শনাক্ত করা যাবে বলে আশা করছেন বিজ্ঞানীরা। বর্তমানে করোনাভাইরাস শনাক্তকারী পরীক্ষা গুলো করতে প্রায় ২৪ ঘন্টা সময় লাগে, এই সেন্সরের সাহায্যে যা ১–৩ ঘন্টায় শনাক্ত করা সম্ভব।
এই সেন্সরটি যখন জিকা ভাইরাস শনাক্ত করায় ব্যবহৃত হয়েছিলো তখন তা জিকা ভাইরাসের দুটি ভিন্ন প্রজাতি শনাক্ত করতে সক্ষম হয়েছিলো। করোনাভাইরাস যদিও ক্রমাগত মিউটেশন করছে, তারপরও এর প্রধান দুটি ধারা পাওয়া গিয়েছে। একটি এশিয়ান অন্যটি ইউরোপিয়ান। বিজ্ঞানীরা আশা করছেন সেন্সরটি করোনাভাইরাসের প্রজাতিও শনাক্ত করতে পারবে।
করোনাভাইরাস শনাক্তকরণে বহুল প্রচলিত একটি পদ্ধতি হলো তাপমাত্রা পরীক্ষা। কিন্তু অনেক সময় করোনাভাইরাসের লক্ষণ হিসেবে জ্বর না–ও থাকতে পারে। কিন্তু যেহেতু সেন্সর সরাসরি জিনোম সিকোয়েন্স নিয়ে কাজ করবে, তাই বিজ্ঞানীরা এ থেকে তুলনামূলক বেশি সাফল্য আশা করছেন।
সাদিয়া বিনতে চৌধুরী/ নিজস্ব প্রতিবেদক