মাথাব্যথা করছে?
একটা অ্যাসপিরিন নিয়ে নিন!
গ্যাস হয়েছে?
ভয়ের কারন নেই। গ্যাস্ট্রিকের একটা ঔষধ নিয়ে নিন!!
জ্বর জ্বর লাগছে?
একটা নাপা নিয়ে নিন!!!
কখনো কি ভেবে দেখেছেন, এই ঔষধ গুলি কিভাবে কাজ করে বা আমাদের রোগের উপশম করে? এর সংক্ষিপ্ত উত্তর হলো- ঔষধের অনুগুলো শরীরের মধ্য দিয়ে নিজেরা নিজের ইচ্ছায় চলাচল করতে পারেনা, এমনকি শেষ পর্যন্ত তারা কোথায় যাবে তার উপরও অনুগুলোর কোনো নিয়ন্ত্রণ নেই। বরং সে কোথায় গিয়ে কি করবে, তা আগে থেকেই নির্ধারিত থাকে।
সম্প্রতি একজন ফার্মাসিউটিক্যাল বিজ্ঞানী ব্যাখ্যা করেছেন, কিভাবে ঔষধ আমাদের শরীরের কোথায় যেতে হবে/ কাজ করতে হবে তা জানে।
সাধারণত ফার্মাসিউটিক্যালস পণ্যগুলিতে সক্রিয় ঔষধের চেয়েও বেশি কিছু থাকে, যা সরাসরি আমাদের শরীরকে প্রভাবিত করে। সাথে কিছু নিষ্ক্রিয় উপাদান/নিষ্ক্রিয় অনুও রয়েছে যা স্থায়িত্ব, শোষণ, স্বাদ এবং অন্যান্য গুণাবলি বাড়ায় এবং এগুলো ঔষধটিকে তার নির্দিষ্ট কাজ করার ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।
কিভাবে ঔষধ শরীরে শোষিত হয় ও কাজ করে:
ঔষধের দেহে প্রবেশের যাত্রা শুরু হয় ট্যাবলেট বা সিরাপ আকারে তা গিলে ফেলার মাধ্যমে। তারপর সেগুলো অন্ত্রে ঘোরাফেরা করতে করতে ভেঙে গিয়ে রক্ত প্রবাহে শোষিত হয়। এরপর সেই ভাঙা অংশবিশেষ ‘হেপাটিক পোর্টাল শিরা’- নামক একটি বিশেষ পথের মাধ্যমে ক্ষুদ্রান্ত থেকে যকৃতে আসে। এই স্থানে ঔষধের কণাগুলো আরও ভেঙে ঔষধের আসল উপাদানে পরিণত হয় এবং সেগুলো রক্তপ্রবাহের সঙ্গে মিশে যায়। যেহেতু শরীরের সমস্ত অঙ্গ এবং টিস্যু রক্তের সঙ্গে সম্পর্কিত, সেহেতু এই ঔষধটি সবজায়গায় পৌছায়।
তবে সবজায়গায় পৌছালেও শরীরের সর্বত্র ঔষধটি কাজ করবেনা। কেন করবেনা? কারণ অণুগুলি কিছু নির্দিষ্ট রিসেপ্টরের সাথে আবদ্ধ হয়ে শরীরকে প্রভাবিত করে যা একটি নির্দিষ্ট প্রতিক্রিয়াকে সক্রিয় করতে পারে।
ঔষধ মূলত রাসায়নিক উপাদান। এই রাসায়নিকগুলি এমনভাবে সাজানো হয়েছে যে তারা শুধুমাত্র শরীরের কিছু প্রোটিন অণুর সাথে সংযুক্ত হতে পারে, যেগুলোকে বলা হয় রিসেপ্টর। আমাদের কোষের পৃষ্ঠে ও ভিতরে বিভিন্ন ধরনের রিসেপ্টর রয়েছে এবং সেগুলোর প্রতিটির স্বতন্ত্র আকৃতি আছে। ভালোভাবে বোঝার জন্য আপনি এই আকৃতিগুলিকে তালা ভেবে নিতে পারেন, যার প্রতিটি তালার রয়েছে আলাদা চাবি। আর ঔষধের কণাগুলো এসব রিসেপ্টর বা তালাগুলোর চাবি। এই কণাগুলো (চাবি) পুরো শরীর ভ্রমন করার সময় তালা (রিসেপ্টর) এর সাথে আবদ্ধ হয়। যদি এটি ঠিকমতো ফিট হয়, তবে এটিই সেই স্থানের ঔষধ।
আরও পড়ুনঃ সব ব্যথার ঔষধই পেটে গেলে এক ব্যথার ঔষধে অন্য ব্যথা ভালো হয়না কেন?
সঠিক জায়গায় ঔষধ পাওয়া:
রক্তে ঔষধ পৌঁছানোর সবচেয়ে কার্যকর উপায় হলো শিরায় ইনজেকশন দেয়া। এই উপায়ে ঔষধ সমস্ত শরীরে সবচেয়ে দ্রুত সঞ্চালিত হয় এবং পেটের সমস্যা এড়ায়। কিছু ক্ষেত্রে ঔষধগুলির কার্যকারিতা এর ঘনত্বের উপর নির্ভর করে। যেমন, গুরুতর সংক্রমনের জন্য অ্যান্টিবায়োটিক, যা শুধুমাত্র মুখে গ্রহণের মাধ্যমে সরবরাহ করা যেতে পারে। সঠিক স্থানে ঔষধের উচ্চ ঘনত্ব পাওয়ার একটি সহজ উপায় হলো, ঔষধটি যেখানে প্রয়োজন, ঠিক সেখানেই প্রয়োগ করা। যেমন-ত্বকের ফুসকুড়িতে মলম বা অ্যালার্জির জন্য আইড্রপ ব্যবহার করা।
পার্শ্ব প্রতিক্রিয়ার ক্ষেত্রে ব্যতিক্রমতা:
ঔষধ একটি প্রেসক্রিপশনে নির্দিষ্ট পরিমানে নেওয়া হয়। এই নির্দিষ্ট পরিমান থেকে কম নেয়া হলে এটি সেই নির্দিষ্ট রিসেপ্টরের সাথে আবদ্ধ হতে ব্যর্থ হয়। এই ক্ষেত্রে ঔষধটি সম্পূর্ণ অকেজো হয় কারণ এটি তার কার্য সম্পাদনে ব্যর্থ হয়েছে।
আবার, নির্ধারিত পরিমানের চেয়ে বেশি পরিমানে ঔষধ গ্রহণ করা হলে, সেগুলির রিসেপ্টরের সাথে আবদ্ধ হওয়ার সম্ভাবনা অনেক গুনে বেশি থাকে, যার ফলে পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া হিসেবে অপ্রত্যাশিত প্রতিক্রিয়া হয়। তাই একটি ঔষধ সঠিক পরিমানে গ্রহণ করা তার কার্যকারিতার জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
অনামিকা রায়/ নিজস্ব প্রতিবেদক
তথ্যসূত্রঃ সায়েন্স এলার্ট, সায়েন্স এ বি সি