১২ সেপ্টেম্বর, ২০২৩ তারিখে মেক্সিকো সিটিতে সান লাজারো আইনসভা প্রাসাদে UFO নামে পরিচিত অজ্ঞাত উড়ন্ত বস্তুর উপর একটি ব্রিফিং করা হয়। ব্রিফিং এর সময় তথাকথিত মানবদেহ নয়, বরং এমন একটি প্রাণীর দেহ প্রদর্শন করা হয়, যেখানে ধূসর রঙের একজোড়া মৃতদেহকে এলিয়েনদের মৃতদেহ বলে চালিয়ে দেওয়া হয়, যা সারাবিশ্বে এলিয়েনদের অস্তিত্ব নিয়ে বিতর্কের সৃষ্টি করে দিয়েছে।
মেক্সিকোতে এই ঘটনা এটিই প্রথম নয়। এর আগেও একবার একটি এলিয়েনের দেহ তারা সামনে এনেছিলো যা পরবর্তীতে একটি মানব শিশুর দেহ হিসেবে প্রমাণিত হয়। বিভিন্ন বিজ্ঞানীদের মতে মেক্সিকোর এই এলিয়েনদের অস্তিত্ব বিষয়ক খেলা শুধুই একটি বোকামি এবং ‘পাবলিসিটি স্টান্ট’। পৃথিবীতে এলিয়েনদের অস্তিত্ব আছে এমন কোন চাক্ষুষ প্রমাণ আদৌও মিলে নেই।
১৪ সেপ্টেম্বর ২০২৩ বৃহস্পতিবার এলিয়েনদের মহাকাশযান বা আনআইডেন্টিফায়েড ফ্লায়িং অবজেক্ট অর্থাৎ UFO সংক্রান্ত একটি রিপোর্ট প্রকাশ করে আমেরিকার জ্যোতির্বিজ্ঞান প্রতিষ্ঠান নাসা।
যেখানে সবকিছু খোলাসা করে না বলা থাকলেও একটি জিনিস পরিষ্কার করে বোঝা যায় যে, আমাদের সৌরমণ্ডলে মানুষ ব্যতীত অন্য কোন ভিনগ্রহী প্রাণীর অস্তিত্ব নেই অর্থাৎ সৌরমন্ডলে এলিয়েনের উপস্থিতির কোন প্রমাণ পায়নি নাসা। কিন্তু আবার সম্ভাবনাকে উড়িয়েও দিতে পারছে না।
আনআইডেন্টিফাইড ফ্লাইং অবজেক্ট; সংক্ষেপে UFO। বাংলায় যেটাকে অশনাক্ত উড়ন্ত বস্তু বলা যেতে পারে। মহাকাশে মাঝে মাঝে বিভিন্ন বস্তুর নড়াচড়া চোখে পড়ে থাকে, সেগুলোকে UFO হিসেবে চিহ্নিত করা হয়ে থাকে। এই UFO সম্পর্কে সঠিক প্রমাণ না থাকায় সম্পূর্ণ বিশ্বজুড়ে অনেক মানুষই এটিকে এলিয়েনদের বাহন বলে বিশ্বাস করে। তবে এই UFO কে মার্কিন স্পেস এজেন্সি নাসা বলে থাকে UAP বা আনআইডেন্টিফাইড অ্যানাম্যালাস ফেনোমেনা। বাংলায় যেটিকে বলা যেতে পারে অশনাক্তকৃত অস্বাভাবিক ঘটনা।
UFO বা UAP ব্যাখ্যা খুঁজতে গত বছর এক আলাদা গবেষক দল নিয়োগ করে নাসা। ১৬ সদস্যের এই দল গত বছরের অক্টোবর থেকে শুরু করে গবেষণা। উদ্দেশ্য ছিল আসলেই পৃথিবীর বাইরে অন্য কোথাও প্রাণের অস্তিত্ব আছে কিনা জানা। গবেষক দলটি গত মে মাসে তাদের প্রাথমিক ফল প্রকাশ করে। তখন জানানো হয়, সংরক্ষণে থাকা তথ্য ও প্রত্যক্ষদর্শীদের বিবরণ এ বিষয়ে কোনো উপসংহার টানার জন্য যথেষ্ট নয়। এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত গ্রহণ করতে আরো উচ্চমানের গবেষণার প্রয়োজন হবে।
মে মাসে তাদের তথ্যমতে তারা ২৭ বছরে হওয়া ৮০০ টি ঘটনা নিয়ে কাজ করেছে যার মধ্যে ২-৫ শতাংশ ঘটনাকে তারা অস্বাভাবিক বলে জানিয়েছেন। এ সম্পর্কে বিজ্ঞানী দলের অন্যতম সদস্য নাদিয়া ড্রেক বলেন,
“এই ২-৫ শতাংশ অস্বাভাবিক ঘটনা হচ্ছে সেগুলো যা কোন সেন্সর দ্বারা অনুধাবন করা যায়নি।”
১৪ সেপ্টেম্বর প্রকাশিত হওয়া গবেষকদের এলিয়েনের অস্তিত্ব বিষয়ক গবেষণার স্টাডির রিপোর্টের একেবারে শেষ পাতায় বলা হয়,
“এ রকম উপসংহারে আসার কোনো কারণ নেই যে, যে-সব UAP নিয়ে নাসা গবেষণা করছে সেগুলোর পিছনে কোনো বুদ্ধিমান প্রাণীর হাত রয়েছে। তবে যাইহোক এসব বস্তু আমাদের সৌরমণ্ডলের ভেতর দিয়েই ভ্রমণ করছে এখানে পৌঁছাতে”।
যদিও রিপোর্টে বলা হয়নি যে, বহির্জাগতিক কোনো বুদ্ধিমান প্রাণীর অস্তিত্ব আছে। কিন্তু নাসা এই ব্যাপারটিকে সম্পূর্ণ অস্বীকারও করেনি। নাসা বলেছে,
” সম্ভবত পৃথিবীর অভ্যন্তরে অজানা কোনো এলিয়েন প্রযুক্তি কাজ করে চলছে।”
নাসার বিজ্ঞান মিশন অধিদপ্তরের সহযোগী প্রশাসক নিকলা ফক্স বলেন,
“UAP আমাদের গ্রহের এক অন্যতম বড় রহস্য। আমাদের হাতে পর্যাপ্ত তথ্য না থাকায় এই গবেষণায় সুনিশ্চিত বৈজ্ঞানিক ইতি টানতে পারছি না। আমরা জানি না যে এই UAP গুলো কেমন ও কোন জায়গা থেকে আসছে।”
রিপোর্টে বলা হয়, বেশিরভাগ UFO সম্পর্কিত ঘটনা ব্যাখ্যা করা গেলেও কিছু ঘটনা পাওয়া যায় যা মানবসৃষ্ট বা প্রাকৃতিক কারণে হয়নি।
সাম্প্রতিক বছরে মার্কিন সরকার UAP ঘটনাগুলোকে গুরুত্বের সঙ্গে হাতে নিয়েছেন। তাদের মতে, UAP এর সাথে বিদেশি রাষ্ট্রের গোয়েন্দা কার্যক্রমের সংযোগ রয়েছে। বিভিন্ন প্রযুক্তি উন্নত দেশগুলো অন্য দেশের উপর নজর রাখার জন্য বিভিন্ন উড়ন্ত বস্তুর সাহায্য নিচ্ছে বলে ধারণা করা হচ্ছে।
বিশ্বব্রহ্মাণ্ডে কোনো এলিয়েন আছে কি নেই তা নিয়ে এখনও কোনো বৈজ্ঞানিক ইতি টানতে পারেনি নাসা। এছাড়া পৃথিবীতে এখন পর্যন্ত কোনো ভিনগ্রহের প্রযুক্তি কিংবা ভিনগ্রহের কোনো অস্বাভাবিক উপাদান খুঁজে পাওয়া যায়নি যার উপর ভিত্তি করে এলিয়েনের অস্তিত্ব প্রমাণ করা যায়।
তবুও মার্কিন জ্যোতির্বিজ্ঞান সংস্থা নাসা ভিনগ্রহী প্রাণী সম্পর্কিত গবেষণাটি ‘সম্ভাবনার’ উপর বিশ্বাস করে চালিয়ে যাচ্ছেন। অর্থাৎ, সমস্ত ঘটনা, গবেষণা প্রত্যক্ষদর্শী ও ফলাফলের উপর ভিত্তি করে বিভিন্ন গবেষকরা মনে করেন যে, মার্কিন জ্যোতির্বিজ্ঞান সংস্থা ‘এলিয়েন আছে’ এ কথাটির উপর অনুমান করে সম্ভাবনা নিয়ে গবেষণা চালিয়ে যাচ্ছে।
শাহিনুল ইসলাম রাফি / নিজস্ব প্রতিবেদক
তথ্যসূত্র: লাইভসাইন্স, এবিসি সেভেন শিকাগো, স্পেস.কম, স্মিথসোনিয়ানমাগ.কম
+1
+1
+1
+1
2
+1
+1
+1