বলুন তো একেক গ্রহের একেক রঙ কেন?
ধূসরবর্ণের বুধগ্রহ, লালচে মঙ্গল কিংবা নীলাভ পৃথিবী, আমাদের সৌরজগতের আটটি গ্রহের বিভিন্ন ছবি আমরা অহরহই দেখতে পাই। কিন্তু কখনো কি আমরা ভেবে দেখেছি ঠিক কেন একেকটি গ্রহের রঙ একেক রকম? চলুন জেনে আসা যাক এই প্রশ্নের উত্তর!
বুধ: সৌরজগতে বুধের অবস্থান সূর্যের সবচেয়ে কাছে। টেলিস্কোপের ভেতর দিয়ে তাকালে দেখা যায় এর গাঢ় ধূসর রঙ। এ গ্রহের মাটিতে আয়রনের পরিমাণ অনেক বেশি, আর বায়ুমণ্ডল নেই বললেই চলে। নাসার মেসেঞ্জার মিশন-এর মাধ্যমে দেখা গিয়েছে যে, বুধের উপরিভাগ ধূলার মোটা স্তর এবং আগ্নেয় সিলিকেট পাথরে ঢাকা, যার ফলে এর বর্ণ এমন মলিন।
শুক্র: ওজন, আকার, আয়তন, ঘনত্ব, মাধ্যাকর্ষণ শক্তিসহ বিভিন্ন জিনিসে পৃথিবীর সাথে মিল থাকায় শুক্রগ্রহকে পৃথিবীর বোন বলা হয়। টেলিস্কোপের ছবি অনুযায়ী শুক্রের রঙ ধবধবে সাদার সাথে কিছুটা হলদে মেশানো। শুক্রের চারপাশের মেঘ মূলত সালফিউরিক অ্যাসিড দিয়ে তৈরি, যা সব ধরনের আলোকে প্রতিফলিত করে। এর ফলে শুক্রকে সাদা দেখায়। আর হলদে ভাব কেন, তা নিয়ে আছে অনেক থিওরি। কারো মতে, এক “অজানা অতিবেগুনী রশ্মি”-এর উপস্থিতিতে এটা হয়। তবে এ ব্যাপারে বিজ্ঞানীরা এখনও গবেষণা করে যাচ্ছেন।
মঙ্গল: সম্প্রতি বিজ্ঞানীদের মঙ্গলে মানবসভ্যতা স্থাপন করা নিয়ে লাফালাফি করার সুবাদে আমরা লালচে-বাদামি মঙ্গলকে বেশ ভালোই চিনি। বুধের মতো এরও মাটিতে আয়রণের পরিমান বেশি। তবে এ গ্রহে মাঝে মাঝেই ধূলার ঘূর্ণিঝড় হয়, যার ফলে গ্রহের রঙ কমলা বা হলুদাভ হয়ে যায়।
জীবন্ত গ্রহ: এবার কথা বলি আমাদের মাতৃগ্রহ পৃথিবী নিয়ে। এ গ্রহের নীল রঙের পেছনে রয়েছে ভূপৃষ্ঠে অধিক সংখ্যার জলাশয়ের উপস্থিতি। পৃথিবীর জীবমণ্ডল এই গ্রহের বায়ুমণ্ডল ও অন্যান্য অজৈবিক অবস্থাগুলিতে গুরুত্বপূর্ণ পরিবর্তন এনেছে। এর ফলে একদিকে যেমন জীবজগতের বংশবৃদ্ধি ঘটেছে, অন্যদিকে তেমনি ওজন স্তর গঠিত হয়েছে।
বৃহস্পতি: বৃহস্পতি গ্রহের চারিত্রিক বাদামি এবং বেইজ (beige) রঙের জন্য দায়ী হাইড্রোজেন, হিলিয়ামসহ বিভিন্ন উপাদানের উপস্থিতি।এতে অপেক্ষাকৃত ভারী মৌলসমূহ দ্বারা গঠিত একটি কেন্দ্রও থাকতে পারে। খুব দ্রুত ঘূর্ণনের কারণে এর আকৃতি হয়েছে কমলাকৃতির গোলকের মত। বিষুবের নিকটে ক্ষুদ্র কিন্তু চোখে পড়ার মত উল্লেখযোগ্য একটি স্ফীতি অংশ রয়েছে। বাইরের বায়ুমণ্ডল বিভিন্ন অক্ষাংশে বিভিন্ন ব্যান্ডে বিভক্ত যেগুলো বেশ সহজেই চোখে পড়ে। এ কারণে একটি ব্যান্ডের সাথে অন্য আরেকটি ব্যান্ডের সংযোগস্থলে ঝড়-ঝঞ্ঝাপূর্ণ পরিবেশ বিরাজ করে।
শনি: বৃহস্পতির মতোই শনির মাটিতে ৯০% হাইড্রোজেন ও ১০% হিলিয়াম আছে। যার ফলে দু’জনের রঙটাও কাছাকাছি। শনির অভ্যন্তরীণ অংশটি সম্ভবত লোহা-নিকেলের একটি কেন্দ্রস্থল ও পাথর (সিলিকন ও অক্সিজেন যৌগ) দ্বারা গঠিত। এই কেন্দ্রস্থলটিকে ঘিরে রয়েছে ধাতব হাইড্রোজেনের একটি গভীর স্তর, তরল হাইড্রোজেন ও তরল হিলিয়ামের একটি মধ্যবর্তী স্তর এবং সর্বোপরি একটি গ্যাসীয় বহিঃস্তর। বায়ুমণ্ডলের উপরিতলে অ্যামোনিয়া উপস্থিতির জন্য শনি গ্রহের রং ফিকে হলুদ। ধাতব হাইড্রোজেনের মধ্যে প্রবহমান তড়িৎ প্রবাহকে শনির গ্রহগত চৌম্বক ক্ষেত্রের উৎস মনে করা হয়। এই চৌম্বক ক্ষেত্রটি পৃথিবীর চৌম্বক ক্ষেত্রের তুলনায় দুর্বল হলেও শনির বৃহত্তর আকারের জন্য এটির ক্ষমতা পৃথিবীর তুলনায় ৫৮০ গুণ বেশি। শনির চৌম্বক ক্ষেত্রের শক্তি বৃহস্পতির কুড়িভাগের প্রায় একভাগ।
হাসিনাত রিফা/নিজস্ব প্রতিবেদক
তথ্যসূত্রঃ Astronomy