বাংলাদেশের অন্যতম সেরা ‘আয়নাবাজি‘ চলচ্চিত্রে চঞ্চল চৌধুরীর সুনিপুণ অভিনয় দক্ষতা কার না মনে আছে? সেই চলচ্চিত্রে চঞ্চল চৌধুরী ‘একাধিক চরিত্র’-এর রংবদল দেখিয়ে নিজের ক্যারিয়ারের সবচেয়ে উৎকৃষ্ট একটি কাজ তার দর্শকদের উপহার দিয়েছেন।
তার এই অদ্ভুত চারিত্রিক অদল-বদল দর্শকদের একইসঙ্গে যেমন বিস্মিত করেছে তেমনি ভাবিয়েছে। এখন প্রশ্ন হলো, এই চারিত্রিক দ্বৈততা বা একাধিক চরিত্র কি শুধু একটি সাধারণ বিষয়মাত্র নাকি এর পেছনে রয়েছে অন্য কোনো কারণ? বাইপোলার ডিজঅর্ডার কি এটাই? এটা কি মাল্টিপল পার্সোনালিটি সম্পর্কিত নাকি পরিচয়ের সংকট!?
‘ডিসোসিয়েটিভ আইডেন্টিটি ডিসঅর্ডার’ (ডিআইডি) (Dissociative Identity Disorder- DID) মানসিক স্বাস্থ্যের এমন এক অবস্থা যেখানে আক্রান্ত ব্যক্তিরা নিজেদের মধ্যে দুটি বা ততোধিক পৃথক চরিত্র ধারণ করে। সময়ের সাথে সাথে এসকল মানুষের চারিত্রিক বৈশিষ্ট্যগুলো বিভিন্নভাবে পরিবর্তিত হয় এবং প্রয়োজন অনুযায়ী এরা নিজের আচরণ নিয়ন্ত্রণ করে। সেক্ষেত্রে প্রতিটি পরিচয়ের রয়েছে আলাদা ইতিহাস, বৈশিষ্ট্য, পছন্দ ও অপছন্দ। এই ডিআইডি আক্রান্ত ব্যক্তির মনে মাঝেমধ্যে হ্যালুসিনেশনের উদ্ভব ঘটাতে পারে যার বাস্তবে কোনো ভিত্তি নেই। অর্থাৎ এই ব্যাধি একজন ব্যক্তির বাস্তবতার সাথে নিজেকে সংযোগ করার ক্ষমতাকে প্রভাবিত করে। অন্যান্য বিচ্ছিন্নতামূলক ব্যাধিগুলির মধ্যে রয়েছে:
নিশ্চয়ই মনে শঙ্কা সৃষ্টি হচ্ছে! এই মানসিক ব্যাধি কি তাহলে খুবই সাধারণ? অনেক মানুষের মাঝেই দেখা যায়? উত্তর হচ্ছে, না। ডিআইডি খুবই বিরল। ব্যাধিটি মোট জনসংখ্যার 0.01 থেকে 1% এর মধ্যে প্রভাবিত করতে পারে। তবে এটি যেকোনো বয়সে ঘটতে পারে। পুরুষদের তুলনায় মহিলাদের ডিআইডি হওয়ার সম্ভাবনা বেশি।
ডিআইডিতে আক্রান্ত ব্যক্তির লক্ষণসমূহ:
ডিআইডি সহ একজন ব্যক্তির দুটি বা তার বেশি স্বতন্ত্র পরিচয় রয়েছে। এদের মধ্যে একটি “মূল” পরিচয় হল ব্যক্তির ‘স্বাভাবিক ব্যক্তিত্ব’। আরেকটি “পরিবর্তনকারী” ব্যক্তির ‘বিকল্প ব্যক্তিত্ব’। ডিআইডি সহ কিছু লোকের ব্যক্তিত্বের 100টি পর্যন্ত পরিবর্তন লক্ষ্য করা গিয়েছে এবং সেই পরিবর্তনগুলি একে অপরের থেকে খুব আলাদা। সেই সকল পরিচয়ের বিভিন্ন লিঙ্গ, জাতি, আগ্রহ এবং তাদের পরিবেশের সাথে মিথস্ক্রিয়া করার উপায় রয়েছে।
ডিআইডি-এর অন্যান্য সাধারণ লক্ষণ ও উপসর্গগুলো হলো:
১. অতিরিক্ত দুশ্চিন্তা।
৩. বিষণ্ণতা.
৫. ড্রাগ বা অ্যালকোহল অপব্যবহার।
৬. স্মৃতিশক্তি হ্রাস।
৭. আত্মহত্যার চিন্তা বা নিজের ক্ষতি।
এখন, প্রশ্ন থাকতে পারে ঠিক কি কি কারণে ডিআইডি হওয়ার সম্ভাবনা থাকে?
ডিআইডি সাধারণত শৈশবে যৌন বা শারীরিক নির্যাতন, অযাচিত অথবা অপ্রীতিকর কোনো ঘটনাগুলির প্রতিক্রিয়া হিসাবে বিকশিত হয়। এই ডিসঅর্ডার হল সেই সকল ট্রমা থেকে নিজেকে দূরে রাখার বা বিচ্ছিন্ন করার একটি উপায় মাত্র।
তাহলে কি এই ব্যাধির কোনো চিকিৎসা নেই?
আসলে ডিআইডির কোন প্রতিকার নেই। যারা এ ব্যাধিতে আক্রান্ত তারা বেশিরভাগ মানুষ তাদের বাকি জীবন এ ব্যাধি নিয়েই পার করবে। কিন্তু সঠিক চিকিৎসা এর উপসর্গ অনেকাংশে কমাতে সাহায্য করতে পারে। তবে এটিকে কোনোভাবেই বাড়তে দেওয়া যাবে না। সেক্ষেত্রে এটি স্কিৎজোফ্রেনিয়া-তে রুপান্তরিত হতে পারে।
একজন শক্তিশালী সমর্থনকারী, যেমন: আপনার স্বাস্থ্যসেবা প্রদানকারী, মেন্টর, পরিবারের সদস্য এবং বন্ধুরা যারা আপনার অবস্থা সম্পর্কে জানেন, আপনাকে বোঝার চেষ্টা করেন তারা ডিআইডি-এর সঙ্গে আপনার জীবনযাপনকে আরও সহজলভ্য করে তুলতে পারেন। আপনার সমর্থন সিস্টেমের লোকেদের সাথে খোলামেলা এবং সততার সাথে যোগাযোগ করুন এবং সাহায্য চাইতে কখনো ভয় করবেন না।
হৃদিতা ইফরাত/ নিজস্ব প্রতিবেদক