আজ বিশ্ব মৌমাছি দিবস। প্রতিবছর ২০শে মে বিশ্বব্যাপী মৌমাছি দিবস উদযাপিত হয়। ২০শে মে হওয়ার কারণ হল সর্বপ্রথম যিনি মৌমাছি পালনের উদ্যোগ নিয়েছিলেন অর্থাৎ মৌমাছি পালনের প্রবর্তক অ্যান্টন জানসা (১৭৩৪-১৭৭৩) এই দিনে জন্মগ্রহণ করেছিলেন।
আন্তর্জাতিক দিবস হিসেবে উদযাপন করার মূল উদ্দেশ্য হল বাস্তুতন্ত্র এবং পরাগবাহক হিসেবে মৌমাছির ভূমিকাকে বিশ্বব্যাপী স্বীকৃতি দেওয়া। জাতিসংঘের সদস্য দেশগুলো আন্তর্জাতিক মৌমাছি দিবস পালনের প্রস্তাবকে অনুমোদন দেয়।
প্রাচীন গ্রিক পুরাণে মৌমাছিকে ‘ঈশ্বরের দূত’ এবং মৌ-রসকে ‘অমৃত’ আখ্যা দেওয়া হয়েছিল। বিশ্বব্যাপী অন্যান্য মৌমাছি এবং পরাগায়িত পোকামাকড়ের তুলনায় মধু মৌমাছি সবচেয়ে বেশি রয়েছে। আমাদের খাদ্য উৎপাদনে এই মৌমাছি সবচেয়ে বেশি ভূমিকা পালন করে। অনুমান করা হয় যে, আমরা প্রতিদিন যে খাদ্য গ্রহণ করি তার এক তৃতীয়াংশ মূলত মৌমাছিদের পরাগায়নের উপর নির্ভর করে। মোটামুটি সব ধরনের শস্য, ফল পরাগায়নে পরাগবাহক হিসেবে মৌমাছির ভূমিকা গুরুত্বপূর্ণ।
আবার এই মৌমাছি থেকেই আমরা মধু পাই। মধু মৌমাছি মূলত ফুল থেকে মধু সংরক্ষণ করে। একটি মৌচাকে ৭০ হাজার মৌমাছি বছরে গড়ে ৩০ কেজি মধু উৎপাদন করে। একটি মৌমাছি জীবনকালে এক চা–চামচের ১২ ভাগের ১ ভাগ মধু উৎপাদন করতে পারে। অর্থাৎ এক চা–চামচ মধুর জন্য ১২টি মৌমাছির সারা জীবন চলে যায়।
১ টেবিল চামচ অর্থাৎ ২১ গ্রাম মধুতে থাকে ১৭ গ্রাম চিনি যা গ্লুকোজ , ম্যাল্টজ, ফ্রুক্টোজ এবং সুক্রোজ । তাছাড়া ৬৪ ক্যালোরি শক্তি ও পাওয়া যায়।
মধুতে কোন রকমের চর্বি বা প্রোটিন থাকে না ।তবে ভিটামিন ও খনিজ থাকে।
মধুতে রয়েছে এন্টিঅক্সিডেন্ট যা রক্তচাপ কমাতে সাহায্য করে। মধুতে অনেক উপকারিতা রয়েছে। আর এই মধু সংগ্রহে কাজ করছে মৌমাছি।
মৌমাছিকে একদিক থেকে আমরা আমাদের বন্ধু বলতে পারি। যে আমাদের শুধুমাত্র উপকারই করে যাচ্ছে। তাই মৌমাছিকে বাঁচিয়ে রাখতে আমাদেরও কিছু করণীয় রয়েছে যেমন বেশি বেশি গাছ লাগানো, বিশেষ করে ফুল গাছ লাগানো, তাদের জন্য চাক তৈরি করা ইত্যাদি।
বিশ্বব্যাপী অনেক প্রজাতির মৌমাছি রয়েছে।
যেমন:
Bumble bee: এরা মূলত সাইজে অনেক বড় এবং পরাগবাহক হিসেবে মধু মৌমাছির পরের এর স্থান ।তবে বৈশ্বিক পরিবর্তনের ফলে এদের অস্তিত্ব অনেক কমে গেছে।
Honey bee: বাস্তুতন্ত্রে সবচেয়ে বড় ভূমিকা এই প্রজাতির। বাম্বল বি এর মত এরা লোমশ নয়। এদের মধ্যে তিনটি অংশে কলোনি হয়; রানী মৌমাছি , কর্মী মৌমাছি এবং ড্রোন মৌমাছি।
Africanized bee: এরা ‘killer bees’নামে পরিচিত। এরা মূলত সাধারণ মৌমাছি এবং মধু মৌমাছির ক্রস ব্রিড।
Carpenter bee: এরা সাইজে অনেকটাই বড় এবং এরা অন্তর্মুখী। তাদের এই নামের মূল কারণ এরা কাঠের ভিতরে বাসা বাঁধে।
Digger bee: এরা ১২ থেকে ১৮ মিলিমিটার হয়ে থাকে। এরা এদের বিশেষ গ্রন্থি ব্যবহার করে খনন করে ঘর তৈরি করে। ঘরের ভিতরে কয়েকটি টানেলের মত জায়গা তৈরি করে খাবার ও ডিম সংগ্রহের জন্য।
এছাড়া রয়েছে Mining bees, leafcutter bees, mason bees, sweet bees, yellow faces bees। যাদের নাম দেখেই বোঝা যাচ্ছে যে তাদের বৈশিষ্ট্য বা কাজ কেমন হবে।
তবে নতুন এক ধরনের মৌমাছি পাওয়া গেছে যার অর্ধেক দেহ পুরুষ এবং বাকি অর্ধেক মহিলা যার নামকরণ করা হয়েছে ‘jinendra morphism’ (জিনানড্রমরফিজম)। এদের দেহের উভয় ভাগেরই আলাদা লিঙ্গ রয়েছে। পরিলক্ষিত হয়েছে এই মৌমাছির ডানদিকে মহিলা বৈশিষ্ট্য এবং বামদিকে পুরুষ বৈশিষ্ট্য প্রকাশ পায়। এর আগে বিজ্ঞানীরা ১৯৯৯ সালে উভয় লিঙ্গের প্রজাতির আবিষ্কার করেন আর তার ঠিক ২০ বছর পরে আবার এর অস্তিত্ব পাওয়া গেছে।
বিজ্ঞানীরা ধারণা করেন যে অনিষিক্ত মৌমাছি ডিম থেকে স্ত্রী মৌমাছি তৈরি হয় আর যদি পুরুষ মৌমাছি দ্বারা নিষিক্ত হয় তাহলেই এই মিশ্রিত বৈশিষ্ট্যের প্রজাতির সৃষ্টি হয়।
সৈয়দ মহিউজ্জামান/ নিজস্ব প্রতিবেদক
+1
1
+1
5
+1
1
+1
+1
+1
+1