মানুষের ত্বক নরম, এবং প্রসারিত হতে পারে এমন একটি অঙ্গ এবং এর লক্ষ লক্ষ স্নায়ু প্রান্ত রয়েছে যা তাপ এবং স্পর্শ অনুভব করে। গত ৪০ বছর ধরে বিজ্ঞানীরা ত্বকের মতোই কাজ করতে পারে এমন একটি কৃত্রিম অঙ্গ নিয়ে গবেষণা করার পর ২০১৯ সালের দিকে সফলতার মুখ দেখতে শুরু করে এবং বিজ্ঞানীরা এই কৃত্রিম অঙ্গের নাম দেয় ই-স্কিন।
ই-স্কিন বা ইলেকট্রনিক স্কিন হলো এমন একটি কৃত্রিম অঙ্গ যা সম্পূর্ণ মানব ত্বকের মতো কাজ করতে পারে। এটি অত্যন্ত নমনীয় এবং অভিযোজিত পলিমার-ভিত্তিক ইলেকট্রনিক্স যা মানবদেহের বহুস্তর বিশিষ্ট ত্বকের কার্যাবলী অনুকরণ করতে পারে। এই কৃত্রিম ত্বক স্পর্শ অনুভব করে তাৎক্ষণিকভাবে সাড়া দিতে সক্ষম। এটি সম্পূর্ণ মানব-ত্বকের অনুকরণ করার পাশাপাশি আরো বহু কাজ করতে পারে যা মানুষের ত্বক সাধারণত করতে পারে না।
ইলেকট্রনিক স্কিনে বিভিন্ন ন্যানোটেকনোলজির ব্যবহার মানুষকে বিভিন্ন প্রকার চর্মরোগ থেকে রক্ষার পাশাপাশি স্কিন-ক্যান্সার প্রতিরোধ করতে পারে। এছাড়া এটির ন্যানোটেকনোলজি এতোটাই উন্নত যে এটি মানুষকে রোবটের মতো অনুভব করতে সহায়তা করতে পারে।
ওয়্যারলেস সিগন্যালের মাধ্যমে জায়গায় বসেই হাতের ইশারায় গেশ্চার টেকনোলজি দ্বারা বিভিন্ন ইলেকট্রনিক্সকে নিয়ন্ত্রণ করতে সক্ষম এই ই-স্কিন টেকনোলজি। এছাড়া এটি মেডিক্যাল টেকনোলজিতেও অনেক বড় পরিবর্তন নিয়ে আসছে। এটি দেহের অভ্যন্তরীণ কার্য সার্বক্ষণিক মনিটরিং করার পাশাপাশি বিভিন্ন ক্রিয়াকলাপ নিয়ন্ত্রণ করতে পারে।
এটির গঠন এতটাই সূক্ষ্ম এবং পরিষ্কার যে এটি দেহের রঙের সাথে মিলিয়ে যেতে পারে এবং এটির ওজনও তুলনামূলকভবে অনেক কম। বর্তমানে এটির পরীক্ষামূলক কার্যক্রম চলছে।
ই-স্কিন এর অবদান কী?
দেহের জৈবিক ও রাসায়নিক বিভিন্ন সংকেতের অধিগ্রহণ ক্ষমতা এটিকে টেলি-মেডিসিন এবং বুদ্ধিমান রোবোটিক্সের জন্য খুব উপযুক্ত করে তুলেছে। উদাহরণস্বরূপ, যখন ইলেকট্রনিক স্কিন দেহে মোতায়েন করা হয়, তখন মানুষ দ্বারা করতে হয় এমন কাজগুলো (বয়স্কদের যত্ন নেওয়া, ছোট বাচ্চাদের দৈহিক খেয়াল রাখা) অটোমেটিক এই ই-স্কিন করতে পারে।
আরেকটি উদাহরণ, মানবদেহে ই-স্কিন সংযুক্ত করে, দেহের গতিবিধির কোন পরিবর্তন না করেই বিভিন্ন স্বাস্থ্য-সম্পর্কিত সংকেত সংগ্রহ করা যেতে পারে, যাতে সক্রিয় এবং প্রাথমিক রোগ নির্ণয় করা যায়।
ই-স্কিন টেকনোলজি কীভাবে কাজ করে?
ই-স্কিন মানুষের ত্বকের গঠন অনুকরণ করার জন্য লো-মডুলাস, যেমন কার্বন ন্যানোটিউব, MXene এর মতো পরিবাহী উপাদান এবং পানি-ভিত্তিক পলিউরেথেন ব্যবহার করে ইলেক্ট্রোস্পন টিপিইউ ন্যানোফাইব্রাস ফিল্ম ব্যবহার করে একত্রিত করা হয়। পরিবাহী কার্বন ন্যানোটিউব এবং MXene TPU ইলেক্ট্রোস্পন ফাইবার ফিল্মে সংবেদনশীল স্তর হিসাবে সাজানো থাকে, যা মানুষের ত্বকের নিউরনের মতো কাজ করে। তারপর এর উপর যখন বাহ্যিক বল বা তাপ প্রয়োগ করা হয়, তখন বাহ্যিক যান্ত্রিক উদ্দীপনা প্রতিরোধের পরিবর্তনের মাধ্যমে ফিরে আসে। MXene এবং WPU ইলেক্ট্রোড স্তর হিসাবে ব্যবহার করা হয়, যা ভালো পরিবাহীতা প্রদান করে আর এর মাধ্যমে জৈব ইলেকট্রিক সংকেতগুলো সংক্রমণ হয়ে সাড়া প্রদান করে।
ই-স্কিন বর্তমানে বৈজ্ঞানিক প্রযুক্তির একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ, যা ইলেকট্রনিক ডিভাইস বা রোবোটিক সিস্টেমে ব্যবহৃত করার জন্য প্রস্তুত করা হচ্ছে। এটি বিশেষভাবে আইওটি (ইন্টারনেট অফ থিংস) এবং রোবোটিক্সে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে এবং নতুন সফল সম্ভাবনার দিকে মানবজাতিকে এগিয়ে নিয়ে যাবে। ই-স্কিন সহজেই দেহ থেকে উন্নত তথ্য অন্যান্য ডিজিটাল ডিভাইসে পাঠিয়ে মানুষের স্বাস্থ্যের দৈনিক গতিবিধি নিয়ন্ত্রণ করতে পারে তাই, ই-স্কিন একটি গুরুত্বপূর্ণ সংবেদনশীল প্রযুক্তি হিসেবে বিকাশ হওয়ার পাশাপাশি মানুষের উন্নতি সাধন এবং সংযোজন সৃষ্টি করে।
মো: শাহিনুল ইসলাম রাফি / নিজস্ব প্রতিবেদক
তথ্যসূত্র: অ্যাডভান্সড সায়েন্স নিউজ, সাইন্টিফিক আমেরিকান