সৌরজগৎসহ মহাবিশ্বের আবিষ্কৃত বিভিন্ন গ্রহগুলোতে আমরা অনেক রকম বৃষ্টির খবর শুনি, তাই না? কোথাও হীরার বৃষ্টি, কোথাও লোহার বৃষ্টি, কোথাও বা অ্যাসিড বৃষ্টি। চলুন আজকে জেনে নেয়া যাক, মঙ্গল গ্রহের ইলেকট্রনের বৃষ্টি সম্পর্কে।
সূর্যের সবচেয়ে কাছের মঙ্গল গ্রহে শক্তিশালী ইলেক্ট্রনের বৃষ্টি ও তা থেকে উৎপন্ন হওয়া অরোরার ব্যাপারে তথ্য দিয়েছে মঙ্গল গ্রহে কাজ করা স্যাটেলাইটযুগল ‘বেপিকলোম্বো’।
বেপিকলোম্বো মূলত ইউরোপিয়ান স্পেস এজেন্সি ও জাপান এরোস্পেস এসেন্জির নির্মিত দুটি স্যাটেলাইট যা ২০১৮ তে উৎক্ষেপণের পর ২০২১ এর শেষের দিকে কক্ষপথে পৌঁছায়৷ বর্তমানে স্যাটেলাইট দুটি মঙ্গল গ্রহের কক্ষপথে প্রদক্ষিণ করছে ও নিত্য নতুন তথ্য উপাত্ত সংগ্রহ করছে।
জাপান এরোস্পেস এক্সপ্লোরেশন এজেন্সি এর একজন পর্যবেক্ষক সাই অজওয়া বলেন,
“প্রথমবারের মতো আমরা দেখতে পেয়েছি কীভাবে শক্তিশালী ইলেক্ট্রন মঙ্গল গ্রহের চৌম্বক মন্ডল হতে এই গ্রহের ভূপৃষ্ঠে পতিত হয়। যদিও মঙ্গল গ্রহের চৌম্বক মন্ডল পৃথিবীর তুলনায় ছোট”।
বিজ্ঞানীরা জানতে পেরেছেন যে এই ইলেক্ট্রনের বৃষ্টির কারণে উজ্জ্বল অরোরা সৃষ্টি হচ্ছে মঙ্গল গ্রহের আকাশে। তার আগে চলুন অরোরা কি তা সংক্ষেপে জেনে আসি।
সৌর বাতাস যখন কোনো গ্রহের চৌম্বক ক্ষেত্রে প্রবেশ করে তখন বিভিন্ন রঙের, দৈর্ঘ্যের, আকারের উজ্জ্বল আলোর রেখা দেখা যায় আকাশে। এটাই হলো অরোরা।
পৃথিবীতে উত্তর ও দক্ষিণ মেরুতে দেখা মেলে অরোরার। ইলেক্ট্রনগুলো সজোরে যখন মঙ্গল গ্রহের ভূ-ত্বকে পতিত হয় তখন সেখানে থাকা বিভিন্ন পদার্থের সাথে মিলিত হয়ে এক্সরে বিচ্ছুরণ ঘটায়। এই এক্সরে থেকে সৃষ্ট উজ্জ্বল অরোরার নাম দেয়া হয়েছে X-Ray Aurora।
সাই অজওয়া বলেন,
“এই অরোরা তৈরির প্রক্রিয়া সৌরজগতের অন্যান্য গ্রহগুলোর মতোই”।
প্রথম প্রদক্ষিণের সময় বেপিকলোম্বের ১ টি স্যাটেলাইট মঙ্গল গ্রহের ভূ-পৃষ্ঠ হতে মাত্র ২০০ কিলোমিটার দিয়ে উড়ে। এসময় মঙ্গল গ্রহের অন্ধকার দিক থেকে শুরু করে এটি গ্রহের আলোক দিকে যায় এবং মঙ্গল গ্রহের চৌম্বক মণ্ডলের উপাদান ও বৈশিষ্ট্য সম্পর্কে তথ্য সংগ্রহ করে।
মঙ্গল গ্রহের চৌম্বক মন্ডল অতি উচ্চ চাপের কারণে সংকুচিত একটি অবস্থায় থাকে। ইলেক্ট্রনের বৃষ্টি হওয়ার মূল কারণ হলো মঙ্গল গ্রহের অন্ধকার দিকের চৌম্বক মণ্ডলের সৃষ্ট প্লাজমা প্রক্রিয়া। উচ্চ শক্তি সম্পন্ন ইলেক্ট্রনের বৃষ্টি যে প্রক্রিয়ায় মঙ্গল গ্রহের ভূ পৃষ্ঠে হতে এক্সরে নির্গত করে সে বিষয় যথেষ্ট তথ্য উপাত্ত এখনও পাওয়া যায়নি।
‘বেপিকলোম্বো’ মিশন থেকে মঙ্গল গ্রহ সম্পর্কে আরও উল্লেখযোগ্য তথ্য উপাত্ত পাওয়া যাবে যা পূর্ববর্তী ধারণাগুলোকে পাল্টে দেবে বলে আশাবাদী বিজ্ঞানীরা।
মুরসালিন রহমান / নিজস্ব প্রতিবেদক
তথ্যসূত্র: সাইন্সনিউজ, ফিজিক্স.অর্গ
+1
+1
+1
1
+1
+1
+1
+1