সিটারাম নদী (সুন্দাদিজ ওয়ালুনগান সিটারাম, পশ্চিম জাভা) ইন্দোনেশিয়ার পশ্চিম জাভায় অবস্থিত দীর্ঘতম ও বৃহত্তম নদী। “বেনগাওয়ান সলো” এবং “ব্রেন্টাস” এর পর এটিই জাভার তৃতীয় দীর্ঘতম নদী। এটি পশ্চিম জাভাবাসী অর্থাৎ প্রায় ২৫ মিলিয়ন মানুষের কৃষি, জল সরবরাহ, মাছ ধরা, শিল্প বর্জ্য নিষ্কাশন এবং বিদ্যুৎ উৎপাদন এ গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে।
সিটারাম নদীর তীরে দাঁড়ালে আপনি সর্বপ্রথমে যা বুঝতে পারবেন, তা হলো গন্ধ। দুর্গন্ধ ও গরমে বয়ে যাওয়া আবর্জনা রাসায়নিক বর্জ্যের একটি ধারা হয়ে বয়ে চলছে নদীটি। প্রতিদিন প্রায় ২০,০০০ টন আবর্জনা এবং ৩৪০,০০০ টন রাসায়নিক বর্জ্য জল নিষ্কাশিত হয় যার বেশিরভাগ প্রায় ২০০০ টেক্সটাইল কারখানা হতে সিটারাম নদীতে সরাসরি নিষ্কাশিত করা হয়।
২০১৩ সালে “Blacksmith Institute” পরিচালিত এক সংস্থার সমীক্ষায় দেখা গেছে এই সিটারামের পানির গুনাগুন মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের পানির তুলনায় ১০০০গুন খারাপ অবস্থায় পৌঁছেছে। ২০০২ সাল থেকে এই নদীতে সীসা, অ্যালুমিনিয়াম, ম্যাঙ্গানিজ ও আয়রন ইত্যাদি ভারী ধাতু নিষ্কাশিত হওয়ায় সিটারাম নদী পানির আদর্শ মাত্রা কখনোই অর্জন করতে পারেনি। নদী তীরে বসবাসরত জনগোষ্ঠীর বর্জ্য নিষ্পত্তির কোনওপ্রকার সুপরিকল্পিত ব্যবস্থাপনা না থাকায় তারা হয় এগুলো পুড়িয়ে নদীতে ফেলে অথবা নদীতে সরাসরি নিষ্কাশন করে থাকে।
নদী তীরে বসবাসরত এক উল্লেখযোগ্য ভুক্তভোগীর ভাষ্যমতেঃ
৪৭ বছরের আইম হালিমার ৩ সন্তান। তার স্বামী জাজাং সুহেরমান যক্ষ্ণায় মারা যান ৪ বছর আগে। অপরদিকে হালিমা নিজেও দীর্ঘস্থায়ী ব্রঙ্কাইটিস এ আক্রান্ত এবং এই দূষিত পানি ও অপুষ্টিজনিত কারণে তার অবস্থা দিনকে দিন আরও খারাপ হয়ে যাচ্ছে। চিকিৎসক তাকে উক্ত নদীর পানি ব্যবহার না করতে পরামর্শ দিলেও নিরুপায় হালিমা তাই ই ব্যবহার করতে হচ্ছে।
এছাড়াও দূষিত পানির কারণে অনেকে ডার্মাইটিস, ফুসকুড়ি ও অন্ত্রের সমস্যায় ভুগে। আরও বিশেষভাবে লক্ষণীয় শিশুর বিকাশে বিলম্ব, রেচনতন্ত্রে সমস্যা, দীর্ঘস্থায়ী ব্রঙ্কাইটিস ও টিউমার হওয়ার মত ঘটনা।
নোংরা হওয়া সত্ত্বেও, এই নদীতে এখনও অনেকে মাছ ধরতে আসেন। দূষিত পানিতে হওয়া বিভিন্ন মাছ এই অঞ্চলের মানুষ নিয়মিতই খেয়ে অভ্যস্ত। বছরের পর বছর ধরে বিভিন্ন সময়ে সরকার সিটারাম পরিষ্কারের প্রতিশ্রুতি দিলেও প্রয়োজনীয় প্রচেষ্টার ঘাটতি তাদের এই উদ্যোগ ব্যর্থ করেছে বারংবার।
তবে গ্রীনপিসের মত আন্তর্জাতিক সংস্থাগুলির চাপে পড়ে ফেব্রুয়ারি মাসে ইন্দোনেশিয়ার রাষ্ট্রপতি Joko Jokowi Widodo সিটারাম নদীর পানিকে পানীয়যোগ্য করে তোলার লক্ষ্যে সাত বছরের পরিষ্কারকরণ কর্মসূচী ঘোষণা করে যা “International Monetary Development Bank” (IMDB) দ্বারা সমর্থিত। এছাড়াও “Asian Development Bank” (ADB) ২০০৯ সালে এই সিটারাম পুনর্বাসনে “৫০০ মিলিয়ন ডলার” প্রদানে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ ছিলো।
পরবর্তীতে পরিষ্কারের ঘোষণা করা হয়, তবে স্থানীয় নেতাকর্মীদের মতে, নিষেধাজ্ঞার পরেও অনেক কারখানার গোপন পাইপের মাধ্যমে বর্জ্য নিষ্কাশন অব্যাহত রয়েছে। এমনকি যদি তা চিহ্নিত করে বন্ধের আবেদনও করা হয়, তবে সঠিক লোককে ঘুষ দিয়ে তারা সেই প্রক্রিয়া আবার বন্ধ করে দিতে বাধ্য করে।
“World Bank” (WB) ওর তথ্যমতে, ভবিষ্যৎ পরিকল্পনার ভিত্তিতে সিটারামের পানি পরিশোধন ও বিস্তৃত শিল্প বর্জ্যসমূহের সঠিক ব্যাবস্থাপনা নিশ্চিত করা ইন্দোনেশিয়ার জন্য বেশ বড় একটি চ্যালেঞ্জ, কিন্তু তারা তা বাস্তবায়ন করতে পারলে দূষণ রোধে তা হবে এক চমৎকার মাইলফলক।
তন্ময় ইসলাম তানভীর/ নিজস্ব প্রতিবেদক
তথ্যসূত্র: দ্য গার্ডিয়ান, দ্য ডিপ্লোম্যাট