যা ওপরে যায় তাকে আবার নিচে ফিরে আসতে হয়- দুঃখজনকভাবে আন্তর্জাতিক মহাকাশ কেন্দ্র (ISS) বা ইন্টারন্যাশনাল স্পেস স্টেশন-ও এর অন্তর্ভুক্ত।
২০ বছর ধরে এই ঘূর্ণায়মান এই ল্যাব অল্পসংখ্যক কিছু মানুষের আবাসস্থল। কিন্তু আমাদের অন্য সবার মতই এই ল্যাবের বয়স বেড়ে চলেছে। এটি অনির্দিষ্টভাবে কক্ষপথে ঘুরতে পারেনা, একে চালনা করার জন্য প্রয়োজন হয় জ্বালানির এবং তা পৃথিবী থেকে সরবরাহ করা হয়ে থাকে কার্গো স্পেসক্রাফটের মাধ্যমে।
এই স্পেসক্রাফটের একটি নির্দিষ্ট ধরনের প্রোপেলেন্ট আছে, এবং স্পেসক্রাফট গুলো থেকে কোনো ভাবে এই রি-বুস্টিং বন্ধ হয়ে গেলে একটা না একটা সময় বন্ধ হয়ে যাবে এই ল্যাব। যদিও প্রথমে জানা গিয়েছিলো ২০২৪ সাল পর্যন্ত এ ধরনের ফ্লাইট চালু থাকবে। ISS যেহেতু যুক্তরাষ্ট্র, রাশিয়া, জাপান ও ইউরোপিয়ান স্পেস এজেন্সির কিছু দেশের সম্মিলিত প্রয়াস তাই এই ফ্লাইট এর ব্যাপারে পরবর্তী সিদ্ধান্ত নেয়ার দায়িত্ব তাদের হাতে, যা ইঞ্জিনিয়ারিং এবং রাজনৈতিক বিষয়াবলির ওপর নির্ভর করছে।
“যদিও ২০২৪ সালের ডিসেম্বর পর্যন্ত সময় রয়েছে তবুও ২০২৮ সাল অবধি ISS চালনা করার ব্যাপারে আমরা ব্যবস্থা নিয়েছি। এরপরেও চালিয়ে নিতে আমাদের এখনো কোনো অসুবিধা নেই।” – নাসার এক বিবৃতিতে এ কথা জানানো হয়।
কিন্তু এরপর? ISS এর বয়স বাড়ছে এবং মহাকাশের আবর্জনা ও ক্ষুদ্র উল্কাপিন্ড সমূহ থেকে সৃষ্ট ঝুঁকিও বেড়ে চলেছে। মানুষ ISS এর কার্যক্রম বন্ধ না করে দিলেও এসব বিপদ একদিন তা বন্ধ করে দেবে।
ISS এর শেষ ভাগ্য নাসা ও রসকসমস (Roscosmos)(রাশিয়ার ফেডারেল স্পেস এজেন্সি) এর জন্য সবসময়ই এক আতঙ্কের কারণ ছিল। এক্ষেত্রে আওয়াজ তোলে নাসার এরোস্পেস সেফটি এডভাইজরি প্যানেল। তারা এক দশক ধরে এ বিষয়ে তাদের দুশ্চিন্তার কথা জানিয়ে আসছে।
নাসা ISS এর সকল অংশীদারদের সঙ্গে মিলে কিভাবে ISS এর জীবনকাল শেষে একে নিরাপদভাবে ডিঅরবিট(কক্ষপথ থেকে বের করা) করা যায় তা নিয়ে কাজ করছে।
নাসা এবং রসকসমসের একটি প্রকৌশলীর দল ২০১৭ সালের আন্তর্জাতিক এস্ট্রোনটিক্যাল কংগ্রেসে ডিঅরবিট প্রক্রিয়ার ওপর একটি গবেষণাপত্র প্রকাশ করেছে। এতে ডিঅরবিট প্রক্রিয়া এবং ISS এর ওপর কোনো বিপর্যয় এলে কি ব্যবস্থা নেয়া যায় উভয় বিষয়ে নিজেদের বিকল্প পরিকল্পনা তুলে ধরেছে।
টেক্সাস ভিত্তিক এক্সিওম স্পেস কোম্পানি নতুন স্টেশন মডিউল স্থাপন করার পরিকল্পনা করছে। তাদের পরিকল্পনা অনুসারে প্রতিটি মডিউল নিজেকে নিয়ন্ত্রণ করতে পারবে এবং নিজেরাই উড়ে চলতে পারবে। এবং যখন প্রয়োজন হবে নিজেকে আলাদা করে পৃথিবীতে ফিরে আসতে পারবে।
এখন দেখার বিষয়, কি সিদ্ধান্ত আসে। এই স্পেস স্টেশনটি মহাকাশে স্থাপন করতে লঞ্চ করা হয়েছিলো ৪২ বার, এখন তার কার্যক্রম শেষের পর তা নামিয়ে আনার জন্য কি করা হয় তা নিয়েই ভাবছেন গবেষকরা। তারা চাইছেন না স্কাইল্যাবের কক্ষচ্যুত হয়ে পৃথিবীতে আছড়ে পরার মত দ্বিতীয় কোনো ঘটনা ঘটুক।
নুসরাত জাহান ফাইজাহ/ নিজস্ব প্রতিবেদক
+1
3
+1
+1
+1
2
+1
+1
+1
1