সমুদ্রের গভীর কিংবা পাহাড়ের চূড়া, যদি পৃথিবীর কোন মানুষ হয় তবে এর প্রতি আগ্রহ থাকবেই। তবে পাহাড় চূড়ার থেকে অতল সমুদ্রের গভীর যেনো বেশি রহস্যময়। এই অন্ধকার জায়গায় ঘুরে বেড়ায় সংখ্যায় খুবই নগন্য তবে বৈশিষ্ট্যের দিক থেকে খুব আশ্চর্য্যজনক সব মাছ। এদের বেশির ভাগ নিজের শরীর থেকে রাসায়নিক বিক্রিয়ার ফলে সৃষ্ট আলো দিয়ে শিকার করে, যা প্রধানত বায়োলুমিনেন্স নামে পরিচিত। তবে সম্প্রতি বিজ্ঞানীরা পর্যবেক্ষণ করেছেন এমন এক মাছের প্রজাতি যা উলটো পথে বিবর্তিত হয়েছে। অর্থাৎ এদের গায়ের রঙ আলট্রা ব্ল্যাক এবং সামান্যতম আলোও এরা শোষণ করে নিতে সক্ষম।
Smithsonian museum of Natural History এর ক্যারেন অসবর্নকে একটা বিষয় বেশ চিন্তিত করছিল। তিনি তার ফিল্ড ওয়ার্কের সময় কিছুতেই কিছু মাছ এর ছবি তুলতে পারছিলেন না। তিনি আসলে দলের গভীর সমুদ্র অনুসন্ধান জালে ধরা পড়া মাছগুলো নিয়ে কাজ করছিলেন। তিনি বলেন, “Anoplogaster cornuta এবং Idiacanthus antrostomus এই দুইটি হল এমন প্রজাতির মাছ, আমার ছয় বছরের ফিল্ড ওয়ার্ক জীবনে আমি যাদের ভাল ছবি তুলতে ব্যর্থ হয়েছি”।
এই অসম্ভব কাজ কে সম্ভব করতে রীতিমত মাথার ঘাম ফেললেন তিনি। আসলে ফটোগ্রাফি, আলো সম্পর্কিত কিছু বেসিক সাইন্সের উপর ভিত্তি করে প্রতিষ্ঠিত। কোন বস্তু থেকে আলো প্রতিফলিত হয়ে আসে বলেই আমরা সেটা দেখতে পাই। কিন্তু যদি আলো প্রতিফলিতই না হয়, সবটুকু যদি শোষণ হয়ে যায় তাহলে আমরা সেই বস্তুকে কালো দেখি।
যাই হোক, তিনি তার Canon mark II DSLR ক্যামেরাতে চারটা Strobe (বিশেষ একধরণের ফটোগ্রাফি লাইট) সহ 65mm এর একটি ম্যাক্রোলেন্স সংযুক্ত করেন। তারপর মাছটিকে ফোকাসে রেখে ভিন্ন ভিন্ন লাইটিং সেটাপে প্রচুর ছবি তুলেন। সেই ছবিগুলিকে পরে নিয়ে যাওয়া হয় একগাদা contrast settieng এবং filter এর ভেতর দিয়ে, যাতে ছবিটির ডিটেইলটা বের হয়ে আসে। হতাশার কথা এই যে, এত এত কিছুর পরও শেষ রক্ষা হয়নি।
ক্যারেন বলেন, ”আমার কাজের বেশির ভাগ সময় যেতো হাজার হাজার অকেজো ছবি ডিলিট করে, কারন আমি কিছুতেই মাছের ছবি তুলতে পারছিলাম না। ব্যাপারটা হল, যেমন ভাবেই বা যেমন উজ্জলতার লাইটিং সেটাপ করা হোক না কেন…মাছটার প্রজাতি সব আলো শোষণ করে নেয়। আমার কাছে দেখানোর মত খুব অল্প ছবিই আছে”।
ব্যাপারটা তলিয়ে দেখার জন্য ক্যারেন অসবর্ন দেখা করেন বিজ্ঞানী জনসন এর সাথে যিনি ডিউক ইউনিভার্সিটিতে বায়োলজিস্ট হিসেবে কর্মরত আছেন। তারা বিভিন্ন পরীক্ষা করে দেখেন যে, এই আলো শোষণকারী মাছটি আসলেই এর উপর আপতিত আলোর ৯৯.৫ ভাগ শোষন করে নিতে সক্ষম। এর পেছনে দায়ী এমন একটা বস্তু যা আমাদের চামড়া ট্যান এর জন্য দায়ী, মেলানিন। এই মেলানিন প্রাণির শরীরে দানা হিসেবে থাকে, যাকে মেলানোসোম বলে। এই মেলানোসোমগুলো আবার একটা কোষ ধারন করে তাকে মেলানোফোর বলা হয় এবং সবচেয়ে বড় কথা, এই কোষগুলো এই মাছের ক্ষেত্রে স্তর এর পর স্তর হিসেবে থাকে যার ঘনত্ব ডার্মিসে বেশি। (ডার্মিসঃ ত্বকের গভীর এবং সর্বনিম্ন স্তর)
ক্যারেন অসবর্ন বলেন, “এই আলো শোষণকারী মাছের ক্ষেত্রে স্তরগুলি এমনভাবে সাজানো যাতে প্রথম আলোর কণাটা এর ত্বকের সংস্পর্শে এসে ভালোভাবে শোষিত হতে পারে। মেলানিন পিগমেন্টগুলো খুব কার্যকর ভাবে আলো শোষন করতে পারে এভাবে”।
পিগমেন্ট ধারন করা দানাগুলোর সাইজ একটা ব্যাপার, কারন আলোর বিচ্ছুরণ প্রবণতা আছে। তবে এই মাছের ক্ষেত্রে সেটা হয়না কারণ আলো বিচ্ছুরিত হয়ে পাশের কোষের কোন এক মেলানিন দ্বারা শোষিত হয়। ফলে প্রজাতির গায়ের রঙ হয় একেবারে ভ্যান্টাব্ল্যাক এর মত।
এই আবিষ্কার ভবিষ্যতে টেলিস্কোপ এবং ক্যামেরার উন্নয়নে কাজে লাগবে বলে আশা করা যাচ্ছে।
ঋভু/ নিজস্ব প্রতিবেদক