আম খাচ্ছেন, মুখের বলিরেখা কমে যাচ্ছে! ঘটনা দেখে খুশি হয়ে গেলেন, আরো বেশি করে আম খাওয়া শুরু করলেন! কিন্তু, এ কি! বলিরেখা উল্টো বৃদ্ধি পাচ্ছে!
ব্যাপারটা কি বলুন তো!
গবেষণায় দেখা গিয়েছে, যে সকল মহিলারা সপ্তাহে চারবার আধা কাপ মধু আম (Honey Mango) খেয়ে থাকেন তাদের ক্ষেত্রে মুখের বলিরেখা হ্রাস পেয়েছে।
গবেষণায় যে সকল ফলাফল পাওয়া গিয়েছে তা হলো-
- যে সকল মহিলারা সপ্তাহে চারবার আধা কাপ করে আম খেয়েছিলেন তারা দুই মাস পরে লক্ষ্য করেন যে তাদের বলিরেখা অনেক খানি কমে গিয়েছে।
- যে সকল মহিলারা একই সময়ে অর্থাৎ প্রতি সপ্তাহে এক কাপ কিংবা এর বেশি পরিমাণে আম খেয়েছেন তাদের ক্ষেত্রে উল্টো ঘটনা ঘটেছে, অর্থাৎ বলিরেখা বৃদ্ধি পেয়েছে।
- যারা অল্প পরিমানে আম খেয়েছেন তাদের ক্ষেত্রে আরোও গভীর ও নতুন বলিরেখার সৃষ্টি হতে দেখা গিয়েছে।
গবেষকরা এর কারণ হিসেবে ধারণা করছেন, একটি নির্দিষ্ট পরিমাণে অল্প করে নিয়মিত খাওয়া ত্বকের জন্যে ভালো, কিন্তু বেশি পরিমাণে খেলে তা উল্টো ফলাফল দেখায়, পুরো ব্যাপারটি তখন অতিরিক্ত পরিমাণ আমে থাকা অতিরিক্ত পরিমাণ চিনির সাথে সম্পর্কিত হয়ে যায়।
অন্যান্য শাকসবজি ও কমলা জাতীয় ফলের মত আমও বিটা ক্যারোটিন ও এন্টি অক্সিডেন্ট সমৃদ্ধ, যা আমাদের কোষকে ক্ষতিগ্রস্ত হতে বাধা দেয়। ক্যালিফোর্নিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষকদের এক নতুন গবেষণায় দেখা গিয়েছে ‘আতাউল্ফো আম’ (Ataulfo Mango) যা Honey Mango বা Champagne Mango নামেও পরিচিত, বয়স্ক নারীদের মুখের বলিরেখা দূর করতে সক্ষম। গবেষণাটি নিউট্রিয়েন্টস (Nutrients) জার্নালে প্রকাশিত হয়েছে।
পোস্টমেনোপোজাল অবস্থায় থাকা নারীদের নিয়ে গবেষণাটি করা হয়। (পোস্টমেনোপোজাল অবস্থায় থাকা নারীরা আর সন্তান জন্ম দিতে পারেন না এবং তাদের পিরিয়ড হওয়াও বন্ধ হয়ে যায়।)
পোস্টমেনোপোজাল (Postmenopausal) অবস্থায় আছেন এমন মহিলাদের মধ্যে যারা টানা দুই মাস, সপ্তাহে চারদিন করে এই আম খেয়েছিলেন তাদের বলিরেখা ২৩ শতাংশ পর্যন্ত হ্রাস পেতে দেখা গিয়েছে। চার মাস পর এই হার ২০ শতাংশে নেমে আসে।
ইউনিভার্সিটি অফ ক্যালিফোর্নিয়া, ডেভিস এর নিউট্রিশন বিভাগের ডক্টরাল শিক্ষার্থী, ভিভিয়ান ফ্যাম বলেছেন, “এটি বলিরেখা হ্রাসের ক্ষেত্রে উল্লেখযোগ্য উন্নতি।”
গবেষণাটিতে একটি নির্দিষ্ট ধরনের ত্বক রয়েছে (ফিৎজপ্যাট্রিক ২ এবং ৩– এধরণের ত্বক ট্যানের চেয়ে আরও সহজে পুড়ে) এমন ২৮ জন পোস্টমেনোপোজাল মহিলাদের পর্যবেক্ষণ করা হয়।
মহিলাদের দুটি গ্রুপে ভাগ করা হয়: একটি দল চার মাস ধরে সপ্তাহে চারদিন আধা কাপ করে আম খাচ্ছিল এবং অন্য দল একই সময়ের জন্য দেড় কাপ আম খাচ্ছিল।
গবেষণাটিতে উচ্চ রেজুলেশন সমৃদ্ধ ক্যামেরা সিস্টেম ব্যবহার করে মুখের বলিরেখাগুলো পর্যবেক্ষণ করা হয়।
পুষ্টি বিভাগের অধ্যাপক এবং গবেষণা পত্রটির একজন লেখক রবার্ট হ্যাকম্যান বলেছেন, “আমরা যে পদ্ধতিতে বলিরেখা পর্যবেক্ষণ করতাম সেগুলি কেবল বলিরেখাগুলো কল্পনা করতেই নয় বরং বলিরেখা গুলোর পরিমাণ নির্ধারণ এবং পরিমাপ করতে সক্ষম। এটি অত্যন্ত নির্ভুল এবং আমরা খালি চোখে যা দেখি তার চেয়েও অনেক সূক্ষ্মতম বিষয়তুলে ধরতে সক্ষম।“
সমীক্ষাটিতে বলিরেখার তীব্রতা, দৈর্ঘ্য, সূক্ষ্মতা এবং গভীরতা ও নতুন সৃষ্ট বলিরেখাগুলোর প্রস্থের দিকে নজর দেয়া হয়েছিল। ফ্যাম জানিয়েছেন – যে দলটি আধা কাপ করে আম গ্রহণ করেছেন তাদের এই সব কয়টি বিষয়ে উন্নতি লক্ষ্য করা গিয়েছে।
ফ্যাম যুক্ত করেন, এটি ক্যারোটিনয়েডস (কমলা বা লাল রঙের রঞ্জক) এবং অন্যান্য ফাইটোনিউট্রিয়েন্ট গুলোর উপকারী প্রভাবের কারণে হতে পারে যা কোলাজেন তৈরিতে সহায়তা করে। তিনি বলেন, বলিরেখা হ্রাস পাওয়ার পেছনের কারণগুলো জানতে আরও গবেষণার প্রয়োজন। দেখা যাক গবেষণায় আরো কি কি চমকপ্রদ বিষয় উঠে আসে!
সাইন্স বী নিউজরুম
তথ্যসূত্রঃ mdpi.com, সাইটেক ডেইলি
+1
2
+1
+1
+1
1
+1
3
+1
1
+1