আপেল খেতে কে না ভালোবাসে? অন্যতম সুস্বাদু আর স্বাস্থ্যকর ফলের মধ্যে আপেল একটি। এমনকি আপেল নিয়ে ইংরেজিতে একটি প্রচলিত প্রবাদ ও আছেঃ An apple a day, keeps the doctor away; যার অর্থ দাঁড়ায়ঃ প্রতিদিন একটি করে আপেল একজন মানুষকে এতটা সুস্থ রাখে যে, তার ডাক্তারের কাছে যাাওয়ার প্রয়োজন হয়না। কিন্তু আশ্চর্যের বিষয় হলো, এই একই পুষ্টিকর ফলও হতে পারে বিষাক্ত এবং প্রাণনাশক।
হ্যাঁ, আপনি ঠিকই শুনেছেন। আপেল বীজ বিষক্রিয়া এবং মৃত্যু ঘটাতে সক্ষম। আপেলের বীজে অ্যামিগডালিন (Amygdalin) থাকে, এটি এমন একটি উপাদান, যা মানুষের পাচক এনজাইমের সংস্পর্শে এলে রক্তে সায়ানাইড নিঃসরণ করে। অ্যামিগডালিনে সায়ানাইড এবং চিনি থাকে যা খাওয়ার পর পাকস্থলীতে হাইড্রোজেন সায়ানাইডে (HCN) রূপান্তরিত হয়। এই সায়ানাইড আপনাকে অসুস্থ করতে পারে এবং এমনকি আপনার মৃত্যুর কারণও হতে পারে। তবে আপনি যদি দুর্ঘটনাক্রমে কিছু বীজ খেয়ে নিন, সেক্ষেত্রে তীব্র বিষাক্ততা হওয়ার ঘটনা বিরল।
সায়ানাইড কীভাবে কাজ করে?
সায়ানাইড হল একটি রাসায়নিক যা প্রাণঘাতী বিষ হিসাবে পরিচিত। এটি রাসায়নিক যুদ্ধ এবং গণহত্যার ক্ষেত্রে ব্যবহৃত হয়। অক্সিজেন সরবরাহে বাঁধা দেওয়াই সায়ানাইডের কাজ। অনেকগুলি যৌগে সায়ানাইড থাকে- যাকে সায়ানোগ্লাইকোসাইডস (
আপেলের বীজ এবং অন্যান্য অনেক ফলের (যেমনঃ এপ্রিকটস, চেরি, বরই, পীচ) বীজের শক্ত বাইরের স্তর পাচক রস প্রতিরোধী। কিন্তু আপনি যদি বীজ চিবান, অ্যামিগডালিন শরীরে মুক্ত হতে পারে এবং সায়ানাইড তৈরি করতে পারে। আপনার দেহে এনজাইম দ্বারা অল্প পরিমাণে সায়ানাইড ডিটক্সিফাই করা যেতে পারে। তবে আপনি যদি বিপুল পরিমাণে বীজ চিবিয়ে খেয়ে থাকেন, তাহলে তা বিপদজনক হতে পারে।
কী পরিমাণ সায়ানাইড মারাত্মক?
রোগ নিয়ন্ত্রণ ও প্রতিরোধ কেন্দ্রসমূহ(CDC) অনুযায়ী ১-২ মিলিগ্রাম/ কেজি সায়ানাইডের একটি ওরাল ডোজ ১৫৪ পাউন্ডের (৭০ কেজি) মানুষের জন্য মারাত্মক হয়ে যেতে পারে। বেশিরভাগ আপেলের কোরগুলিতে প্রায় ৫ টি আপেল বীজ থাকে। তবে এই পরিমাণটি উদ্ভিদের স্বাস্থ্যের ভিত্তিতে পরিবর্তিত হতে পারে। একটি মারাত্মক ডোজ পাওয়ার জন্য আপনাকে প্রায় ২০০ টি আপেল বীজ বা প্রায় ৪০ টি আপেল কোর চিবিয়ে খেতে হবে। ১ গ্রাম সূক্ষ্ম চিবানো আপেল বীজে ০.০৬-০.২৪ মিলিগ্রাম সায়ানাইড থাকে।
সায়ানাইড কেন প্রাণঘাতী?
সায়ানাইড আপনার হার্ট এবং মস্তিষ্কের ক্ষতি করতে পারে। এমনকি বিরল ক্ষেত্রে কোমা ও মৃত্যুর কারণ হতে পারে। প্রকৃতপক্ষে, যদি প্রচুর পরিমাণে খাওয়া হয় তবে লক্ষণগুলি তাৎক্ষণিকভাবে ঘটতে পারে, খিঁচুনি, শ্বাসকষ্ট, কাঁপুন, ঝাঁকুনি, হৃদস্পন্দন বৃদ্ধি, শ্বাস প্রশ্বাসের জটিলতা, নিম্ন রক্তচাপ ইত্যাদি।এই সমস্ত কিছুই চেতনা হারানোর জন্য দায়ী। বিষক্রিয়া থেকে বেঁচে যাওয়া ব্যক্তিদের মধ্যেও হার্ট এবং মস্তিষ্কের ক্ষতির প্রমাণ দেখা যায়।
এছাড়াও, কম পরিমাণে সায়ানাইড গ্রহণ করা হলেও বমি বমি ভাব, মাথাব্যথা, পেটের সমস্যা, মাথা ব্যথা, বিভ্রান্তি এবং দুর্বলতার মত সমস্যা হতে পারে।
আপেল বীজের তেলে কী সমস্যা হবে?
আপেল বীজ তেল জুস প্রক্রিয়াকরণের একটি উপজাত। এটি কাঁচা আপেলের পোমাস থেকে তৈরি। আপেল বীজের তেলে অ্যামিগডালিনের পরিমাণ সাধারণত খুব কমই পাওয়া যায়।
কিছু গবেষণায় দেখা যায় যে, এটি অ্যান্টিঅক্সিডেন্টেরও একটি ভাল উৎস এবং এন্টিক্যান্সার এজেন্ট হিসাবে কিছুটা কার্যকর। অন্য একটি গবেষণায় দেখা গেছে যে আপেল বীজের তেল ব্যাকটেরিয়া এবং ঈস্টের বিরুদ্ধেও সক্রিয়।
গোটা আপেল বীজ গিলে ফেললে কোন সমস্যা হওয়ার সম্ভাবনা নেই, কারণ পাচক রস বীজের বাইরের স্তরকে ক্ষতি করতে পারে না।
তবে আপেল খাওয়ার আগে বীজগুলি সরিয়ে ফেলা ভাল। তবুও, আপনি যদি দুর্ঘটনাক্রমে কয়েকটি বীজ চিবিয়ে নিন, তবে চিন্তা করবেন না, যেহেতু ক্ষুদ্র পরিমাণে আপেলের বীজে ক্ষতির কারণ হবার মতো পর্যাপ্ত সায়ানাইড থাকে না। তবে কোনও সম্ভাব্য সমস্যা এড়াতে আপনার তাৎক্ষণিকভাবে বীজের চিবানো অংশ থুতুর মাধ্যমে ফেলে দেওয়া উচিত।
তানজিনা সুলতানা শাহীন/ নিজস্ব প্রতিবেদক
তথ্যসূত্রঃ হেলথ লাইন , ই টাইমস