আণুবীক্ষণিক জীব অনেক ধরনের হয়ে থাকে, এদের দ্বারা আমরা সাধারণত অণুজীব বা ছত্রাক বুঝে থাকি। ছত্রাক একটি গুরুত্বপূর্ণ আণুবীক্ষণিক জীব। এটির যেমন উপকারী ভূমিকা আছে (খাবার তৈরীতে) তেমনি অপকারী ভূমিকাও আছে বেশ। ছত্রাকের কারণে নানা রোগ হতে দেখা গেলেও, ছত্রাক তার চেয়েও বড় কোনো প্রাণির মস্তিষ্ক বা আচার আচরণ নিয়ন্ত্রণ করছে, এই বিষয়টি অবশ্যই চমকপ্রদ।
কী এই ছত্রাক?
Entomophthora muscae নামক এই ছত্রাক তাদের চেয়েও অনেক বড় আকৃতির প্রাণি, মাছিকে আক্রমণ করে এবং তাদের মস্তিষ্ক কে কন্ট্রোল করে, তারপর তাদের খাবার হিসেবে গ্রহণ করে। এর আগ পর্যন্ত চলতে থাকে মাছি বা পোকাটিকে হিপনোটাইজ করে বিভিন্ন কাজের সম্পাদন।
- প্রথমে মেয়ে মাছিদের আচরণ কন্ট্রোল করে তাদেরকে উঁচু গাছ বা আঁকাবাকা দেয়ালে চড়তে বাধ্য করে; ফলে মাছিগুলোর ডানা ওখানে আটকে ও ছিঁড়ে যায়, এভাবেই তাদের মৃত্যু হয়।
- ছত্রাক গুলো মেয়ে মাছিদের শরীরে প্রবেশ করে ওখানে রেণু তৈরী করে; এবং মাছির গৃহীত খাদ্য উপাদান শোষণের মাধ্যমে হিমোসিউল ও রক্তের ভিতর বড় হতে শুরু করে।
ফলে ৫-৮ দিনে মাছিটির মৃত্যু হয়; এবং মৃত্যুর ২ ঘন্টা পর স্পোরগুলো বের হতে শুরু করে।
কিন্তু মেয়ে মাছিদের ক্ষেত্রে ছত্রাকের কার্যক্রম এখানেই থেমে থাকে না; ছত্রাকগুলোর রেণু বা স্পোর সৃষ্টি করে যা ঐ মৃত মেয়ে মাছির দেহ থেকে বের হয়ে আসে। পাশাপাশি ছত্রাক গুলো এমন এক রাসায়নিক পদার্থের সৃষ্টি করে যা মেয়ে মাছি কর্তৃক সঙ্গী নির্বাচনের সময় নিঃসৃত হতো।
সাধারণত দেখা যায়, একটি পুরুষ মাছি কোনো মৃত মেয়ে মাছির সঙ্গ পছন্দ করে না; কিন্তু এই বিশেষ প্রজাতির ছত্রাকের আক্রমণে পুরুষ মাছির মস্তিষ্কে প্রভাব পরে। অতএব তাদের আচার আচরণেও ভিন্নতা দেখা যায়।
রাসায়নিক পদার্থের গন্ধে পুরুষ মাছিরা মৃত মেয়ে মাছিটার প্রতি আকর্ষণ অনুভব করে। একইভাবে পুরুষ মাছিগুলোও ঐ ছত্রাক এর আক্রমণের শিকার হয়। তারপর ছত্রাকের সংক্রমণ টা ছড়াতে শুরু করে অন্যান্য মাছিদের মধ্যেও।
কোপেনহেগেন বিশ্ববিদ্যালয়ের একদল মাইক্রোবায়োলজি গবেষকদের মতে, সুস্থ পুরুষ মাছিরা কখনোই মৃত মেয়ে মাছির প্রতি আকর্ষণ অনুভব করে না। তাদের গবেষণা থেকে উঠে এসেছে যে, মৃত মেয়ে মাছি থেকে নিঃসৃত গন্ধের জন্য “ইথাইল অকটোনেট, সেসকুইটারপেন” এর মতো রাসায়নিক পদার্থ দায়ী।মৃতদেহ গুলো মৃত্যুর পর ২৫-৩০ ঘন্টা পর্যন্ত অন্যান্য পুরুষ মাছিকে আকর্ষণের ক্ষমতা রাখে; কারণ তখন ছত্রাক এর স্পোর উৎপাদন উচ্চ পরিমাণে থাকে।