একদিন হঠাৎ করেই খেয়াল করলাম, আমার মাড়ির পৃষ্ঠের নিচে শক্তভাবে আটকে আছে বাড়তি কিছু দাঁত! প্রথম দিকে এগুলো কোন ব্যথা দিচ্ছিলো না বা বিরক্তও করছিল না, তবে পরবর্তীতে এগুলো বিশাল আকার ধারণ করে যা অত্যন্ত অস্বস্তিকর ছিল! সময় সুযোগ বুঝে চলে গেলাম ডেন্টাল সার্জনের কাছে এবং অপারেশন থিয়েটারের বেড এ শুয়ে শুয়ে ভাবতে থাকলাম এ আক্কেল দাঁত গুলো কোথা থেকে আসে?
দাঁত সারিবদ্ধভাবে একটির পর একটি নিয়ম মেনে মাড়ির সঙ্গে সংযুক্ত থাকে। তীক্ষ্ণ দাঁত খাবারকে ছিড়ে ছোট টুকরো করে ফেলতে পারে এবং ফ্ল্যাটার দাঁতগুলো খাবারকে পিষতে সাহায্য করে। শৈশব থেকে শুরু করে কৈশোর পর্যন্ত মানুষের দেহে দাঁতের প্রথম সেট তৈরি হয়, যা পরবর্তিতে হারিয়ে যায়। কিন্ত কিছুদিন পরই আস্তে আস্তে সম্পূর্ণ নতুন সেট দেখা যায়। যৌবনের শুরুতে, দাঁতের চূড়ান্ত সেট বেরিয়ে আসে।
সে চূড়ান্ত সেটগুলো থেকে বাড়তি যদি আরো কিছু অবশিষ্ট থাকে, সেগুলোকে ‘আক্কেল দাঁত’ বলা হয়। প্রচলিত ধারণা অনুযায়ী অনেকেই মনে করেন এই দাঁতগুলি আসে তখনি, যখন আপনি সম্ভবত “বুদ্ধিমান” হন। আক্কেল দাঁত হলো এক ধরনের ফ্ল্যাটার দাঁত, যাকে মোলার বলে। একজন ব্যক্তির যে সমস্ত দাঁত থাকবে তা তার জন্মের সময় এবং মাথার খুলির কাঠামোর উপরে নির্ভর করবে। প্রথমের দিকে, ২০ টি শিশু-দাঁত পড়ে যায়। তারপরে ৩২টি স্থায়ী দাঁত গজায়। মোলারের প্রথম সেটটি সাধারণত ৬ বছর বয়সে দৃশ্যমান হয়, দ্বিতীয় সেটটি ১২ বছর বয়সে এবং চূড়ান্ত সেটটি (আক্কেল দাঁত) ২১ বছর বয়সের আগে দেখা যায়। সাধারণত ১৭ থেকে ২১ বছর বয়সের মধ্যে কোনো এক সময়, বেশিরভাগ প্রাপ্তবয়স্করা তাদের তৃতীয় সেট অর্জন করে। এই তৃতীয় সেট মোলারই আক্কেল দাঁত হিসেবে পরিচিত। প্রাপ্তবয়স্করা উপরে-নিচে ৩ সেট মোলার দাঁত মুখের উভয় পাশে পেয়ে থাকে।
নৃবিজ্ঞানীরা ধারণা করেন আমাদের পূর্বপুরুষেরা বেশ রুক্ষ ও শক্ত খাবার চিবিয়ে খেতো (পাতা, শিকড়, বাদাম এবং মাংস)। যার ফলে তাদের অধিক শক্তি এবং বাড়তি কিছু দাঁতের প্রয়োজন ছিল। সেগুলোই হলো আক্কেল দাঁত বা উইজডম টিথ। আধুনিককালে প্রযুক্তিগত নানা উদ্ভাবনের (কাঁটাচামচ, চামচ এবং ছুরির) কারণে এবং তুলনামূলক নরম খাদ্যতালিকার কারণে আক্কেল দাঁতের প্রয়োজনীয়তাকে অস্তিত্বহীন বলে মনে করা হয়। বর্তমান জীববিজ্ঞানীরা আক্কেল দাঁত কে ভেস্টিজিয়াল অর্গান বা শরীরের এমন একটি অংশ হিসেবে শ্রেণীভূক্ত করেছেন যা বিবর্তনের কারণে কার্যহীন হয়ে পড়েছে।
মানুষ এবং আমাদের চোয়াল সময়ের সাথে সাথে ছোট হয়ে গিয়েছে। এই বিবর্তনীয় অগ্রগতির জন্য সম্ভবত কয়েকটি কারণ রয়েছে। কিছু বিজ্ঞানী বিশ্বাস করেন যে, সময়ের সাথে সাথে মানুষের মস্তিষ্ক বড় হওয়ার কারণে চোয়াল ছোট হয়ে গিয়েছে। আমাদের খাদ্যাভ্যাস এবং দাঁতের চাহিদাও ব্যাপকভাবে পরিবর্তিত হয়েছে। ছোট চোয়াল মানে আমাদের যে সমস্ত দাঁত থাকার কথা তার জন্য মুখে সবসময় পর্যাপ্ত জায়গা না থাকা। এছাড়াও আক্কেল দাঁতের ফলে নানা রকম সমস্যা; যেমন কুটিল দাঁত, দাঁতের ক্ষয় বৃদ্ধি, চোয়াল ব্যথা, মাড়ির নিচে সিস্ট এবং সম্ভবত টিউমার হতে পারে। ফলে এসব দাঁত সরানো জরুরি হয়ে পরে।
আপনার যদি আক্কেল দাঁত থাকে, যা আপনি যদি সরানোর কথা ভেবেছেন, তাহলে আপনার জন্যই বিশেষজ্ঞরা দৃঢ়ভাবে সুপারিশ করেছে অল্প বয়স্ক থাকতেই আক্কেল দাঁত তুলে ফেলতে! যাতে করে ভবিষ্যতে বিভিন্ন সমস্যা প্রতিরোধ করা যায় এবং সর্বোত্তম নিরাময় নিশ্চিত করা যায়।