আমাদের আজকের পৃথিবী বিভিন্ন পরিবর্তনের ফসল। অনেক বিপর্যয় সহ্য করে পরিণত হয়েছে পৃথিবী নামক এই বসবাস যোগ্য গ্রহে। প্রায়শই কিছু না কিছু লুকানো রহস্য উন্মোচিত হচ্ছে। বুঝতে সাহায্য করছে পৃথিবীর রুপান্তরকে। তারই ধারাবাহিকতায় বিজ্ঞানীরা খোঁজ পেয়েছেন অ্যারগোল্যান্ড নামক এক মহাদেশের।
বিজ্ঞানীরা সম্প্রতিক সময়ে এই মহাদেশের অস্তিত্ব খুঁজে পান। যেটি ১৫৫ মিলিয়ন বছর আগে অস্ট্রেলিয়ার ভূখন্ড থেকে দূরে সরে যায়। যার ফলে পুরোপুরি ভাবে হারিয়ে যায় অ্যারগোল্যান্ড নামক এই মহাদেশটি। গবেষকরা নতুন গবেষণায় বুঝতে পারেন যে এটি এমনি এমনি হারিয়ে যায়নি। টেকটোনিক প্লেটের সংঘর্ষে এটি টুকরো টুকরো হয়ে দক্ষিণ পূর্ব এশিয়ায় ছড়িয়ে পড়ে।
ইউট্রেক্ট বিশ্ববিদ্যালয়ের ভূ-বিদ্যা বিভাগের ইলডার এ্যাদভোকাত বলেন,
“দক্ষিণপূর্ব এশিয়ার অবস্থা আফ্রিকা এবং দক্ষিণ আমেরিকার মতো জায়গা থেকে পুরোপুরি ভিন্ন। যেখানে একটি মহাদেশ পরিষ্কারভাবে দুই টুকরায় বিভক্ত হয়েছে। কিন্তু অ্যারগোল্যান্ড ভিন্ন ভিন্ন কয়েক টুকরায় বিভক্ত হয়ে যাওয়ায় আমাদের মহাদেশগুলোর গঠন প্রক্রিয়া জানতে বাঁধাগ্রস্থ করে।”
ডাচ গবেষকদল অ্যারগোল্যান্ডের ইতিহাস খুঁজতে গিয়ে জানতে পারেন ৩১০০ মাইল (৫০০০ কিলোমিটার) দীর্ঘ ভূ-খণ্ড অস্ট্রেলিয়া থেকে দক্ষিণ এশিয়ায় সড়ে আসে এবং সেটি এখন ভারত মহাসাগরের সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে প্রায় ১৮০০ ফুট নিচে অবস্থিত।
জুরাসিক যুগের পরে, ১৬৪ থেকে ১৬৫ মিলিয়ন বছর পূর্বে প্যানজি দুইটি সুপারিনটেনডেন্ট এ বিভক্ত হয়ে যায়। এদের একটির নাম লরেশিয়া এবং অন্যটি গন্ডওয়ানা। যদিও এটা পুরোপুরিভাবে একটি ভাঙ্গন ছিল না। এই সময়ের মাঝেই অ্যারগোল্যান্ড কয়েক টুকরো মহাদেশীয় খন্ডে বিভক্ত হয়ে গিয়েছিল।
গবেষকরা ভূতাত্ত্বিক প্রমাণাদি দিয়ে একটি কম্পিউটার জেনারেটেড ছবি আঁকেন। যার সাহায্যে তারা বুঝতে চেষ্টা করেন অ্যারগেল্যান্ড কিভাবে বিভিন্ন টুকরায় ভেঙ্গে গিয়ে বর্তমানের ইন্দোনেশিয়া এবং মায়ানমারের আশেপাশে ছড়িয়ে পড়ে।
একটা একক ভূত্বকে সীমাবদ্ধ না থেকে সেগুলো বরং মিলিয়ন মিলিয়ন বছরে নিজেদেরকে ছোট ছোট কয়েক টুকরায় পরিণত করে। তারা এই রহস্যের সমাধান করতে গিয়ে আরেকটি তাৎপর্যপূর্ণ বিষয় জানতে পারেন যে পাহাড় এবং দ্বীপসমূহ কিভাবে তাদের আকৃতি লাভ করে।
একটি নতুন মডেলের মাধ্যমে জানা যায় যে পেসিফিক সাগর আগামী ৩০০ মিলিয়ন বছরের মধ্যে অদৃশ্য হয়ে যাওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। এমনটি ঘটলে এই মহাদেশটিকে আবারো একত্রে আনবে বলে বিজ্ঞানীদের ধারণা। যা অ্যামাশিয়া নামক একটি সুপারিনটেনডেন্ট এর সৃষ্টি করবে এবং এটি উত্তর মেরুর আশেপাশে অবস্থিত।
একটা সম্ভাব্য অনুযায়ী, মহাদেশটি একটি সাবডাকশন জোনের তলদেশে সরে গিয়েছিল। যেখানে একটি টেকটোনিক প্লেট অন্য একটি টেকটোনিক প্লেটের সাথে মিলিত হয়।
এসব সংযোগস্থলে শিলাময় সমুদ্রের তলদেশ পুনর্মিলিত হবে ভূত্বকের তলদেশের সাথে। যেখানে সেগুলো ভবিষ্যতে পুনরায় ভূত্বকে পরিণত হওয়ার জন্য গলে ম্যাগমায় রুপান্তরিত হবে।
মোহাম্মদ রনি / নিজস্ব প্রতিবেদক
তথ্যসূত্র: ফিজিক্স.অর্গ, ডেইলিমেইল, লাইভ সাইন্স
+1
+1
+1
2
+1
+1
3
+1
3
+1
1