নতুন গবেষণাপত্রে একজন বিজ্ঞানী ভবিষ্যতবাণী করেছেন যে, জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে সৃষ্ট দীর্ঘায়িত খরা এবং অধিক হারে বন ধংস করার কারণে ২০৬৪ সালের মধ্যে দক্ষিণ আমেরিকার অ্যামাজন রেইনফরেস্ট নিশ্চিহ্ন হয়ে যাবে।
প্রায় ২.৩ মিলিয়ন বর্গমাইল জুড়ে অবস্থিত আমাজন রেইনফরেস্ট। বায়ু দূষণ কমাতে এবং বিশ্বের অক্সিজেন- কার্বন চক্রকে নিয়ন্ত্রণ করার গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব পালন করে এই বন।
ফ্লোরিডা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভূগোলের অধ্যাপক রবার্ট ওয়াকারের মতে, এটি মানব-সৃষ্ট বিপর্যয়ের পরিণতি হিসাবে ‘টিপিং পয়েন্ট’ এর দ্বারপ্রান্তে দাঁড়িয়েছে, ‘যার জন্য আমরা সকলেই দায়বদ্ধ’।
তার গবেষণাপত্রের অনন্য বৈশিষ্ট্য হলো অ্যামাজনের ধংসের নির্দিষ্ট সময় উল্লেখ। অন্যান্য গবেষকরা কেবল অনুমান দিয়ে থাকলেও, রবার্ট ওয়াকার একটি নির্দিষ্ট সময় উল্লেখ করেছেন, ২০৬৪।
অধ্যাপক ওয়াকার বলেছেন, অ্যামাজন আগামী কয়েক দশক এর মধ্যে ঘন, আর্দ্রতা ভরা বন থেকে একটি উন্মুক্ত সাভান্নায় রূপান্তরিত হবে, যা থাকবে আগুনে পোড়া ঘাস এবং গুল্ম দ্বারা পূর্ণ। তিনি বলেন, “এটি সন্দেহজনক যে আঞ্চলিক জলবিদ্যুতের জন্য অ্যামাজনীয় বনটি স্থিতিশীল থাকতে সক্ষম হবে”।
‘সবচেয়ে বড় উদ্বেগ আগুন, বন উজাড়’। বন উজাড় -একটি বড় পরিবেশগত সমস্যা, যা বনের আবাস ধ্বংস এবং জৈব বৈচিত্র্যের ক্ষতি করে। বন উজাড় করার একটি বড় কারণ হলো কৃষি ফসলের জন্য জায়গা পরিষ্কার।
গত বছর অ্যামাজনে সংঘটিত অগ্নিকান্ড গুলো যথেষ্ট দৃষ্টি আকর্ষণ করে – ২০১৯ সালের আগস্টে, ব্রাজিলের ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট ফর স্পেস রিসার্চ সারা দেশ জুড়ে ৮০,০০০ এরও বেশি অগ্নিকাণ্ডের খবর দিয়েছে, যা বছরের পর বছর ধরে ৭৭ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়েছে।
বৃষ্টিপাত হ্রাস এবং শুকনো মৌসুমকে দীর্ঘায়িত করার মাধ্যমে বনভূমি আঞ্চলিক জলবায়ুকে প্রভাবিত করে।
ওয়াকার বলেন,তিনি অ্যামাজন অঞ্চলে কৃষকদের সাথে অনেক সময় ধরে কথা বলেছেন। তিনি বলেন, দারিদ্র্য এবং সরকারী সংস্থার দুর্বল অবস্থা বনভূমি ধংসের নেপথ্যে কাজ করে। ‘সেখানকার লোকেরা, জীববৈচিত্র্য-পরিবেশ নিয়ে এত চিন্তা করেন না। কারণ তাদের পরবর্তী খাবার এর ব্যাবস্থা করা নিয়ে চিন্তা করতে হয়’।
এদিকে, বৈশ্বিক উষ্ণায়নের ফলে ঘন ঘন খরার কারণে অ্যামাজনে বহু গাছের প্রজাতি মারা যাচ্ছে। সবচেয়ে বড় কথা, পৃথিবীর ফুসফুস হিসাবে বেঁচে থাকা গাছগুলির কাজ করার ক্ষমতা মারাত্মকভাবে নষ্ট করে দেয় এই খরা।
আমাজন রেইনফরেস্ট কার্বন ডাই অক্সাইড থেকে প্রচুর পরিমাণে কার্বন শোষণ করে – যা জলবায়ু পরিবর্তনে প্রধান অবদানকারী। বিজ্ঞানীরা অনুমান করেছেন যে, অ্যামাজন সালোকসংশ্লেষণের সময় মানব জীবাশ্ম জ্বালানীর এক দশমাংশের পরিমাণ গ্রহণ করে।
তবে রেইন ফরেস্টটি ২০০৫, ২০১০ এবং ২০১৫ সালে খরার মারাত্মক অভিজ্ঞতা অর্জন করেছিল এবং গবেষণায় দেখা গেছে যে খরার সময় গাছগুলোর বায়ুমণ্ডল থেকে কার্বন ডাই অক্সাইড শোষণের হার অতিরিক্ত হ্রাস পায়।
ভুলেও যদি এই বন ধংস হয়ে যায়, তবে এই বিশাল বনের বিশাল বিশাল সুবিধাগুলোও এর সাথে শেষ হয়ে যাবে, যা মানবজাতির জন্য চরম বিপজ্জনক পরিস্থিতির সৃষ্টি করবে।
কায়েস মোহাম্মদ সাইফুল্লাহ/ নিজস্ব প্রতিবেদক
+1
3
+1
+1
+1
+1
+1
+1