একটি সাম্প্রতিক গবেষণার প্রতিবেদন অনুযায়ী, ডিমেনশিয়া (dementia) আক্রান্ত ব্যক্তিদের অ্যান্টিসাইকোটিক (antipsychotic) ওষুধ দেওয়ার পর নিরাময়ের পরিবর্তে উল্টো ঝুঁকি বেড়ে যায়।
সংক্ষেপে ডিমেনশিয়া হলো বেশ কিছু রোগের সমষ্টি যা স্মৃতিশক্তি, চিন্তাভাবনা এবং দৈনন্দিন কাজকর্ম সম্পাদন করার ক্ষমতাকে প্রভাবিত করে যার ফলে আক্রান্ত ব্যক্তি বারবার ভুলে যায় তার কি করা দরকার। আর অ্যান্টিসাইকোটিক ওষুধ হলো মনস্তাত্ত্বিক রোগজনিত ব্যবহৃত কিছু ওষুধ।
বিএমজে (ব্রিটিশ মেডিকেল জার্নাল) তে প্রকাশিত গবেষণাটির মতে, যারা অ্যান্টিসাইকোটিক ড্রাগ ব্যবহার করেন না তাদের তুলনায় যারা অ্যান্টিসাইকোটিক ড্রাগ ব্যবহার করেন তাদের বিভিন্ন শারিরীক জটিলতা দেখা দিতে পারে। যেমন – হার্ট অ্যাটাক, স্ট্রোক, হার্ট ফেইলিওর, রক্ত জমাট বাঁধাজনিত সমস্যা, অনিয়মিত হৃৎস্পন্দন, নিউমোনিয়া, ফ্র্যাকচার এবং তীব্র কিডনি ইনজুরির উচ্চ ঝুঁকি ইত্যাদি।
গবেষণার লেখকরা বলেছেন, এসব ড্রাগ বা ওষুধ গ্রহণ করার পরবর্তী সময় থেকে পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া দেখা দিতে শুরু করে।
গবেষকরা উল্লেখ করেছেন যে, অ্যান্টিসাইকোটিক ওষুধ ডিমেনশিয়া সহ বিভিন্ন মনস্তাত্ত্বিক এবং আচরণগত সমস্যার সমাধানের জন্য নির্দেশিত হয় যেমন- বিষণ্নতা, উদ্বেগ, বিরক্তি, আগ্রাসন, উদাসীনতা, অযথা প্রলাপ ইত্যাদি।
গবেষকরা বলেছেন যে, তারা ইংল্যান্ডে প্রাথমিক যত্ন, হাসপাতাল এবং মৃত্যুর তথ্যের মাধ্যমে সম্ভাব্য স্বাস্থ্য সমস্যা গুলো খুঁজে পেয়েছেন।
তারা ১,৭৩,৯১০ জনকে শনাক্ত করেছেন যাদের মধ্যে ৬৩% মহিলা এবং তাদের ডিমেনশিয়া রোগ ছিল। গবেষণাকৃত ব্যক্তিদের গড় বয়স ছিল ৮২।
গবেষণায় জানুয়ারি ১৯৯৮ থেকে মে ২০১৮ সালের মধ্যে ডিমেনশিয়া রোগ নির্ণয় করা লোকদের দিকে নজর দেওয়া হয়েছে যারা আগের বছরে অ্যান্টিসাইকোটিক ওষুধ ব্যবহার করেননি।
গবেষকরা ৩৫,৩৩৯ জন ডিমেনশিয়ায় আক্রান্ত ব্যক্তি যারা রোগ নির্ণয়ের পর থেকেই অ্যান্টিসাইকোটিক ওষুধ সেবন করছেন তাদের সাথে ১৫ জন অ্যান্টিসাইকোটিক গ্রহণ না করা ডিমেনশিয়ায় আক্রান্ত ব্যক্তির সাথে তুলনা করেন।
রিসপেরিডোন (risperidone), কুইটিয়াপাইন (quetiapine), হ্যালোপেরিডল (haloperidol) এবং ওলানজাপাইন (olanzapine) ছিল সবচেয়ে বেশি নির্দেশিত অ্যান্টিসাইকোটিক ওষুধ।
গবেষকরা বিশ্লেষণ থেকে এমন লোকদের বাদ দিয়েছেন যাদের নিম্নোক্ত সমস্যা রয়েছে যেমন- অন্যান্য পার্শ্বীয় রোগ, চিকিৎসারত অবস্থা, অনিয়ন্ত্রিত জীবনধারা।
চিকিৎসার প্রথম তিন মাসে, গবেষকরা রিপোর্ট করেছেন যে, অ্যান্টিসাইকোটিক গ্রহণকারী ব্যক্তিদের মধ্যে নিউমোনিয়ার হার ছিল ৪.৪৮% যেখানে যারা ব্যবহার করেন না তাদের জন্য ১.৪৯%। কিন্তু এক বছর পরে, অ্যান্টিসাইকোটিক গ্রহণকারীদের ক্ষেত্রে এই হার ১০.৪১% এ বেড়েছে, যেখানে যারা ব্যবহার করেন না তাদের ক্ষেত্রে ৫.৬৩% এর তুলনায়।
গবেষকরা বলেছেন যে এই ধরনের ওষুধ গ্রহণকারী ব্যক্তিদের মধ্যে তীব্র কিডনি ক্ষতের ঝুঁকি সবচেয়ে বেশি ছিল (১.৭ গুণ)। এছাড়াও, অ-ব্যবহারকারীদের তুলনায় স্ট্রোক এবং ভেনাস থ্রম্বোইম্বোলিজমের (venous thromboembolism) ঝুঁকি ১.৬-গুণ বেশি ছিল।
প্রায় সমস্ত ফলাফলের ভিত্তিতে, তারা বলেছে যে, অ্যান্টিসাইকোটিক চিকিৎসার প্রথম সপ্তাহে ঝুঁকি সবচেয়ে বেশি ছিল, বিশেষ করে নিউমোনিয়ার জন্য।
ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অফ হেলথ (এনআইএইচ) এবং দ্য ডিসকভারি ইন হেলথের সাথে যুক্ত একজন বায়োইনফরম্যাটিক্স সায়েন্টিফিক রিসোর্স অ্যানালিস্ট এবং বায়োমেডিকাল ডেটা বিশেষজ্ঞ ড. জে. ওয়েস উলম (Dr. J. Wes Ulm) মেডিক্যাল নিউজ টুডে কে বলেছেন,
“অ্যান্টিসাইকোটিক ওষুধের ক্রিয়াগুলোর স্বতন্ত্র প্রক্রিয়া রয়েছে যা স্নায়ুতন্ত্রের উপর প্রভাব ফেলার মাধ্যমে প্রত্যক্ষ এবং পরোক্ষভাবে একাধিক অঙ্গ-তন্ত্রের মৌলিক শারীরবৃত্তির উপর প্রভাব ফেলতে পারে।”
তিনি আরো বলেন,
“অ্যান্টিসাইকোটিক নির্বাচন করার ক্ষেত্রে অতিরিক্ত সতর্কতা অবলম্বন করার বিষয়টি মূল্যায়ন করতে হবে।”
ডাঃ জেসন ক্রেলম্যান (Dr. Jason Krellman), একজন নিউরোসাইকোলজিস্ট এবং নিউইয়র্কের কলম্বিয়া ইউনিভার্সিটি আরভিং মেডিকেল সেন্টারের নিউরোসাইকোলজির সহকারী অধ্যাপক, মেডিকেল নিউজ টুডেকে বলেছেন যে,
“চিকিৎসকদের অবশ্যই আচরণগত এবং মনস্তাত্ত্বিক সমস্যাগুলোর সাথে সম্ভাব্য পার্শ্বপ্রতিক্রিয়াগুলোর দিকে নজর দিতে হবে যা ডিমেনশিয়ার পরবর্তী পর্যায়ে ঘটতে পারে, যেমন উদ্বেগ, আগ্রাসন, হ্যালুসিনেশন এবং বিভ্রম।”
ক্রেলম্যান আরো বলেন,
“যদি কেউ ২৪-ঘন্টা যত্নের সুবিধা না পায় তাহলে উদ্বেগ, আগ্রাসন, হ্যালুসিনেশন, বিভ্রম এবং অনুরূপ সমস্যাগুলো আক্রান্ত ব্যক্তিকে মারাত্মক ঝুঁকিতে ফেলতে পারে। “
রিয়াজুল ইসলাম / নিজস্ব প্রতিবেদক
তথ্যসূত্র: মেডিকেল নিউজ টুডে.কম, বিএমজে.কম