ডাক্তারের পরামর্শ ছাড়া অনিয়ন্ত্রিত ও যাচ্ছেতাই ভাবে সামান্য জ্বর- ঠান্ডাতেও অ্যান্টিবায়োটিকের ব্যবহারের ফলে অ্যান্টিবায়োটিক তার কার্যক্ষমতা হারাচ্ছে। এন্টি শব্দের অর্থ বিপরীত এবং বায়ো শব্দের অর্থ জীবন। অর্থাৎ এন্টিবায়োটিক সাধারণত ব্যাকটেরিয়ার বিরুদ্ধে কাজ করে।
যাচ্ছেতাই অ্যান্টিবায়োটিক ব্যবহারের ফলে শরীরের উপকারী ব্যাকটেরিয়াও অনেক সময় মারা যাচ্ছে। অতিরিক্ত অ্যান্টিবায়োটিকের ব্যবহারের ফলে প্যাথোজেন (শরীরের জন্য অপরিচিত অর্থাৎ যাদের প্রবেশের ফলে শরীরের শরীরে রোগ দেখা দেয়) অ্যান্টিবায়োটিককে চিনে রাখছে এবং পরবর্তীতে অ্যান্টিবায়োটিকে আর কাজ করছে না। এজন্যে উচ্চবর্গীয় অ্যান্টিবায়োটিক ব্যবহার করতে হচ্ছে দিনকে দিন।
তবে আশাহত হবার মতো আরেকটি দিক হচ্ছে অ্যান্টিবায়োটিক শুধুমাত্র অতিরিক্ত ব্যবহারের ফলেই তার কার্যক্ষমতা হারায় না পরিবেশ দূষণের ফলেও কার্যক্ষমতা হারায়। বেশ কয়েকটি মানব প্যাথোজেন রয়েছে যা অ্যান্টিবায়োটিক প্রতিরোধের বিকাশ করে। মাত্রাতিরিক্ত ব্যবহারই একমাত্র কারণ নয়। কৃষির মতো মানবিক ক্রিয়া-কলাপ এবং জীবাশ্ম জ্বালানির দহনও এতে ভূমিকা পালন করে।
জিনোম সিকোয়েন্সিং এর মাধ্যমে ইউনিভার্সিটি অব জর্জিয়ার বিজ্ঞানীরা পরিবেশে ভারী ধাতুর উপস্থিতি এবং অ্যান্টিবায়োটিকের কার্যক্ষমতা হারানোর মধ্যে গভীর সম্পর্ক খুঁজে পেয়েছেন।
ব্যাকটেরিয়া গুলোর মধ্যে এমন অ্যান্টিবায়োটিক রেজিস্ট্যান্স জিন রয়েছে যেগুলো একসাথে অনেকগুলো ওষুধের বিরুদ্ধে প্রতিরোধ ক্ষমতা সৃষ্টি করতে পারে। এটি খুবই শক্তিশালী প্রতিরোধ ব্যবস্থা। কারণ এই প্রতিরোধ ব্যবস্থা অ্যান্টিবায়োটিকের সাথে সাথে ভারী ধাতু গুলোর বিরুদ্ধেও প্রতিরোধ ব্যবস্থা গড়ে তুলতে পারে।
যখন মাটিতে অ্যান্টিবায়োটিক রেজিস্ট্যান্স জিন পাওয়া যায়, তার সাথে সাথে মেটাল রেজিস্টেন্স জিনও পাওয়া যায়। যেসব ধাতুর বিরুদ্ধে এ ব্যবস্থা গড়ে উঠতে পারে তারমধ্যে উল্ল্যেখযোগ্য হচ্ছে আর্সেনিক, কপার, ক্যাডমিয়াম এবং জিংক। অর্থাৎ অণুজীবগুলো নিজের সুরক্ষার জন্য সময়ের সাথে সাথে নতুন নতুন কৌশল এবং প্রতিরোধ ব্যবস্থা সৃষ্টি করছে।
সময়ের সাথে সাথে কিভাবে অ্যান্টিবায়োটিক নিজের রূপ পরিবর্তন করছে এটি সম্পর্কে আমাদের আরও ধারণা নেয়া উচিত। কারণ এটি আমাদের পানীয় জল এবং খাবার এবং অবশেষে স্বাস্থ্যের উপর প্রভাব ফেলতে পারে।
গোলাম কিবরিয়া/ নিজস্ব প্রতিবেদক