বিজ্ঞানীরা প্রথমবারের মতো শৈবাল-এর একটি আলোক সংবেদী প্রোটিন খুঁজে পেয়েছেন যা সম্পূর্ণ অন্ধ ব্যক্তির দৃষ্টি আংশিক ফিরিয়ে আনতে পারে! ফ্রান্সের ব্রিটনিতে বসবাসরত ৫৮ বছর বয়সী একজন অন্ধ ব্যক্তির উপর দৃষ্টি ফিরিয়ে আনার এক পরীক্ষামূলক গবেষণা চালানো হয়। এই লোকটির নাম ও সম্পূর্ণ ঠিকানা প্রকাশ করা হয়নি।
তবে বিখ্যাত জার্নাল নেচার মেডিসিন এ রোগীটির অন্ধত্ব কীভবে ধরা পড়ে তা বর্ণনা করা হয়েছে। ৪০ বছর আগে ঐ ব্যক্তির রেটিনিস পিগমেন্টোসা ধরা পড়ে (রেটিনিস পিগমেন্টোসা রেটিনার পৃষ্ঠে আলোক সংবেদী তথা ফটোরিসেপ্টর কোষগুলোকে ধ্বংস করে দেয়। পুরো পৃথিবী জুড়ে প্রায় দুই মিলিয়ন মানুষ এতে আক্রান্ত)। এতে পুরোপুরি অন্ধত্ব খুব একটা দেখা না গেলেও, উল্লেখিত লোকটি বিগত দুই দশক ধরে কিছুই দেখতে পায় না।
বিজ্ঞানীরা যে পদ্ধতিতে এখানে চিকিৎসা দিয়েছেন, সে পদ্ধতিটি হলো অপ্টোজেনেটিক্স। এই চিকিৎসা পদ্ধতির প্রথম ধাপ হলো জিন থেরাপি। ধাপটিতে অন্ধ ব্যক্তির চোখে শৈবাল হতে উৎপন্ন এক ধরনের প্রোটিন ব্যবহার করা হয়। চিকিৎসকেরা জিন থেরাপি ব্যবহার করে লোকটির চোখের মধ্যে হালকা সংবেদনশীল অণু যুক্ত করেন। শৈবাল হতে প্রাপ্ত এই অণু চোখের পেছনে গভীর স্তরের সজীব কোষগুলোতে স্থাপন করা হয়। এরা আলোর প্রতি সংবেদনশীল। ফলে আলোক সংকেত পাবার সাথে সাথে মস্তিষ্কে সংকেত পাঠায়। এই কৌশলের অন্যতম উদ্দেশ্য হলো রেটিনা কোষকে প্রভাবিত করা, যাতে তারা মস্তিষ্কে দর্শন সংকেত প্রেরণ করে আলোর প্রতিক্রিয়া জানাতে পারে।
নেচার মেডিসিন এ উল্লেখ করা হয়- লোকটি তার সামনে থাকা টেবিল থেকে জিনিসপত্র নিজে নিজেই খুঁজে বের করতে পারেন। গবেষণার প্রথম সাফল্য আসে যখন লোকটি জানায় সে রাস্তা পারাপারের ক্রসিংগুলো দেখতে পাচ্ছে। এ গবেষণার অন্যতম গবেষক ড. জোসি সাহেল বলেন, “এই রোগী কিছুটা হতাশ ছিলেন। কেননা ইঞ্জেকশন দেওয়ার পর দীর্ঘ সময় অতিবাহিত হলেও কোন আশাব্যঞ্জক ফলাফল আসছিল না। এরই মধ্যে সে জানায়, রাস্তার ক্রসিংগুলো সে দেখতে পাচ্ছে। এটি সত্যিই খুবই উত্তেজনাকর মূহুর্ত ছিলো, রোগীর জন্যেও এবং আমাদের সবার জন্যও”।
অপ্টোজেনেটিক্স মেডিসিনের ক্ষেত্রে নতুন। তবে মৌলিক নিউরোসায়েন্সে এটি একটি মুখ্য বিষয়। প্রাণীর উপর করা নিউরোসায়েন্স এক্সপেরিমেন্টে এটি ব্যাপকভাবে ব্যবহৃত হয়। ২০১৬ সালে টেক্সাসে মানুষের উপর প্রথম এই কৌশল প্রয়োগ করা হয়। তবে সেই গবেষণার ফলাফল এখনও প্রকাশিত হয়নি।
গবেষকদের একজন অধ্যাপক রোসকা বলেন, “এই গবেষণাটি প্রমাণ করে যে অপ্টোজেনেটিক্স ব্যবহার করে দৃষ্টি আংশিক পুনরুদ্ধার করা সম্ভব”। যদিও লোকটি এখনও পুরোপুরি দৃষ্টি ফিরে পায়নি, তারপরও বিজ্ঞানীরা মনে করেন দৃষ্টিহীন ব্যক্তির জীবনে আংশিক দৃষ্টি অনেক বড় একটি আশীর্বাদ।
আরও কয়েকজন ব্যক্তি এই চিকিৎসার আওতাধীন ক্লিনিক্যাল ট্রায়ালে রয়েছেন। তবে মাত্র একজনের কাছ থেকেই সাফল্য আসলো। এই গবেষণার সম্পূর্ণ ফল পেতে আরও অপেক্ষা করতে হবে। গবেষকেরা খতিয়ে দেখার চেষ্টা করছেন অপ্টোজেনেটিক্স কোন পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া সৃষ্টি করে কিনা। সফলতা লাভ করলে এই পদ্ধতি চক্ষু চিকিৎসা বিজ্ঞানে মাইলফলক হয়ে থাকবে!
মাসরুল আহসান/ নিজস্ব প্রতিবেদক
তথ্যসূত্র : BBC, Technology Review
+1
+1
+1
+1
+1
3
+1
1
+1