পিরিয়ড একটি স্বাভাবিক শারীরবৃত্তীয় প্রক্রিয়া। প্রাপ্ত বয়স্ক হওয়ার পরে, প্রতিমাসের একটি নির্দিষ্ট সময়ে এটি হয়। কিন্তু অনেকসময় দেখা যায়, প্রতিমাসের সুনির্দিষ্ট সময়ে হয় না, তখন তাকে অনিয়মিত পিরিয়ড হিসাবে বিবেচনা করা হয়। অনিয়মিত পিরিয়ডের কারণে প্রায়ই মহিলাদের মাঝে হতাশা, উদ্বেগ দেখা যায়। তাদের পিরিয়ড কেন অনিয়মিত হচ্ছে তার সঠিক কারণ অনেকেরই অজানা।
একটি পিরিয়ডের ১ম দিন থেকে পরবর্তী পিরিয়ডের ১ম দিন পর্যন্ত সময় নিয়ে একটি মাসিক চক্র সম্পন্ন হয়।
মাসিক চক্র গড়ে ২৮ দিন পর পর সম্পন্ন হয়। তবে এটি একজন মহিলা থেকে অন্য জন মহিলার আলাদা হতে পারে। পিরিয়ড যদি ২৪ -৩৮ দিনের মধ্যে শুরু হয় তাহলে সেটি নিয়মিত পিরিয়ড। কিন্তু যদি পিরিয়ড ২৪-৩৮ দিনের মধ্যে শুরু না হয়, তখন অনিয়মিত পিরিয়ড হিসাবে বিবেচনা করা হয়।
অনিয়মিত পিরিয়ড হওয়ার লক্ষণসমূহঃ
বেশির ভাগ মহিলাদের ১১-১৩ বছর বয়সের মধ্যে পিরিয়ড শুরু হয়। সাধারণত ৫ দিন রক্তক্ষরণহয়ে থাকে। তবে অনেকের ক্ষেত্রে ২-৭ দিন পর্যন্ত ও রক্তক্ষরণ হতে পারে।
বেশির ভাগ মহিলাদের নিয়মিত পিরিয়ড হয় এবং প্রতিটি পিরিয়ডের সময় ব্যবধান ও একই থাকে।কিন্তু কিছু মহিলা আছে যাদের নিয়মিত পিরিয়ড এবং রক্তক্ষরণ হয় না। অনিয়মিত মাসিকের প্রধান লক্ষণ হচ্ছে মাসিক চক্র ৩৫ দিনের বেশি হওয়া, ঠিকমতো রক্তক্ষরণ না হওয়া। রক্তের ক্লটগুলোর ব্যাস যদি ২.৫ সেন্টিমিটারের বেশি হয় তাহলেও এটি অনিয়মিত মাসিকের লক্ষণ হিসেবে বিবেচনা করা হয়।
অনিয়মিত পিরিয়ড হওয়ার কারণঃ
ইস্ট্রোজেন এবং প্রোজেস্টেরণ এই দুটি হরমোন মাসিক চক্রকে নিয়ন্ত্রণ করে। বয়ঃসন্ধিকালে হরমোনের বেশির ভাগ পরিবর্তন হয়, তাই তখন অনিয়মিত মাসিক হওয়ার সম্ভাবনাও বেশি থাকে।মহিলাদের মেনোপজ হওয়ার আগে প্রায়ই অনিয়মিত মাসিক হয় এবং তখন রক্তরক্ষণ ও অনিয়মিত হয়। মেনোপজ হওয়ার পরে মহিলাদের আর পিরিয়ড হয় না। গর্ভাবস্থায় ও পিরিয়ড হয় না। অনেক সময় থাইরয়েড ডিসঅর্ডারের কারণে ও অনিয়মিত মাসিক হয়।
অনিয়মিত পিরিয়ডের প্রতিকারঃ
১. যোগ ব্যায়ামঃ
একটি সমীক্ষায় দেখা যায়, যেসকল মহিলারা প্রতিদিন গড়ে ৩৫ মিনিট যোগ ব্যায়াম করেছে তাদের নিয়মিত মাসিক হয়েছে। যোগ ব্যায়াম করলে পিরিয়ডের ব্যথা, মানসিক চাপ ও উদ্বেগ দূর হয়।
২. স্বাস্থ্যকর ওজনঃ
অতিরিক্ত ওজন বা কম ওজনের কারণে ও অনিয়মিত মাসিক হয়। তাই চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী স্বাস্থ্যকর ওজন বজায় রাখার চেষ্টা করতে হবে।
৩. নিয়মিত ব্যায়ামঃ
নিয়মিত ব্যায়াম করলে অনিয়মিত মাসিক থেকে যেমন মুক্তি পাওয়া সম্ভব, ঠিক তেমনি পিরিয়ডের আগে এবং মাসিক চলাকালীন ব্যথা থেকেও মুক্তি পাওয়া সম্ভব।
৪. আদা গুঁড়াঃ
একটি সমীক্ষায় দেখা যায়, পিরিয়ডের প্রথম ৩-৪ দিনের মধ্যে ৭৫০- ২০০০ মি.গ্রা আদা গুঁড়া গ্রহণ করলে পিরিয়ডের ব্যথা ও রক্ত ক্ষরণ হ্রাস পায় এবং অনিয়মিত মাসিক থেকেও মুক্তি পাওয়া যায়।
৫. দারুচিনিঃ
সমীক্ষায় দেখা যায়, দারুচিনি খেলে পিরিয়ডের ব্যথা ও রক্তক্ষরণ কমে যায় এবং পিরিয়ড ও নিয়মিত হয়।
৬. ভিটামিন ‘B’ এবং ‘D’:
মাসিক চক্র নিয়ন্ত্রণ করতে সহায়তা করে।
৭. আপেল সিডার ভিনেগারঃ
ওজন হ্রাস করে এবং রক্তে শর্করা ও ইনসুলিনের মাত্রা কমাতে সহায়তা করে এবং মাসিক চক্র ও নিয়ন্ত্রণ করে।
৮. আনারসঃ
আনারসে ব্রোমালাইন নামক এনজাইম রয়েছে। এটি জরায়ুর আস্তরণকে নরম করে এবং নিয়মিত পিরিয়ড হতে এবং ব্যথা উপশম করতে সহায়তা করে।
আমেনা আঁখি/ নিজস্ব প্রতিবেদক
তথ্যসূত্রঃ মেডিকেল নিউজ টুডে, হেলথ লাইন
+1
8
+1
+1
+1
10
+1
2
+1
1
+1
1