প্রিয় খাবার, প্রিয় মানুষ, টেবিলে জ্বলতে থাকা মোমবাতির নরম আলো- স্বপ্নময় একটি চমৎকার সন্ধ্যা কাটাতে আর কী চাই! তবে অ্যাকিউট হাঁপানি রোগে আক্রান্ত ব্যক্তিদের জন্য এধরণের স্বপ্ন হতে পারে বিপজ্জনক। আরহাস বিশ্ববিদ্যালয়ের জনস্বাস্থ্য বিভাগের করা একটি গবেষণা এমনটাই জানাচ্ছে।
বিশ্ববিদ্যালয়টির জনস্বাস্থ্য বিভাগের পোস্টডক্টরেট এবং গবেষণার সহলেখক ড. কারিন রোজেনকিল্ড লরসেন বলেন,
“গবেষণায় জানা গেছে যে রান্না এবং মোমবাতি পোড়ানোর ধোঁয়া থেকে সৃষ্ট অভ্যন্তরীণ বায়ু দূষণ অ্যাকিউট হাঁপানি রোগে আক্রান্ত তরুণদের মধ্যে অস্বস্তি ও প্রদাহের সৃষ্টি করতে পারে। এছাড়াও আমরা জানতে পেরেছি এটি ডিএনএ এর ক্ষতিসাধন এবং রক্তে প্রদাহের কারণ হতে পারে।”
আমরা যখন চুলায় বা ওভেনে রান্না করি কিংবা মোমবাতি জ্বালাই তখন কিছু অতিক্ষুদ্র কণা ও গ্যাস উৎপন্ন হয় যা আমরা নিজের অজান্তেই নিশ্বাসের সাথে গ্রহণ করি। এটি আমাদের স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর, বিশেষত শ্বাসযন্ত্রের পক্ষে।
ড. লরসেন ও তার দল ১৮ থেকে ২৫ বছর বয়সী অ্যাকিউট হাঁপানিতে আক্রান্ত তরুণদের ওপর এর প্রভাব নিয়ে একটি গবেষণা চালিয়েছেন।
গবেষণার মূল অংশে ৩৬ জন ব্যক্তির ওপর দুই সপ্তাহব্যাপী তিনটি সেশন পরিচালনা করা হয় যেখানে মহিলা ছিলেন ২০ জন (গড় বয়স ২২.৩ বছর)। পাঁচ ঘন্টার তিনটি সেশনের প্রথমটিতে তাদের এমন একটি পরিবেশে রাখা হয় যেখানে ওভেনে শুকরের বুকের মাংস রান্নার সময় নির্গত সুক্ষ্ম কণা ও ধোঁয়া মিশ্রিত বাতাস ছিলো। দ্বিতীয় সেশনে তারা ১০০% স্টিয়ারিন দ্বারা তৈরি চারটি টেপার মোমবাতি ও ছয়টি পিলার মোমবাতির সংস্পর্শে আসেন। তৃতীয় ও সর্বশেষ সেশনে তাদের বিশুদ্ধ বাতাসের সংস্পর্শে রাখা হয়।
উক্ত গবেষণায় দেখা যায় প্রথম ও দ্বিতীয় সেশনের ক্ষেত্রে অংশগ্রহণকারীদের মাঝে চোখ ও নাক জ্বালাপোড়া করা, মাথা ব্যথা, বমিবমি ভাব ইত্যাদি উপসর্গ দেখা দেয়। পুরুষদের তুলনায় নারীদের মাঝে এ সকল সমস্যাগুলো অধিক হারে পরিলক্ষিত হয়। যদিও রান্না করা ও মোমবাতি পোড়ানোর সময় সৃষ্ট ধোঁয়া ডিএনএ এর ওপর খুব গুরুত্বপূর্ণ প্রভাব ফেলেনি, তবু গবেষকগণ ডিএনএ-তে খুবই সুক্ষ্ম কিছু পরিবর্তন লক্ষ্য করেছেন।
ড. লরসেন জানান,
“ডিএনএ এর এই ক্ষতিসাধন অক্সিডেটিভ স্ট্রেস ও প্রদাহের ফলে ঘটতে পারে। এটি অত্যন্ত উদ্বেগের বিষয় কারণ এতে ডিএনএ এর প্রতিলিপি মিউটেশন হতে পারে যা ক্যান্সারের ঝুঁকি বাড়িয়ে দেয়। দহন কণার বিভিন্ন গবেষণায় এরূপ ফলাফল পাওয়া গেছে।”
এই ফলাফল গুলোর ওপর ভিত্তি করে গবেষকরা এই সিদ্ধান্তে উপনীত হয়েছেন যে রান্না ও মোমবাতি জ্বালানো আমাদের শ্বাসযন্ত্রকে প্রভাবিত করে এবং শ্বাসযন্ত্রে অস্বস্তি ও প্রদাহের সৃষ্টি করে। বিশেষত যদি কক্ষে বাতাস চলাচলের সুব্যবস্থা না থাকে তবে এ ধরণের সমস্যাগুলো অধিক হারে দেখা যায়। তরুণেরা যেহেতু মধ্যবয়সী ও বয়স্ক ব্যক্তিদের তুলনায় শারীরিকভাবে বেশি সক্ষম হয় তাই তাদের ওপর এই ক্ষতিকারক সুক্ষ্ম কণা ও গ্যাসের প্রভাব উল্লেখযোগ্য হারে লক্ষ্য করা যায়।
তবে শুধুমাত্র হাঁপানি রোগে আক্রান্ত তরুণ ব্যক্তির ওপরই যে এসকল ধোঁয়া ক্ষতিকর প্রভাব ফেলে তা নয়। যদিও গবেষণাটি কেবলমাত্র এধরণের ব্যক্তির ওপরই করা হয়েছিলো তবু এটি মূলত সকলের ক্ষেত্রেই প্রাসঙ্গিক বলে ড. লরসেন মনে করেন।
যেহেতু সামনে শীতকাল, ঘর গরম রাখতে উত্তাপ সৃষ্টিকারী পদার্থ পোড়ানোর হার স্বাভাবিকভাবেই বাড়বে। সেই সাথে শীত থেকে বাঁচতে দরজা-জানালা খোলার সম্ভাবনাও কমে যাবে বলাই বাহুল্য। কাজেই শ্বাসযন্ত্রের এই সমস্যাগুলো থেকে বাঁচতে এখন থেকেই এই দিকগুলোর প্রতি আমাদের বিশেষভাবে নজর রাখা জরুরি।