প্রথম পর্বে জেনে নিন স্পেস এলিভেটরের ইতিহাস ও এর মূল ধারণা ব্যাখ্যাঃ স্পেস এলিভেটর: কি ও যেভাবে কাজ করবে (পর্ব-১)
স্পেস এলিভেটরকে শীর্ষে পাঠানোর পদ্ধতি
স্পেস এলিভেটরের রিবনটি এখনো একটি ধারণার পর্যায়ে থাকলেও এর অন্যান্য অংশগুলো যেমন রোবোটিক লিফটার, অ্যাঙ্কর স্টেশন ও পাওয়ার বিমিং সিস্টেম এগুলো পরিচিত প্রযুক্তির মাধ্যমেই তৈরি করা সম্ভব।
লিফটার:
রোবোটিক লিফটারটি তার ঊর্ধ্বগতিকে মহাকাশে গাইড করতে রিবনটিকে ব্যবহার করবে। লিফটারটির ট্রাকশন-ট্রেড রোলারগুলো রিবনের সাথে আটকানো থাকবে এবং রিবনটিকে টেনে লিফটারটিকে উপরে উঠতে সাহায্য করবে।
অ্যাঙ্কর স্টেশনঃ
নিরক্ষীয় প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলে একটি মোবাইল প্লাটফর্ম থেকে স্পেস এলিভেটরটি আরম্ভ হবে, যা পৃথিবীতে রিবনটিকে নোঙ্গর করবে।
কাউন্টারওয়েটঃ
রিবনের শীর্ষে একটি কাউন্টারওয়েট থাকবে। স্পেস এলিভেটরের জন্য প্রাথমিক পরিকল্পনা হল এটি একটি গ্রহাণুকে আটকে সেটিকে কাউন্টারওয়েট হিসেবে ব্যবহার করবে। তবে সম্প্রতি লিফটপোর্ট এবং ইন্সটিটিউট অফ সাইন্টিফিক রিসার্চ (Institute for Scientific Research-ISR) মানুষের তৈরি কাউন্টারওয়েটের ব্যবহারের পরিকল্পনাও অন্তর্ভুক্ত করেছে।
পাওয়ার বিমঃ
লিফটারটি অ্যাঙ্কর স্টেশন বা এর কাছাকাছি অবস্থানে একটি ফ্রি-ইলেক্ট্রন লেজার সিস্টেম দ্বারা চালিত হবে। আইএসআর অনুসারে, লেজারটি ফটোভোলটাইক সেলগুলোতে ২.৪ মেগাওয়াট শক্তি নিঃসরণ করবে, যা পরিকল্পনা অনুসারে গ্যালিয়াম আরসেনাইডের তৈরি হবে এবং লিফটারের সাথে যুক্ত থাকবে। এটি পরবর্তীতে এই শক্তিকে বিদ্যুৎ শক্তিতে রূপান্তর করবে।
একবার চালু হয়ে গেলে লিফটারগুলো প্রায় প্রতিদিন এলিভেটরে চলাচল করতে পারবে। লিফটারগুলো আকারে ৫ টন থেকে ২০ টন পর্যন্ত ভিন্ন হবে। ২০ টনের লিফটারটি ১৩ টন পর্যন্ত ভার বহনে সক্ষম এবং এর ভিতরে ৯০০ ঘনমিটার স্থান রয়েছে। লিফটারটি ঘণ্টায় ১১৮ মাইল (ঘণ্টায় ১৯০ কিলোমিটার) বেগে ভার বহন করতে পারবে।
স্পেস এলেভেটর এর রক্ষণাবেক্ষণঃ
৬২,০০০ মাইল (১০০,০০০ কিলোমিটার) দৈর্ঘ্যের স্পেস এলিভেটরটি বিভিন্ন রকমের ঝুঁকির সম্মুখীন হতে পারে যেমন, আবহাওয়া, মহাকাশীয় ধ্বংসাবশেষ বা সন্ত্রাসী হামলা। তাই এলিভেটরের ডিজাইনের যেমন উন্নতি করা হছে সেই ক্ষেত্রে এই ঝুঁকির বিষয়গুলোও মাথায় রাখা হচ্ছে।
কার্যত সবসময় যাতে একটি স্পেস এলিভেটর সচল থাকে সেই জন্য ডেভলপাররা একাধিক এলিভেটর তৈরির পরিকল্পনা করেছে। প্রতিটি এলিভেটর আগেরটির তুলনায় দামে সস্তা হবে। প্রথম এলিভেটরটি প্লাটফর্ম হিসেবে কাজ করবে যেটি থেকে আরো এলিভেটর তৈরি করা হবে। এ কাজের ক্ষেত্রে ডেভলপাররা এটি নিশ্চিত করছেন যেন একটি এলিভেটর সমস্যার সম্মুখীন হলেও অন্যগুলো সচল থাকে।
স্পেস স্টেশন বা স্পেস শাটলের মতোই স্পেস এলিভেটরগুলোর কক্ষপথের বিভিন্ন বস্তু যেমন ধ্বংসাবশেষ বা স্যাটেলাইট এড়ানোর সক্ষমতা প্রয়োজন। এক্ষেত্রে নোঙ্গরকৃত প্লাটফর্মটি স্পেস এলিভেটরকে এসব বস্তু থেকে রক্ষা করার কাজ করবে। বর্তমানে নর্থ আমেরিকান এরোস্পেস ডিফেন্স কমান্ড (North American Aerospace Defense Command-NORAD) ১০ সেন্টিমিটারের (৩.৯ ইঞ্চি) চেয়ে বড় বস্তুগুলো চিহ্নিত করতে পারে। এলিভেটরটিকে সুরক্ষিত করার জন্য এমন একটি ট্র্যাকিং সিস্টেম প্রয়োজন যা প্রায় ১ সেন্টিমিটার আকারের বস্তু পর্যন্তও চিহ্নিত করতে পারবে। এই প্রযুক্তিটি বর্তমানে অন্যান্য স্পেস প্রজেক্টের জন্য ডেভলপমেন্টের আওতায় আছে।
লিফটপোর্টের টম নিউজেন্ট বলেন, “আমাদের পরিকল্পনা হলো সমুদ্রের একটি চলমান প্লাটফর্মে রিবনটিকে নোঙ্গর করা। এতে করে আপনি নোঙ্গরটিকে স্থানান্তর করে রিবনটিকে স্যাটেলাইটের পথ থেকে সরিয়ে আনতে পারেন।”
এই বিচ্ছিন্ন অবস্থান সন্ত্রাসী হামলার ঝুঁকি কমাতে সবচেয়ে বড় কারণ হবে। উদাহরণস্বরূপ, লিফটপোর্টের মতে প্রথম নোঙ্গরটি নিরক্ষীয় প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলে কোন বায়ু বা শিপিং লেন থেকে ৪০৪ মাইল (৬৫০ কিলোমিটার) দূরে অবস্থিত হবে। ফলে এলিভেটরের কেবলমাত্র সামান্য একটি অংশ কোন আক্রমণের নাগালের মধ্যে থাকবে, যা মাত্র ৯.৩ মাইল (১৫ কিলোমিটার) বা এরও কিছু কম। এছাড়াও এলিভেটরটি একটি মুল্যবান বৈশ্বিক সম্পদ হবে এবং সম্ভবত মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ও অন্যান্য বিদেশী সামরিক বাহিনী দ্বারা সুরক্ষিত থাকবে।
স্পেস এলেভেটর এর প্রভাবঃ
স্পেস এলিভেটরের ধারণাটি অনেক ক্ষেত্রেই ট্রান্সকন্টিনেন্টাল রেলপথের সাথে মিলে যায়। এটি এলিভেটর পৃথিবীর সাথে মহাকাশের একটি স্থায়ী সংযোগ তৈরি করবে যা কখনো বন্ধ হবে না। যদিও এটি মহাকাশ ভ্রমণকে দ্রুততর করবে না, তবে এর ফলে মহাকাশ ভ্রমণ আরো সহজ এবং নিয়মিত হবে। এই এলিভেটরের অনেক বড় একটি প্রভাব হল এটি মহাকাশে কার্গো রাখার খরচ অনেকটাই কমিয়ে আনবে। যদিও এটি রাসায়নিকভাবে চালিত স্পেস শাটল থেকে ধীর গতিসম্পন্ন, এটি যাত্রা শুরুর ব্যয়কে প্রতি পাউন্ডে ১০,০০০-২০,০০০ ডলার থেকে কমিয়ে প্রায় ৪০০ ডলারে নিয়ে আসবে।
বিজ্ঞানীরা আশা করছেন, স্পেস এলিভেটর মহাকাশীয় শাটলকে প্রতিস্থাপন করে প্রধান মহাকাশযানের স্থানটি দখল করতে পারবে এবং এটি উপগ্রহ স্থাপনা, পর্যটন, প্রতিরক্ষা সহ আরো অনুসন্ধানের কাজে ব্যবহৃত হবে।
তথ্যসূত্রঃ হাউস্টাফস ওয়ার্ক
তন্ময় দাস/ নিজস্ব প্রতিবেদক