বাংলাদেশের মহাকাশ গবেষণা প্রতিষ্ঠানটির নাম বাংলাদেশ মহাকাশ গবেষণা ও দূর অনুধাবন প্রতিষ্ঠান (সংক্ষেপে স্পারসো SPARRSO)।
মহাকাশ নিয়ে গবেষণা করে এমন সংস্থা হিসেবে নাসা, ইসরো কিংবা ইউরোপিয়ান স্পেস এজেন্সির নাম আমরা কমবেশি সবাই জানি। কিন্তু বাংলাদেশেও এমন একটি মহাকাশ গবেষণা প্রতিষ্ঠান আছে, যার সম্পর্কে বিস্তারিত হয়তো আমরা অনেকেই জানি না। চলুন আজ আমাদের নিজেদের দেশের মহাকাশ গবেষণা সংস্থাটি সম্পর্কে জেনে নিই।
ঢাকার আগারগাঁও-এ অবস্থিত প্রতিষ্ঠানটি ১৯৮০ সালে প্রতিষ্ঠিত হয়।বাংলাদেশের ঘূর্ণিঝড় ও অন্যান্য প্রাকৃতিক দুর্যোগের পূর্বাভাস প্রদানে এই কেন্দ্র গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। সংস্থাটি LANDSAT ও NOA নামক কৃত্রিম উপগ্রহ ব্যবহার করে ভূমি জরিপে নিয়োজিত। বাংলাদেশের স্যটেলাইট ইমেজারি গুলো স্পারসোর তত্ত্বাবধানে থাকে। আচ্ছা, এখন এর ইতিহাস নিয়ে একটু কথা বলা যাক।
১৯৬৮ সালে পূর্ব পাকিস্তানের পরমাণু শক্তি কেন্দ্রে অটোমেটিক পিকচার ট্রান্সমিশন (Automatic Picture Transmission-APT) গ্রাউন্ড স্টেশন স্থাপনার মাধ্যমে বাংলাদেশ মহাকাশ প্রযুক্তির জগতে প্রবেশ করে। এই গ্রাউন্ড স্টেশনের মাধ্যমে আবহাওয়া উপগ্রহ থেকে সরাসরি প্রকৃত আবহাওয়ার চিত্র লাভ করা হতো। ১৯৭২ সালে যুক্তরাষ্ট্রের নাসা (NASA) কর্তৃক ভূ-উপগ্রহ Earth Resources Technology Satellite (ERTS) উৎক্ষেপিত হয়।
স্বাধীনতার পর বাংলাদেশে সরকারও দেশের প্রাকৃতিক সম্পদ জরিপ, পরিবেশ, দুর্যোগ পর্যবেক্ষণ ও ব্যবস্থাপনায় এ প্রযুক্তি ব্যবহারের নিমিত্ত Bangladesh ERTS Programme নামে একটি প্রকল্প গ্রহণ করে। এ প্রকল্পের আওতায় গৃহীত কর্মসূচীর সফলতার ধারাবাহিকতায় ১৯৭৫ সালে Bangladesh Landsat Programme (BLP) পঞ্চবার্ষিকী পরিকল্পনায় অন্তর্ভূক্ত হয়।
পরবর্তীকালে ১৯৮০ সালে Bangladesh Atomic Energy Commission এর Space and Atmospheric Research Centre (SARC) এবং BLP একীভূত করে Bangladesh Space Research and Remote Sensing Organization (SPARRSO) গঠিত হয়। মহাকাশ বিজ্ঞান ও দূর অনুধাবন প্রযুক্তির সর্বোত্তম ব্যবহার এবং এই প্রযুক্তির উপর গবেষণা, এর যথাযথ প্রয়োগ ও সম্প্রসারণের পদক্ষেপ হিসাবে গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশের জাতীয় সংসদ কর্তৃক স্পারসো পুনঃগঠিত হয়।
স্পারসোর ভিশন হচ্ছে-মহাকাশ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি জ্ঞান অর্জন এবং শান্তিপূর্ণ ব্যবহারের মাধ্যমে জনগণের জীবনমান উন্নয়ন তথা জাতীয় উন্নয়নে অবদান রাখা।
স্পারসোর মিশন হচ্ছে –
★মহাকাশ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি ব্যবহার করে জলবায়ু পরিবর্তন, কৃষি, বন, সমুদ্রবিজ্ঞান, মহাকাশ ও বায়ুমন্ডল, পানিসম্পদ বিষয়ে গবেষণা ও উন্নয়নের মাধ্যমে নিজস্ব সক্ষমতা অর্জন এবং প্রাকৃতিক দুর্যোগ পরিবীক্ষণ ও পূর্বাভাস প্রদান।
★ দেশে মহাকাশ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিকাশে দক্ষ মানব সম্পদ উন্নয়ন এবং আঞ্চলিক ও আন্তর্জাতিক সহযোগিতামূলক কার্যক্রমে অংশগ্রহণ।
স্পারসোর প্রধান কার্যক্রমগুলোর মধ্যে রয়েছে -দেশের প্রাকৃতিক সম্পদ জরিপ এবং পরিবেশ ও প্রাকৃতিক দূর্যোগ পর্যবেক্ষণের জন্য মহাকাশ ও দূর অনুধাবন প্রযুক্তি ব্যবহার,জাতীয় অর্থনীতির বিভিন্ন ক্ষেত্রে প্রয়োগ উপযোগী উপগ্রহ ও বিমানচিত্র লব্ধ উপাত্তের সংগ্রহ, স্যাটেলাইট গ্রাউন্ড রিসিভিং স্টেশনসমূহকে পরিচালনা ও রক্ষণাবেক্ষণ করা,দেশে মহাকাশ ও দূর অনুধাবন কার্যক্রম পরিচালনার কেন্দ্র হিসেবে ভূমিকা পালন করা এবং মহাকাশ বিজ্ঞান ও দূর অনুধাবন প্রযুক্তি বিষয়ে জাতীয়, আঞ্চলিক ও আন্তর্জাতিক নীতি প্রণয়নে সরকারকে প্রয়োজনীয় তথ্য ও উপাত্ত সরবরাহ করা এবং মহাকাশ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির শান্তিপূর্ণ ব্যবহার নিশ্চিত করার লক্ষ্যে আঞ্চলিক ও আন্তর্জাতিক সহযোগিতা বৃদ্ধির জন্য করা ইত্যাদি।
বিজ্ঞানী, কারিগর ও অন্যান্য সাধারণ কর্মকর্তা মিলিয়ে স্পারসোর মোট জনশক্তি সংখ্যা ১৯৪। এছাড়াও স্পারসোর রয়েছে একটি সমৃদ্ধ গ্রন্থাগার, যাতে বিভিন্ন বিষয়ের ওপর ৫,০০০-এরও অধিক বই রয়েছে। গ্রন্থাগারে মহাকাশ বিজ্ঞান ও দূর অনুধাবন প্রযুক্তির ওপর অনেক দেশি-বিদেশী জার্নাল ও সময়িকী পাওয়া যায়। স্পারসো নিয়মিত বার্ষিক প্রতিবেদন, ত্রৈমাসিক নিউজ লেটার এবং দূর অনুধাবন সাময়িকী নামে একটি বাংলা পত্রিকা প্রকাশ করে। এই প্রকাশনাসমূহ দেশে ও বিদেশে প্রচারিত হয়। পাশাপাশি নাসা, ইউরোপিয়ান স্পেস এজেন্সির কত বিভিন্ন সংস্থার সাথে যৌথ ভাবে কাজ করার অভিজ্ঞতাও আছে স্পারসোর!
স্পারসোর উল্লেখযোগ্য কার্যক্রমগুলোর মধ্যে একটি হলো বঙ্গবন্ধু-১ বাংলাদেশের প্রথম কৃত্রিম উপগ্রহ প্রকল্প। এটি বাস্তবায়নে কাজ করেছে স্পারসো ও বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ কমিশন। Agro-Climatic Environmental Monitoring Project (ACEMP) এর সাফল্যজনক সমাপ্তির জন্য স্পারসো ১৯৮৬ সালে National Aeronautic & Space Administration (NASA), USA থেকে ‘Group Achievement Award’ লাভ করে। আমাদের অজান্তেই স্পারসো অনেক কাজ করে যাচ্ছে।
আশা রাখি, ভবিষ্যতে মহাকাশ গবেষণার দিক দিয়ে আমরা অনেকদূর এগিয়ে যাবো। স্পারসোর হাত ধরেই হয়তো একদিন আমরা পৃথিবীর সীমানা ছাড়িয়ে পৌঁছে যাবো দূর মহাকাশে।
স্পারসোর সম্পর্কে আপনার মতামত কী? পাশাপাশি আপনার পছন্দের মহাকাশ গবেষণা সংস্থা কোনটি? কমেন্টে জানাতে ভুলবেন না।
Tanjina Sultana Shahin | Team Science Bee