মানুষ সমাজে বসবাসকারী সামাজিক জীব হলেও আমরা অনেকেই জনসম্মুখে কথা বলতে বা অপরিচিতদের সাথে মিশতে অস্বস্তি বা বিব্রতবোধ করি। এমনটা কম বেশি সবারই হয়। কিন্তু অনেকের ক্ষেত্রে এই অস্বস্তি ভয়াবহরূপ ধারণ করে এবং সৃষ্টি হয় ভয়। একে বিজ্ঞানের ভাষায় বলে সোশ্যাল ফোবিয়া। সোশ্যাল ফোবিয়া- Social Phobia (এটি সামাজিক ভীতি নামেও পরিচিত) সবচেয়ে সাধারণ মানসিক রোগগুলির একটি।
সোশ্যাল ফোবিয়া, এক ধরনের উদ্বেগ, বিশৃঙ্খলা যা সামাজিক পরিবেশে চরম ভয়ের সৃষ্টি করে। যারা সোশ্যাল ফোবিয়ায় আক্রান্ত তাদের অপরিচিত কারো সাথে কথা বলতে, নতুনদের সাথে দেখা করতে এবং সামাজিক সমাবেশে যোগ দিতে সমস্যা হয়। সোশ্যাল ফোবিয়া লজ্জা থেকে আলাদা, লজ্জা সাধারণত স্বল্পমেয়াদী এবং কারো জীবনে ব্যাঘাত করে না।
সোশ্যাল ফোবিয়া (Social Phobia) বা সামাজিক ভীতির সঠিক কারণ এখনো অজানা, তবে বর্তমানে এই ধারণাকে সমর্থন করা হয় যে এটি পরিবেশগত উপাদান এবং জেনেটিক্সের সমন্বয়ের কারণে হয়ে থাকে। নেতিবাচক অভিজ্ঞতা সোশ্যাল ফোবিয়ায় অবদান রাখতে পারে, যার মধ্যে রয়েছে নির্যাতন, পারিবারিক দ্বন্দ্ব, যৌন নির্যাতন ইত্যাদি।
ধারণা করা হয়, শারীরিক অস্বাভাবিকতা (যেমন সেরোটোনিন ভারসাম্যহীনতা) এই অবস্থার একটি কারণ। সেরোটোনিন মস্তিষ্কের একটি রাসায়নিক উপাদান যা মেজাজ নিয়ন্ত্রণ করতে সাহায্য করে। অতিরিক্ত সক্রিয় অ্যামিগডালা (মস্তিষ্কের একটি কাঠামো যা ভয়ের প্রতিক্রিয়া এবং অনুভূতি বা উদ্বেগের চিন্তা নিয়ন্ত্রণ করে) সোশ্যাল ফোবিয়ার কারণ হতে পারে।
সামাজিক উদ্বেগ চিকিৎসার সবচেয়ে ভাল উপায় জ্ঞানীয় আচরণগত থেরাপি বা ঔষধের মাধ্যমে কিংবা উভয়ই। সোশ্যাল ফোবিয়ায় আক্রান্ত একজনের সাধারণত ১২ থেকে ১৬টি থেরাপি সেশনের প্রয়োজন হয়। এর মূল লক্ষ্য হচ্ছে আত্মবিশ্বাস গড়ে তোলা, দক্ষতা শেখানো যা যেকোনো পরিস্থিতিতে মানিয়ে নিতে সাহায্য করে এবং তারপর সামাজিক সমাবেশ বা পরিবেশে প্রবেশ করতে সাহায্য করে।
দলগত কাজ সোশ্যাল ফোবিয়ার থেরাপির চাবিকাঠি। রোগী এবং তার থেরাপিস্ট একসাথে কাজ করবেন। থেরাপিস্ট রোগীর নেতিবাচক চিন্তা সনাক্ত করতে এবং সেগুলো পরিবর্তন করতে শুরু করবেন, অতীতে যা ঘটেছে তার পরিবর্তে রোগীকে বর্তমানের দিকে মনোযোগ দিতে হবে। রোগী তার থেরাপির অংশ হিসেবে সামাজিক দক্ষতার প্রশিক্ষণ গ্রহন করতে পারে এবং যদি সে জনসম্মুখে কথা বলার শিক্ষা পায় অথবা সামাজিক সমাবেশে কিভাবে পরিভ্রমণ করতে হয় তা শিখতে পারে তাহলে রোগী সেশনের মধ্যে একাই অনুশীলন করবে।
ওষুধ এবং থেরাপি উভয়ই সোশ্যাল ফোবিয়ার চিকিৎসায় কার্যকর। সোশ্যাল ফোবিয়া যে সব পরিস্থিতিতে ঘটে তা ওষুধ এবং থেরাপির সমন্বয়ে সবচেয়ে ভালো ফল দেয়, অন্যদিকে থেরাপি প্রায় সামাজিক পরিস্থিতিতে উদ্বিগ্ন ব্যক্তিদের জন্য যথেষ্ট।
সাদিয়া মীম/ নিজস্ব প্রতিবেদক