এ পর্যন্ত পাওয়া সবচাইতে ক্ষুদ্র ডাইনোসর হলো– একটি পাখির মতো প্রাণী যার ওজন এক আউন্সের দশ ভাগেরও কম – অ্যাম্বারের একটি ফোঁটার ভিতরে একে আবিষ্কার করা হয়েছিল, যেখানে এটি ৯৯ মিলিয়ন বছর ধরে সংরক্ষণ করা হয়েছিল।
ওকুলুডেন্টাভিস (Oculudentavis) হিসেবে আখ্যায়িত করা নতুন প্রজাতিটির জীবাশ্মের খুলি মাত্র আধ ইঞ্চি লম্বা এবং গবেষকরা মনে করেন প্রাণিটি বি হামিংবার্ডের চেয়ে ছোট ছিল, এটি এখন অবধি জানা সবচেয়ে ছোট আধুনিক পাখি ।
বেইজিং এর চাইনিজ একাডেমী অফ সায়েন্সেস ইন্সটিটিউট অফ ভারটিব্রাটা প্যালিওন্টোলজি এন্ড প্যালিওনথ্রোলজি এর একজন প্যালিওনটোলজিস্ট এবং নতুন ডাইনোসরটি গবেষণায় একজন বিজ্ঞানী জিংমাই ও’কনোর বলেন, “এটি সত্যিই ক্ষুদ্রকায় এবং এটি শুধু একাধিক স্তরে বিচিত্র।”
ডাইনোসর বিশেষজ্ঞরা সেই বিচিত্র বিষয়টির প্রতি বিশেষভাবে আগ্রহী, কারণ ডাইনোসরটিও একটি আদিম পাখি কিনা তা নিয়ে এখনও একটি প্রশ্ন রয়েছে।
আধুনিক পাখিগুলো উড়ন্ত ডাইনোসর থেকে বিকশিত হয়েছিল, তবে কেবলমাত্র অবশিষ্ট খুলি দিয়েও গবেষকরা বলেছেন যে ওকুলুডেন্টাভিস আধুনিক পাখির চেয়ে খুব আলাদা। “এটি একটি নতুন বাস্তুসংস্থান, এর আগে কখনো এমন দেখা যায়নি” ও’কনএ বলেছিলেন।
হামিংবার্ডগুলি বেশীরভাগ ফুল থেকে নেক্টার খেয়ে থাকে, তবে ওকুলুডেন্টাভিসের সারি ধারালো দাঁত ছিল এবং সম্ভবত তারা পোকামাকড় খেতো।
মাথার খুলিতে বড় বড় চোখের মধ্যে ছোট পিউপিল রয়েছে, তাই ডাইনোসর সম্ভবত ভাল দৃষ্টিশক্তি পেয়েছিল এবং দিনের বেলা শিকার করে বেড়াতো।
তবে এর চোখ আধুনিক পাখির মতো সামনের দিকে পয়েন্ট করতে পারেনা। তার পরিবর্তে ওকুলুডেন্টাভিসের চোখগুলো চোখের পাশের দিকে ছড়িয়ে থাকতো এবং এদের কোনো বাইনোকুলার ভিশন ছিল না, গবেষকরা আবিষ্কার করেন।
ও’কনোর বলেছিলেন যে তিনি মনে করেন “ওকুলুডেন্টাভিস” প্রজাতি দ্বীপগুলিতে বাস করার জন্য এদের ক্ষুদ্র আকারটি বিবর্তিত হয়। এই হিসেবে, প্রায় ৯৯ মিলিয়ন বছর আগে এরা কিছু বিশালাকার ডাইনোসরগুলির সাথে একই সময়ে বাস করেছিল তবে সম্ভবত একই জায়গায় ছিল না।
এরকম ক্ষুদ্রায়ন ,যা অন্তর্নিহিত বা দ্বীপ বামনবাদ নামে পরিচিত কোনও দ্বীপের সীমিত খাদ্য উৎসের প্রতিক্রিয়া হতে পারে এবং এটি আধুনিক প্রাণীদের মধ্যে দেখা যায়। “বী হামিংবার্ড কিউবা থেকে এসেছে, ক্ষুদ্রতম মেরুদন্ডী একটি ছোট ব্যাঙ এসেছে মাদাগাস্কার থেকে”, ও’কনর বলেছেন।
২০১৬ সালে উত্তর মায়ানমারে অ্যাম্বারের একটি ব্লকের ভিতরে ওকুলুডেন্টাভিসের জীবাশ্ম পাওয়া যায় – অ্যাম্বার হচ্ছে প্রাচীন গাছের শুকনো রেজিন। এটি প্যালেওনটোলজিস্টগণ দ্বারা গবেষণা করার পূর্বে চীনের একটি মিউজিয়ামে রাখা হয়েছিল।
অ্যাম্বারটি অক্ষত রেখে বিজ্ঞানীরা শক্তিশালী এক্স-রে দিয়ে জীবাশ্মটির বিস্তারিত স্ক্যান করতে সক্ষম হয়েছিলেন, জানান লস এঞ্জেলেস কাউন্টির ন্যাচারাল হিস্টোরী মিউজিয়ামের পেলিউওন্টোলজিস্ট লুই চিয়াপ্পে।
ওকুলুডেন্টাভিস হচ্ছে সেইসব অ্যাম্বারে প্রাপ্ত ডাইনোসরের জীবাশ্মের মধ্যে একটি যেগুলো গবেষকরা পুনরুদ্ধার করতে পেরেছিলেন। চিয়াপ্পে বলেন, পাথরের মধ্যে জীবাশ্ম প্রক্রিয়ায় সাধারণত শুধুমাত্র বৃহত্তর প্রাণীদের সংরক্ষণ করা হয়।
“অ্যাম্বারের খুব ছোট প্রাণী ধারণ করার সম্ভাবনা রয়েছে”, তিনি জানান। “ এটি ডাইনোসরদের যুগে জীববৈচিত্রের এমন অংশের দুয়ার খুলে দেয় যেটি সাধারণ জীবাশ্মের রেকর্ডে ধারণ করেনা।”
অন্য কিছু ডাইনোসর বিশেষজ্ঞ জীবাশ্ম এবং এটি যেই ধারণা দেয় সেগুলোও বিস্মিত হয়েছেন। যদিও গবেষকরা নিশ্চিত নন যে ওকুলুডেন্টাভিস একটি আদিম পাখি ছিল কিনা– বা একটি উড়ন্ত ডাইনোসর , অন্য ভাষায়– তবুও এই সিদ্ধান্তে পৌঁছেছেন এটির মাথার খুলির আকারের ভিত্তিতে।
“এটি একটি অত্যন্ত আকর্ষণীয় জীবাশ্ম”, জার্মানি ফ্রাংকফ্রুটের সেনকেনবারগ গবেষণা ইন্সটিটিউটের প্যালেওনটোলজিস্ট জেরাল্ড মেয়ার বলেন, তিনি এই নতুন গবেষণার সাথে জড়িত নন। “গবেষণাপত্র লেখকেরা যদি এটি একটি পাখির খুলি হিসেবে সঠিক হন তবে এটি আমাদের এভিয়ান বিবর্তন সম্পর্কে উপলব্ধিতে যে এখনো অসম্পূর্ণতা আছে সেটি নির্দেশ করে।”
নাহিদ সুলতানা তুলি/ নিজস্ব প্রতিবেদক