প্রযুক্তির অসামান্য বিকাশের সাথে সাথে পাল্টে গেছে আইনশৃংখলা রক্ষাকারী বাহিনীর কার্যক্রমও। এখন আর লাঠি, হুইসেল নিয়ে জনগণকে সচেতন করার কাজে থেমে নেই পুলিশ, এসেছে প্রযুক্তির ছোঁয়া! উদাহরণ হিসেবে তিউনিসিয়ার রাজধানী তিউনিসের কথাই ধরা যাক, সেখানকার পুলিশ করোনা প্রেক্ষাপটে লকডাউন নিশ্চিতকল্পে হাতে নিয়েছে ব্যাতিক্রমী এক উদ্যোগ, রোবট পুলিশের ব্যবস্থা করেছে তারা!
রাজধানী তিউনিসের রাস্তায় কোন ব্যক্তি বের হলে তাকে দূর নিয়ন্ত্রিত এই রোবটের কাছে পরিচয়পত্র আর বের হওয়ার কারণ জানাতে হবে। অন্যথায় গুণতে হবে মোটা অংকের জরিমানা!
রোবটিক যন্ত্র হলেও এটি সম্পূর্ণ স্বয়ংক্রিয় নয়। মূলত পুলিশ কন্ট্রোল রুমে বসে থাকা একজনের মাধ্যমে পরিচালিত হয় এই রোবট। যাতে রয়েছে কয়েকটি একশন মোটর, সুপার হাইভিশন ক্যামেরা, থার্মাল স্ক্যানার, চাকা, মাইক্রোফোন – যার মাধ্যমে মানুষকে প্রয়োজনীয় নির্দেশনা দেওয়া যায়।
ভাইরাস সংক্রমণের শিকার দেশটি লকডাউনের চতুর্থ সপ্তাহ পার করছে। ইতিমধ্যে সেখানে ৩৫ জন করোনাভাইরাস সংক্রমণে মারা গেছেন। দেশটিতে সবাইকে বাড়িতে থাকতে বলা হলেও ওষুধসহ জরুরি প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র কিনতে বাইরে যাওয়ার সুযোগ রয়েছে।
বার্তা সংস্থা এএফপি জানিয়েছে, তিউনিসিয়ার স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এ ধরনের কত রোবট ‘পি-গার্ড’ মোতায়েন করেছে, সে তথ্য প্রকাশ করেনি। ইভোনা রোবোটিকসের তৈরি রোবটগুলোর দামও প্রকাশ করা হয়নি। এর নির্মাতারা বলছেন, রোবট মোতায়েন ও দামবিষয়ক তথ্যগুলো তাদের গোপনীয়। চারটি চাকাযুক্ত পি–গার্ড রোবটে থার্মাল-ইমেজিং ক্যামেরা ও লাইট ডিটেকটিং অ্যান্ড রেঞ্জিং (লিডার) প্রযুক্তি রয়েছে। এতে বেতার তরঙ্গের পরিবর্তে আলোকতরঙ্গ ব্যবহার করে রাডারের মতো কাজ করে।
অনেকেই রোবট মোতায়েনের বিষয়টিকে স্বাগত জানিয়েছেন। কেউ কেউ অবশ্য একে বাস্তবিক কাজের ক্ষেত্রে অনেক ধীরগতির বলে মন্তব্য করেছেন।
করোনা আপডেট |
সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যমে ওই রোবটের কার্যক্রমের কিছু ভিডিও ছড়িয়ে পড়েছে। একটি ভিডিওতে দেখা যায়, রোবটটি এক ব্যক্তিকে প্রশ্ন করেছে, তিনি কেন বাইরে এসেছেন? লকডাউনের বিষয়ে তিনি কিছু জানেন কি না? এর জবাবে ওই ব্যক্তি সিগারেট কিনতে বাইরে বের হওয়ার কথা বলেছেন। রোবটটি অবশ্য তাতে বাধা দেয়নি। দ্রুত কাজ সেরে বাসায় ফিরে যেতে বলেছে।
করোনাভাইরাস সংক্রমণের আগে বিভিন্ন ব্যক্তিমালিকানাধীন প্রতিষ্ঠান ইভোনার গ্রাহক ছিল। এখন চিকিৎসা খাতে প্রয়োজনীয় রোবট তৈরির কাজ করছে প্রতিষ্ঠানটি, জানান প্রতিষ্ঠানটির প্রধান বিক্রয় কর্মকর্তা রাদুহান বেন ফারহাত।
চীনে করোনাভাইরাস ছড়ানোর পর থেকে সেখানে রোবোটিক প্রযুক্তি ও আর্টিফিশিয়াল ইনটেলিজেন্সের ব্যবহার বাড়তে দেখা গেছে। চীন এবং কোরিয়া কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা ব্যবহার করে আক্রান্ত ব্যক্তির ভ্রমণ বৃত্তান্ত ঘেটে সে যেসকল স্থানে ভ্রমণ করেছে তার আশেপাশের এলাকা লকডাউন এবং মানুষকে কোয়ারেন্টাইন করার মাধ্যমে খুব দ্রুত এই মহামারী নিয়ন্ত্রণে নিয়ে আসে।
এ এন এম নাইম / নিজস্ব প্রতিবেদক