মাশরুম একপ্রকার ভোজ্য ছত্রাক। এটি উদ্ভিদ ও প্রাণি উভয় ধরনের খাবারে পুষ্টি সরবরাহ করে। মাশরুমে প্রোটিন, ভিটামিন, খনিজ এবং অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট রয়েছে। অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট হলো একপ্রকার রাসায়নিক পদার্থ যা শরীর থেকে বিপাকীয় প্রক্রিয়ায় তৈরি বর্জ্য পদার্থ নিষ্কাশনে সহায়তা করে। আমাদের শরীরে যদি খুব বেশি পরিমাণে বর্জ্য পদার্থ জমা হয় তাহলে শরীরের কোষগুলোর ক্ষতি হতে পারে। মাশরুমে উল্লেখযোগ্য কিছু অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট রয়েছে। যেমন- সেলেনিয়াম, ভিটামিন সি, কোলিন।
গবেষণায় দেখা যায়, মাশরুমের মূল উপাদান হচ্ছে হ্যালুসিনোজেনিক এবং সিলোসাইবিন। এই দুটি উপাদান খুব দ্রুত হতাশাগ্রস্ত ব্যক্তির হতাশা হ্রাস করতে সহায়তা করে। সাম্প্রতিক একটি গবেষণায় দেখা যায়, বাজারে প্রচলিত অ্যান্টিডিপ্রেসেন্ট ঔষুধের তুলনায় মাশরুম অধিক কার্যকারি। কারণ, বেশির ভাগ সময় ঔষুধ গ্রহণের ফলে বিভিন্ন ধরনের পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া দেখা যায়। কিন্তু নিয়মিত মাশরুম গ্রহণ করলে শরীরে কোনো নেতিবাচক প্রভাব পড়ে না, বরং দ্রুত হতাশা হ্রাস পায় স্ট্রেস নিয়ন্ত্রণেও ভূমিকা রাখে।
সম্প্রতি প্রকাশিত Food Science & Nutrition এর একটি গবেষণায় দেখা যায়, ডায়েটে মাশরুম যোগ করার ফলে ক্যালরি, সোডিয়াম বা ফ্যাট বৃদ্ধি ছাড়াই ভিটামিন D এর ঘাটতি পূরণের পাশাপাশি মাইক্রোনিউট্রিয়েন্ট গ্রহণ ও বৃদ্ধি পায়। ডায়েটে ৮৪ গ্রাম মাশরুম যোগ করার ফলে পটাসিয়াম এবং ফাইবারের গুণাগুণ বৃদ্ধি পায়। যেমন -ফাইবার বৃদ্ধি পায় ৫-৬%, তামা ২৪-৩২%, ফসফরাস ৬%, পটাসিয়াম ১২-১৪%, সেলেনিয়াম ১৩-১৪%, দস্তা ৫-৬%, রাইব্রোফ্লাভিন ১৩-১৫%, নিয়াসিন ১৩-১৪% এবং কোলিন ৫-৬%। এগুলো ক্যালরি, কার্বোহাইড্রেট্রেট, ফ্যাট বা সোডিয়ামের উপর কোনো প্রভাব ফেলে নি।
২o১৫ সালে কৃষি বিপণন সংস্থার গবেষণা অনুসারে, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে প্রতিটি ব্যক্তি গড়ে প্রায় ৩ পাউন্ড মাশরুম সেবন করতো। দেশজুড়ে গ্রাহকদের মাঝে সচেতনতা বৃদ্ধি করার জন্য ২o১৯ সালে মাশরুম কাউন্সিল খাদ্যের পুষ্টি গুণাবলি বৃদ্ধি ও সামগ্রিক স্বাস্থ্য উন্নতির জন্য গবেষণায় ১.৫ মিলিয়ন ডলার বিনিয়োগ করে।
জাতীয় ক্যান্সার ইনস্টিটিউটের দেওয়া তথ্য অনুযায়ী, মাশরুমে থাকা অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট সামগ্রিক ফুসফুস, প্রস্টেট, স্তন ক্যান্সার প্রতিরোধে সহায়তা করে। মাশরুমে ডায়েট্রি ফাইবারগুলো টাইপ-২ ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে সহায়তা করে। ২o১৮ সালের একটি গবেষণায় দেখা যায়, যেসকল ব্যক্তি প্রচুর পরিমাণে আঁশ জাতীয় খাবার খায় তাদের টাইপ-২ ডায়াবেটিস হওয়ার ঝুঁকি কম থাকে। আর যাদের ইতোমধ্যে ডায়াবেটিস হয়েছে, তাদের রক্তে গ্লুকোজের মাত্রা হ্রাস করতে সহায়তা করে। মাশরুমে থাকা ফাইবার, পটাসিয়াম, ভিটামিন C কার্ডিওভাসকুলার সিস্টেম উন্নত রাখতে খুবই সহায়ক। পটাসিয়াম রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণ করার পাশাপাশি উচ্চ রক্তচাপ এবং কার্ডিওভাসকুলার রোগের ঝুঁকি হ্রাস করে।
আমেরিকান হার্ট এসোসিয়েশন খাদ্য তালিকায় যৌগ লবণের পরিবর্তে পটাসিয়াম সমৃদ্ধ খাদ্য যুক্ত করার নির্দেশনা দেয়। প্রতিবেদন অনুসারে জানা যায়, একজন ব্যক্তির প্রতিদিন প্রায় ৪৭oo মিলিগ্রাম পটাসিয়াম গ্রহণ করা উচিত। মাশরুমের কান্ড বিটা-গ্লুকোজের ভালো উৎস। এটি রক্তে কোলেস্টেরলের মাত্রা কমাতে সহায়তা করে।
গর্ভাবস্থায় মহিলারা ভ্রূণের স্বাস্থ্য উন্নত রাখতে ফলিক এসিড বা ফোলেট গ্রহণ করে। তখন যদি তারা ফলিক এসিডের চাহিদা পূরণ করার জন্য মাশরুম গ্রহণ করে তাহলে অনেক বেশি উপকৃত হতে পারে। এক কাপ মাশরুমে ১৬.৩ মাইক্রোগ্রাম ফোলেট থাকে। তাই প্রাপ্ত বয়স্ক ব্যক্তির প্রতিদিন ৪oo মাইক্রোগ্রাম ফোলেট গ্রহণ করা উচিত। মাশরুম ভিটামিন B সমৃদ্ধ। যেমন-রিবোফ্লাভিন বা B-2, ফোলেট বা B-7, থিয়ামিন বা B-1, পেন্টোথেনিক এসিড বা B-5, নিয়াসিন বা B-3 থাকে।
স্বাস্থ্যকর মস্তিষ্ক গঠনেও ভিটামিন B খুবই গুরুত্বপূর্ণ। কারণ, ভিটামিন-B শরীরকে খাদ্য থেকে শক্তি গ্রহণ করতে এবং লোহিত রক্তকণিকা গঠনে সহায়তা করে। মাশরুমে উপস্থিত কোলিন পেশির গতিবিধি নিয়ন্ত্রণ করে এবং স্মৃতিবৃদ্ধিতে সহায়তা করে।
মাশরুম যেহেতু পুষ্টিগুণে ভরপুর, তাই এটি খাবারে যুক্ত করলে খাবার আরও বেশি পুষ্টিকর এবং সুস্বাদু হয়। তবে কিছু বিষাক্ত মাশরুম রয়েছে, সেগুলো যদি আমরা গ্রহণ করি তাহলে উপকার না হয়ে বরং ক্ষতিই হয়। তাই আমাদের সতর্ক হয়ে মাশরুম গ্রহণ করা উচিত।
আমেনা আঁখি/ নিজস্ব প্রতিবেদক
তথ্যসূত্রঃ মেডিক্যাল নিউজ টুডে, সাইন্সটেক ডেইলি, সাইন্স নিউজ