মার্কিন মহাকাশ সংস্থা (নাসা) একটি অ্যানিমেশন প্রকাশ করেছে, যেটাতে দেখানো হয়েছে যে ১৮ ফেব্রুয়ারি কিভাবে তাদের মার্স রোভার “Perseverance” মঙ্গল গ্রহে ল্যান্ড করতে যাচ্ছে।
রোবটটি মঙ্গলে পাঠানোর উদ্দেশ্য হলো, সেখানে থাকা জেজেরো (Jezero) নামক এক গর্তে অনুসন্ধান করা, সেখানে অতীতে কোনো প্রাণ ছিল কী না তার প্রমাণ সংগ্রহ করা। কিন্তু এই বিষয়টি সম্ভব করতে হলে, সবার আগে রোবটটিকে নিরাপদে মঙ্গলের মাটিতে অবতরণ করতে হবে।
Perseverance-এর মঙ্গল গ্রহে অবতরণের জন্য যে প্রোগ্রামটা করা হয়েছে, নাসা তার নাম দিয়েছে “সেভেন মিনিট’স অফ টেরর“- এবং সঙ্গত কারণেই এমন অদ্ভুত নামকরণ!
এই এতটুকু সময়ের মাঝে অসংখ্য রিস্ক ফ্যাক্টর সামলে রোভারটিকে মঙ্গলের মাটিতে নিরাপদ ল্যন্ডিং করতে হবে, এবং এর পরবর্তী মিশন হলো রেড প্ল্যানেটে একটি খুব বড় এবং ব্যয়বহুল গর্ত খনন করা ও তার মাঝে প্রাণের প্রমাণ খোঁজা।
অবতরণের সময় পৃথিবী ও মঙ্গলগ্রহের মধ্যাকার দুরত্ব থাকবে 209 মিলিয়ন কিলোমিটার (১৩০ মিলিয়ন মাইল), অ্যানিমেশনটিতে আপনি পৃথিবী থেকেই সম্ভাব্য প্রতিটি মুহুর্তের মুভমেন্ট গুলো দেখতে পাচ্ছেন যা পৃথিবীথেকেই অন-বোর্ড কম্পিউটার দ্বারা নিয়ন্ত্রিত।
অ্যানিমেশনটির শুরু হয়েছে মঙ্গলগ্রহের 100 কিলোমিটারেরও বেশি উপর থেকে, যেখানে Perseverance রোভারটি মঙ্গলের বায়ুমণ্ডলে দিকের মুখোমুখি হয়ে প্রবেশ করবে।
এই মুহুর্তে যানটি তার প্রতিরক্ষামূলক ক্যাপসুলে করে 20,000 কিলোমিটার/ ঘন্টা (12,000mph) বেগে মঙ্গলের দিকে ছুটে যাচ্ছে। এবং অবতরণের আগে প্রায় ৪০০ সেকেন্ড সময়ের মাঝে এই গতিবেগকে ১মি/সে. নামিয়ে আনতে হবে, এবং এর মূল কাজটি সম্পন্ন করবে হিট শিল্ড। বায়ুমণ্ডলের ভেতরে প্রবেশের পর হিট শিল্ডটি ১০০০° C এর চেয়েও বেশি তাপমাত্রায় উত্তপ্ত হয় ও একই সাথে অবতরণের বেগ কমাতে থাকে।
পরিকল্পনা মতে, প্রোটেক্টিভ ক্যাপসুলের ব্যাকশেল থেকে সুপারসনিক প্যারাস্যুটটি খোলার সময় বেগ কমিয়ে আনা হবে ১২০০কিমি/ঘন্টায়। আর এর 21.5 মিটার প্রশস্ত প্যারাসুটটি মাত্র এক মিনিটের জন্য ব্যবহৃত হবে, সেই সময়ের মাঝে Perseverance অবতরণ করবে।
তবে সবচেয়ে জটিল পর্যায়গুলি এখনও বাকি রয়েছে।
2 কিলোমিটার উচ্চতায় 100 মি/সেকেন্ডে গতিতে যাওয়ার সময়- মার্স রোভার এবং এর “স্কাইক্রেন” ব্যাকশেল থেকে পৃথক হয়ে পড়ে যাবে।
তারপরে আটটি রকেট রোভারটিকে মঙ্গলের পৃষ্ঠের উপরে ওঠানামা করার জন্য সমতল অবস্থানে নিয়ে আসবে, এবং নাইলন কর্ডগুলি এই বহু-বিলিয়ন ডলার চাকাযুক্ত যানটি মাটিতে নামিয়ে আনবে।
তবে এখানেই শেষ নয়,
যখন Perseverance সেন্সর এর মাধ্যমে ল্যান্ডিং নিশ্চিত করবে তখন সাথে সাথেই নাইলন কর্ড গুলো কেটে ফেলতে হবে, নইলে তা উল্টো টানে পেছন দিকে যেয়ে পড়তে পারে।
বিষয়টি দেখতে অনেকটা একইরকম, যেমনটা আট বছর আগে মঙ্গল গ্রহের পৃষ্ঠে নাসার শেষ রোভার, কিউরিওসিটি স্থাপন করতে ব্যবহৃত হয়েছিল। যাইহোক, এখন প্রযুক্তি আরও উন্নত, সুনির্দিষ্টভাবে ল্যান্ডিং জোনে Perseverance-কে নামিয়ে আনার জন্য নেভিগেশন সরঞ্জামগুলোও আরো উন্নত করা হয়েছে।
১৮ই ফেব্রুয়ারি, মঙ্গলের স্থানীয় সময়, শেষ বিকেলে এটি মঙ্গলের ভুমি স্পর্শ করবে- অর্থাৎ পৃথিবীতে 21:00 GMT এর ঠিক আগে।
অবতরণের দিন, মঙ্গল থেকে পৃথিবীর দূরত্ব অনুসারে সেখান থেকে আসা প্রতিটা রেডিও সিগনাল পৃথিবীতে পৌঁছাতে সময় নিবে প্রায় ৭০০ সেকেন্ড। এর অর্থ হলো, যখন নাসা Perseverance থেকে তার বায়ুমণ্ডলে প্রবেশের সংকেতটি পাবে, ততক্ষণে মিশনটি হয়ত মঙ্গলের বুকে সফল বা বিফল হবার কয়েক মিনিট পেরিয়ে গেছে।
রোবটটি ক্যামেরা এবং মাইক্রোফোনের সাহায্যে তার অবতরণ সহ পুরো ঘটনাটিই রেকর্ড করবে। অবতরণ করার পর ফাইলগুলি পৃথিবীতে পাঠাবে, যা থেকে এই মার্স রোভার Perseverance-এর মিশনের বাকি ভবিষ্যৎ অনুমান করা যাবে।
মোহাম্মদ বুরহান উদ্দিন/ নিজস্ব প্রতিবেদক
তথ্যসূত্রঃ বিবিসি
+1
27
+1
1
+1
7
+1
6
+1
2
+1
3
+1
1