আমরা সবাই কম-বেশি মানসিক চাপ অনুভব করে থাকি। মানসিক চাপ শুধু আমাদের মনকে ক্ষতিগ্রস্ত করে এমন টাও নয়, আমাদের শরীরকেও তীব্র ভাবে ক্ষতিগ্রস্ত করে। ফলস্বরুপ, আমাদের জীবন হয়ে উঠে খুবই দুর্বিষহ। তখন আমরা খুঁজতে থাকি মানসিক চাপ থেকে মুক্তির উপায়। সম্প্রতি একটি প্রতিবেদনে বিশেষজ্ঞরা বলেন, প্রতিদিন সামান্য কিছু সময় শরীর ঝাঁকুনি দেওয়া (Shaking Meditation) এর ফলে মানসিক চাপ থেকে মুক্তি পাওয়া সম্ভব।
আপনি নিশ্চয়ই ভাবছেন, ঝাঁকুনি কি এতই সক্রিয় এবং ইচ্ছাকৃত?
হ্যাঁ, অবশ্যই। এটি এমন একটি প্রক্রিয়া যা আপনার মন এবং দেহের সমস্ত অন্তর্নিহিত উত্তেজনা শিথিল করে। আপনি খেয়াল করলে হয়তো দেখবেন, সব স্তন্যপায়ী প্রাণিতেই বিষয়টি দেখা যায়।
আপনি কি কখনো খেয়াল করেছেন? কুকুর যখন নতুন পরিস্থিতির সম্মুখীন হয়, তখন সে কাঁপতে থাকে।
তীব্র মানসিক চাপ শরীরের উপর মারাত্নক প্রভাব ফেলে। যেমন-
- বিরক্তি
- উদ্বেগ
- বিষণ্নতা
- মাথাব্যথা
- দুর্বল প্রতিরোধ ব্যবস্থা
- হার্ট অ্যাটাকের ঝুঁকি
তাই একজন মানুষের সামগ্রিক সুস্থতার জন্য শরীর কাঁপানোর থেরাপি খুবই কার্যকর। ডেভিড বার্সেলি, পিএইচডি, বলেন, শরীর কাঁপানোর মাধ্যমে স্নায়ুতন্ত্র নিয়ন্ত্রিত হয় এবং মানসিক চাপ থেকে মুক্তি পাওয়া যায়। ড. পিটার লেভাইন তাঁর “Waking the Tiger: Healing Trauma” বইটিতে মানসিক চাপ নিরাময়ে সহায়ক সোম্যাটিক অভিজ্ঞতার কথা ব্যাখা করেন।বইটিতে তিনি উল্লেখ করেন, কুকুরের মতো আরও অনেক স্তন্যপায়ী প্রাণি রয়েছে, যারা মানসিক চাপ থেকে মুক্তি পেতে শরীর কাঁপানোর পদ্ধতি অবলম্বন করে।
ঝাঁকুনি যেমন স্নায়ুতন্ত্রকে উত্তেজিত করে, ঠিক তেমনি স্নায়ুতন্ত্রকে শান্ত ও করে। এছাড়াও শরীর কাঁপানোর ফলে মানসিক চাপ, আবেগ, উদ্বেগ, হতাশা ও নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব।
স্বাস্থ্য প্রশিক্ষক এবং ট্রমা বিশেষজ্ঞ Adair Finucane বলেন, “মারাত্নকভাবে মানসিক ক্ষতিগ্রস্ত করার কেন্দ্রবিন্দু হচ্ছে মানসিক চাপ।” তিনি আরও বলেন, শরীর ঝাঁকুনি এমন একটি পন্থা যার মাধ্যমে শরীর এবং স্নায়ু মানসিক চাপ মুক্ত থাকে। Shaking Meditation বা ঝাঁকুনি এর মানসিক চাপ নিয়ন্ত্রণ সম্ভব। যেমন-
- উদ্বেগ হ্রাস পায়
- হতাশা হ্রাস পায়
- উচ্চরক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে থাকে
- ইমিউনিটি বৃদ্ধি পায়
- মেজাজ উন্নত হয়ে
- কার্ডিওভাসকুলার সিস্টেমের উপর চাপ কমে
- স্থূলত্ব, হৃদরোগ এবং ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে থাকে
Adair Finucane বলেন, কেউ যদি ১o-৩o সেকেন্ড ন্যূনতম শরীর কাঁপুনি দেয়, তাহলে তার স্নায়ুতন্ত্রের উপরে এর প্রভাব পড়ে এবং হরমোন উৎপাদন ও প্রভাবিত হতে পারে।
শরীর ঝাঁকুনি মেডিটেশন যেভাবে করবেন:
প্রথমে আপনার সোজা হয়ে দাঁড়াতে হবে এবং হাঁটুকে নরম করে, কাঁধ ছেড়ে দিতে হবে। এরপর হাঁটু একটু ভাঁজ করে কাঁপুনি দিতে হবে। তখন সামান্য কাঁপুনি বা সম্পূর্ণ কাঁপুনি দিয়ে শরীরকে নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব।
সুতরাং, আপনি দিনে মাত্র ১৫ মিনিট কাঁপুনি অনুশীলন করে, সারাদিন শরীরকে শান্ত রাখতে পারবেন। কাঁপুনি প্যারাসিমপ্যাথিক স্নায়ুতন্ত্রকে সক্রিয় করে, মস্তিষ্ককে শান্ত এবং শিথিল করে। পাশাপাশি কাঁপুনি আমাদের শরীরের লিম্ফোফেটিক সিস্টেমকে সক্রিয় করে এবং শরীরকে টক্সিন মুক্ত রাখে।
বিশেষ দ্রষ্টব্যঃ এই বিষয়টি একটি সিউডো সাইন্স (Pseudoscience). এই পদ্ধতি অনেকের ক্ষেত্রে কাজ করে আবার কারো কারো ক্ষেত্রে এই Shaking Meditation বা ঝাঁকুনি এর কোনো ফলাফলই দেখা যায়নি। কিন্তু এটি একটি স্বীকৃত মেডিটেশন পদ্ধতি।
আমেনা আঁখি/ নিজস্ব প্রতিবেদক
তথ্যসূত্রঃ হেলথলাইন, টাইমস অফ ইন্ডিয়া