বর্তমানে যে পুরো বিশ্বই জ্বালানি সংকটের মধ্য দিয়ে যাচ্ছে তা স্পষ্ট। আমাদের দেশেও পেট্রোল, ডিজেলের দাম আকাশচুম্বী। এই সংকট মোকাবেলায় অধিকাংশ দেশ হিমশিম খাচ্ছে। সমস্যার সমাধানে ভিন্ন এক পরিকল্পনা করছে ইউরোপ। ইউরোপীয়ান স্পেস এজেন্সি এইবার পরিকল্পনা করেছে মহাকাশে সৌরবিদ্যুৎ তৈরি করার!
সৌরবিদ্যুৎ সম্পর্কে আমরা সকলেই জ্ঞাত। সোলার প্যানেল ব্যবহার করে সূর্যের আলোকে কাজে লাগিয়ে বিদ্যুৎ শক্তি উৎপন্ন করা হয়। বহিঃর্বিশ্বে এটি বহুল ব্যবহৃত। আমাদের দেশেও এর ব্যবহার কম নয়। সূর্যের আলো পৃথিবীর বায়ুস্তর ভেদ করা আসার পর সেই আলোকে বিদ্যুতে রূপান্তর করা হয়। আলো পৃথিবীর অনেকগুলো বায়ুস্তর ভেদ করে আসার ফলে আলোক শক্তির কিছু অপচয় হয় এবং সেই শক্তি ১০০% শুদ্ধ হয় না। সূর্যের আলো বায়ুস্তরে প্রবেশের পূর্বেই যদি সেই আলোক শক্তিকে কাজে লাগানো যায়, তবে এর মাধ্যমে আমরা যে শক্তি পাব তা হবে অনেক বেশি পরিষ্কার। ইউরোপীয়ান স্পেস এজেন্সি এই কাজটিই এবার করতে চলেছে। মহাকাশেই তারা সূর্যের শক্তিকে ব্যবহার করবে। এই প্রক্রিয়াকে স্পেস বেসড সোলার পাওয়ার (SBSP) বলে এবং এই প্রকল্পটির নাম ‘সোলারিস‘।
আরোও পড়ুন: সোলার প্যানেল কি সূর্যের আলো ছাড়া অন্য আলো থেকে বিদ্যুৎ উৎপাদন করতে পারে?
সহজ বাংলায় বলা যাক, প্রথমে অনেকগুলো স্যাটেলাইটকে পৃথিবীর বাইরে স্থাপন করা হবে। অনেকগুলো স্যাটেলাইট মিলে একটি জালের ন্যায় আকৃতি ধারণ করবে। স্যাটেলাইটগুলো সূর্যের আলোকে কাজে লাগিয়ে শক্তি উৎপন্ন করে সেটিকে পৃথিবীতে পাঠাবে। হ্যাঁ, একে কোনো সাইন্স ফিকশন মুভির দৃশ্যের সাথে তুলনা করা যেতেই পারে!
পৃথিবী পৃষ্ঠের ২২০০০ মাইল (৩৬০০০ কিলোমিটার) উপরে SBSP স্যাটেলাইটগুলো একটি নির্দিষ্ট কক্ষপথে অবস্থান করবে যেন পৃথিবী থেকে দেখলে সেটিকে স্থির মনে হয়। কোনো বায়ুমন্ডলের বাধা না থাকায় উদ্ভিদের চেয়েও বেশি দক্ষতার সাথে স্যাটেলাইটগুলো শক্তি উৎপন্ন করতে পারবে। বিদ্যুৎ শক্তিতে রূপান্তরিত হওয়ার পর পৃথিবীতে সেটিকে বিম করে পাঠানো হবে। এভাবেই মূলত মহাকাশে সৌরবিদ্যুৎ তৈরি করা হবে!
ইএসএ -র মহাপরিচালক জোসেফ অ্যাশবাচার গতবছর টুইট করেছিলেন,
“মহাকাশ-ভিত্তিক সৌরশক্তি ইউরোপের জন্য কার্বন নিরপেক্ষতা এবং শক্তির স্বাধীনতার দিকে একটি গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ হবে।”
ইএসএ সোলারিস প্রোগ্রামকে পৃথিবীতে বর্তমান জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবিলা এবং পরিষ্কার, সাশ্রয়ী, ক্রমাগত, প্রচুর এবং নিরাপদ শক্তির একটি সম্ভাব্য উৎস হিসাবে বর্ণনা করা হয়।
তিনি আরও জানান,
“আমাদের কাছে মডিউলটির সম্পূর্ণ ব্যাখ্যা আছে, তবে এটিকে বাস্তবে রূপান্তরিত করতে এখনো অনেক প্রযুক্তি উন্নয়ন ও তহবিল প্রয়োজন।“
সোলারিস প্রস্তাবটি নভেম্বরে ইএসএ কাউন্সিল অফ মিনিস্টারে পেশ করা হবে, তবে কতটা তহবিল চাওয়া হচ্ছে তা জানা যায়নি। SBSP এর চূড়ান্ত লক্ষ্য হবে 2050 সালের মধ্যে ইউরোপকে জিরো কার্বন বিশ্বে রূপান্তরিত হতে সহায়তা করা। তবে এই ধারণাটি কিন্তু মোটেও নতুন না। SBSP -এর ধারণাটি প্রথম ১৯৬০ -এর দশকে আবির্ভূত হয়েছিল। কিন্তু, তখন কেউ আগ্রহ দেখায়নি। কিন্তু সম্প্রতি এটি বেশ কয়েকটি দেশের কাছে অত্যন্ত আগ্রহের বিষয় হয়ে উঠেছে।
খুব শীঘ্রই আমরা এই পরিকল্পনা বাস্তবে রূপ নিতে দেখব। আশা করছি, দ্রুতই সাইন্স ফিকশনের মতো এমন সব ঘটনাগুলোই পৃথিবীর ভবিষ্যৎকে পাল্টে দিবে।
তানভীর আহমেদ/ নিজস্ব প্রতিবেদক
তথ্যসূত্র: Space.com, BBC.UK, ScienceFocus.com