আপনি কি জানেন পৃথিবীতে প্রতিবছর প্রায় ৩০টির মতো উল্কাপাত ঘটে? এগুলো প্রায় সবই আকারে ছোট হয় এবং পৃথিবীর বায়ুমন্ডলে প্রবেশের সময় উচ্চ তাপ ও চাপে আরো ছোট ছোট খন্ডে পরিণত হয়। পৃথিবীর অধিকাংশ অঞ্চল জুড়েই সমুদ্র থাকার কারণে এগুলো সমুদ্রে পতিত হয়।
গত বছর জুন মাসে এমনই একটি উল্কার অবশিষ্টাংশ হতে বিজ্ঞানীরা এমন পদার্থের সন্ধান পেয়েছেন যা আমাদের সৌরজগতের বাইরের। প্রশান্ত মহাসাগরে পাপুয়া নিউ গিনির কাছে এই ভিনগ্রহী পদার্থ এর সন্ধান মেলে। বিজ্ঞানীরা ধারণা করছেন এটি যে উল্কার সাথে পৃথিবীতে এসেছে সেটি প্রায় এক আলোক বর্ষ পরিমাণ দূরত্ব পাড়ি দিয়েছে পৃথিবীতে আসতে। উল্কাটিকে ২০১৪ সালে আমেরিকার সরকারি একটি স্যাটেলাইট চিহ্নিত করেছিল। তখন এর নাম দেয়া হয়েছিল CNEOS 2014। উল্কা পিন্ডটির অস্বাভাবিক গতির কারণে এটাকে প্রথমে কোনো মিসাইল ভেবেছিলেন বিজ্ঞানীরা।
হাভার্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের তাত্ত্বিক পদার্থবিদ আভি লোয়েব এবং আমির সিরাজ জুন মাসে CNEOS 2014 এর অবশিষ্টাংশের খোঁজে একটি অভিযান চালান। প্রফেসর লোয়েব ও তার দল প্রায় ২ কিলোমিটার গভীর গর্তে ছোট ছোট গোলাকৃতির প্রায় একশোটির মতো অবশিষ্টাংশ খুঁজে পান।
প্রফেসর লোয়েব বলেন,
“এটি একটি ঐতিহাসিক খোঁজ, কারণ এটিই প্রথমবার যে বিজ্ঞানীরা এতো পরিমাণ বহির্জাগতিক অর্থাৎ, ভিনগ্রহী পদার্থ নিয়ে কাজ করছে।”
প্রফেসর আরো দাবি করেন যে অবশিষ্টাংশের পদার্থ প্রাকৃতিক নয়। এটি কৃত্রিম ভাবে তৈরি।
তিনি মনে করেন এটি কোনো বহির্জাগতিক প্রযুক্তি বা এলিয়েনদের স্পেসশিপের অংশ। তার এই দাবির পেছনে কিছু কারণও রয়েছে। অবশিষ্টাংশগুলোতো লোহার আইসোটোপে কিছু বৈচিত্র্যতা পাওয়া গিয়েছে। আর যেসব পদার্থ পাওয়া গিয়েছে সেগুলো আমাদের সৌরজগতের কোনো পদার্থ মতো নয়। তাই এই উল্কাটির উৎপত্তি অনেক দূরের কোনো সৌরজগতে হতে পারে বলে মনে করছেন বিজ্ঞানীরা।
সাধারণত উল্কাপাতের জায়গা বা উল্কাপিণ্ড হতে আমরা যেসব পদার্থ পেয়ে থাকি তার থেকে সম্পূর্ণ আলাদা CNEOS 2014 উল্কাটি থেকে পাওয়া পদার্থগুলো। এই সব অস্বাভাবিকতার কারণেই এটিকে ঘিরে রহস্য জমছে বিজ্ঞান মহলে। তবে প্রফেসর লোয়েব ইতিপূর্বে অন্যান্য অনেক ক্ষেত্রে অস্বাভাবিক ও খেপাটে যুক্তি দিয়েছেন। তাই এই দাবিটিও তার ব্যতিক্রম হবার কথা নয়।
তবে ২০১৪ থেকেই CNEOS আলোচনায় রয়েছে এবং এখন এইসব অজানা পদার্থ পাওয়ার পরে বিষয়টা আরো রহস্য সৃষ্টি করেছে। তাহলে কি এলিয়েন আমাদের সাথে যোগাযোগ করার চেষ্টা করছে তাদের প্রযুক্তির সহায়তায় নাকি এটি নিছকই কোনো প্রাকৃতিক ঘটনা।
আপনার কি মনে হয়?
মুরছালিন রহমান / নিজস্ব প্রতিবেদক
তথ্যসূত্র: সায়েন্স অ্যালার্ট