মোবাইল ছাড়া থাকার ভয়কেই মূলত নামোফোবিয়া বলা হয়। বিশ্বের ৬৬% মানুষের মধ্যে এ ফোবিয়া দেখা যায়। আমাদের মধ্যে বেশিরভাগ মানুষই জানে না যে তারা কতটা স্মার্টফোনে আসক্ত। আচ্ছা, একটু ভাবুন,
খাওয়ার সময়, পড়ার সময়, ঘুমাতে যাওয়ার আগে, ঘুম থেকে উঠে, এমনি টয়লেটে যাওয়ার আগেও আপনি ফোন ছাড়তে চান কি?
বেশিরভাগ উত্তর আসবে না-তে। কারণ বিষয়গুলো আমাদের কাছে অনেক সাধারণ। স্মার্টফোন এডিকশনের অপকারিতাগুলো আমাদের সকলেরই কমবেশি জানা। তাও আমরা এসব পাত্তা না দিয়ে আরও কোন কোন নতুন পথে মোবাইলে সময় দেয়া যায়,তার অভ্যাস গড়ে তুলছি।এসবের মধ্যে অন্যতম হলো টয়লেট সিটে বসে মোবাইল ব্যবহার।
আপনি জেনে অবাক হবেন, আপনার কাছে মনে হওয়া খুব সাধারণ এ অভ্যাসটি আপনার কতটা ক্ষতি করছে!
আপনার বাসার সবচেয়ে জীবাণুযুক্ত স্থান হলো বাথরুম। কল, হ্যান্ড ড্রায়ার বা ডোর নব সহ বাথরুমের সবকিছুতেই জীবাণু এবং ব্যাকটেরিয়ার আশ্রয় থাকে। তাই আপনি যখন নিজের ফোনটি সেখানে নিয়ে যান, তখন এটিও বিভিন্নভাবে ফ্যাকাল ব্যাকটিরিয়ার (faecal bacteria) সংস্পর্শে আসে। যেমন আপনি যখন ফ্লাশ হ্যান্ডেল বা দরজার লকটি স্পর্শ করবেন তারপরে আবার ফোনটি স্পর্শ করবেন তখন জীবাণু আপনার ফোনের সংস্পর্শে চলে আসে।
ক্লিনিকাল মাইক্রোবায়োলজি এবং অ্যান্টিমিক্রোবিয়ালস জার্নাল এ্যানালস-এ প্রকাশিত একটি সমীক্ষায় দেখা গেছে যে ৯৫% স্বাস্থ্যসেবা কর্মীদের মোবাইল সংক্রমণজনিত ব্যাকটিরিয়া যেমন সালমোনেলা, ই-কোলি এবং সি ডিফিসিল দ্বারা আবৃত ছিল।
অ্যারিজোনা বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষদের করা আরও একটি সমীক্ষায় দেখা যায়, স্মার্টফোনগুলি টয়লেট সিটের চেয়েও দশগুণ ব্যাকটেরিয়া বহন করে। তবে এমনটা কেন?
কারণ বাথরুম ব্যবহারের পরে আমরা হাত ধুয়ে ফেলি কিন্তু আমদের ফোনগুলি পরিষ্কার করি না। ফলস্বরূপ, রোগজনিত জীবাণু এবং ব্যাকটেরিয়া তাদের উপর আটকে থাকে আর যখন আমরা পরবর্তীতে ফোন ব্যবহার করি তখন আমাদের ফোনে উপস্থিত ব্যাকটেরিয়া এবং ভাইরাসগুলি আমাদের দেহের বিভিন্ন অংশের সংস্পর্শে চলে আসে এবং সহজেই তা আমাদের সংক্রমণের কারণ হতে পারে।
বাথরুমে ফোন ব্যবহার-এর অভ্যাসটি আপনার দুশ্চিন্তার(anxiety) কারণ হতে পারে। প্রযুক্তি আমাদের জীবনকে খুব সহজ করে তুলেছে কিন্তু এটি আমাদের দুশ্চিন্তা এবং স্ট্রেসেরও কারণ। আপনি যত বেশি এতে সময় দিবেন, তত বেশি আপনি স্ট্রেস বোধ করবেন। আপনার বাথরুমের সময়টি আপনার কর্মমুক্ত সময়, যদি আপনি সেখানেও ফোনটি নিয়ে যান, তবে আপনার জীবনে আপনি নিজেই আরও দুশ্চিন্তা এবং স্ট্রেসকে আমন্ত্রণ জানাচ্ছেন। বাথরুমে ফোন নিয়ে যাওয়া মানে আপনি আপনার মস্তিষ্ক এবং স্বাস্থ্য উভয়কেই ঝুঁকির মধ্যে ফেলছেন। এমনকি, বাথরুমে ফোন ব্যবহারের কারণে কারও কারও অন্ত্রেও অসুবিধা হয়।
এই অভ্যাসটি আপনার মলদ্বারে অতিরিক্ত চাপ সৃষ্টি করতে পারে। বাথরুমে ফোন ব্যবহার করার আরও একটি স্বাস্থ্যঝুঁকি রয়েছে, তাহলো, হেমোরয়েডস (haemorrhoids-অর্শ)।
বাথরুম থেকে আপনার সংস্পর্শে আসা জীবাণুগুলিতে সংক্রমিত হওয়ার ঝুঁকিতে আপনি আমি সবাই আছি। তবে প্রাপ্তবয়স্করা এবং কম প্রতিরোধ ক্ষমতাসম্পন্ন ব্যক্তিরা সংক্রমণের ঝুঁকিতে বেশি।
আপনার যদি বাথরুমে ফোন ব্যবহারের অভ্যাসটি থাকে তবে আপনার নিরাপদ থাকা এবং সঠিক স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলার ব্যাপারে বেশি সতর্ক হওয়া উচিত। সবচেয়ে ভাল বিকল্পটি হল- বাথরুমে যাওয়ার সময় আপনার ফোনটি বাইরে রেখে দেওয়া।
এখন আপনার মনে আসতে পারে, অভ্যাসটি এতো সহজে ছাড়ি কিভাবে?- হ্যাঁ, কোন অভ্যাস ছাড়া আসলেই কত কঠিন তা আমরা সবাই জানি। তবে ধীরে ধীরে ছাড়ার চেষ্টা করতে হবে। তাও যদি আপনি বাথরুমে ফোন নিতে চান, তাহলে নিয়মিত ৭০% অ্যালকোহল-ভিত্তিক স্যানিটাইজার দিয়ে এটি পরিষ্কার করুন। পাশাপাশি বাথরুমে (lavatory) খুব বেশি সময় ব্যয় না করার চেষ্টা করুন। বিশেষজ্ঞরা পরামর্শ দেন যে বাথরুমে ১০ মিনিটের বেশি সময় ব্যয় করা উচিত নয়। বাথরুমে অবস্থানের জন্য এটিই স্বাস্থ্যকর পরিমাণ।
তানজিনা সুলতানা শাহীন/ নিজস্ব প্রতিবেদক