একজন ব্যক্তির সম্পূর্ণভাবে সুস্থ থাকার জন্য ফুসফুস পরিষ্কার রাখা খুবই প্রয়োজন। প্রতিনিয়ত নানা রকম দূষণের ফলে পরিষ্কার বাতাসে শ্বাস নেওয়াটাও কঠিন হয়ে গেছে। আর এ কারণেই ফুসফুস পরিষ্কারের জন্য আলাদা ভাবে ব্যবস্থা নেওয়া খুবই দরকারি।
কিন্তু কিভাবে পরিষ্কার ও দূষণমুক্ত রাখবেন আপনার ফুসফুসকে? আপনি চাইলে প্রাকৃতিক ভাবেও নিয়মিত ফুসফুস পরিষ্কার রাখতে পারবেন। আপনি হয়তো ভাবছেন, প্রাকৃতিক ভাবে পরিষ্কার করা কি আসলেই সম্ভব?
হ্যাঁ, সম্ভব! সামান্য কিছু উপায় অবলম্বন করার মাধ্যমে প্রাকৃতিক ভাবেও আপনার ফুসফুস পরিষ্কার রাখা সম্ভব।
দূষিত বায়ু, ধূমপান এবং অন্যান্য বিষাক্ত পদার্থ প্রতিনিয়ত আমরা শ্বাস নেওয়ার সময় গ্রহণ করি। ফলস্বরুপ, মারাত্নকভাবে আমাদের ফুসফুস ক্ষতিগ্রস্ত হয়। আমাদের সামগ্রিক সুস্থতার জন্য ফুসফুসকে সুস্থ রাখা অত্যন্ত জরুরি। WHO এর দেওয়া তথ্য অনুসারে, বিশ্বব্যাপী প্রতিবছর দূষিত বায়ুর কারণে ৪.২ মিলিয়ন মানুষ মৃত্যুবরণ করে। যুক্তরাষ্ট্রে ধূমপানের কারণে প্রতি ৫ জনের মধ্যে ১ জন মারা যায়।
ফুসফুস পরিষ্কার রাখার কৌশল অবলম্বন করলে ধূমপায়ী ব্যক্তি, দূষিত বায়ুর সংস্পর্শে থাকা ব্যক্তি, হাঁপানি এবং সিস্টিক ফাইব্রোসিস রোগে আক্রান্ত ব্যক্তিরাও উপকৃত হতে পারে।
চলুন জেনে নেওয়া যাক, ফুসফুস পরিষ্কার রাখার কিছু প্রাকৃতিক উপায়ঃ
১. স্টিম বা বাষ্প থেরাপি: এই পদ্ধতিতে বাষ্প গ্রহণের সময় শ্বাসনালির পথ খুলে যাবে এবং ফুসফুসে জমে থাকা শ্লেষ্মার নিষ্কাশন ঘটবে। ফলে যেকোনো ব্যক্তি তখন ভালোভাবে শ্বাস-প্রশ্বাস নিতে পারবে।
২. কাশি নিয়ন্ত্রণ: কাশি নিয়ন্ত্রণ করার মাধ্যমে মিউকাস মেমব্রেনে আবদ্ধ টক্সিন বাইরে বের হয়ে যেতে পারে। কিছু পদক্ষেপ অনুসরণ করলে ফুসফুসে জমাকৃত অতিরিক্ত শ্লেষ্মা ও পরিষ্কার করা সম্ভব! যেমন-
-
কাঁধ স্থির রেখে সোজা হয়ে চেয়ারে বসা বা মেঝেতে উভয় পা সমতলে রেখে বসা।
-
বাহু ভাঁজ করে বুকের কাছে নিয়ে আসা।
-
নাক দিয়ে ধীরে ধীরে শ্বাস নেওয়া
-
হাত পেছনে রেখে সামনের দিকে ঝুঁকে ধীরে ধীরে শ্বাস ছাড়তে হবে।
-
শ্বাস ছাড়ার সময় মুখ খোলা রেখে ২/৩ বার কাশি দিতে হবে।
-
নাক দিয়ে আবার ও ধীরে ধীরে শ্বাস নিতে হবে।
-
এরপর বিশ্রাম নিতে হবে। প্রয়োজনে পদ্ধতিগুলো পুনরাবৃত্তি করা যাবে।
৩. শরীরচর্চা: নিয়মিত শরীর চর্চা একজন ব্যক্তিকে শারীরিক এবং মানসিকভাবে সুস্থ রাখতে খুবই সহায়ক। পাশাপাশি স্ট্রোক এবং হৃদরোগের ঝুঁকিও হ্রাস করে। যেসব ব্যক্তির হাঁপানি বা সিস্টিক ফাইব্রোসিস রোগ রয়েছে, তারাও নিয়মিত শরীর চর্চার মাধ্যমে অনেক বেশি উপকৃত হতে পারবে। শরীর চর্চার মাধ্যমে ভালোভাবে অক্সিজেন ফুসফুসে প্রবেশ করবে এবং অতিরিক্ত কার্বন ডাই অক্সাইড শরীর থেকে বের হয়েও যাবে।
৪. গ্রিন টি: গ্রিন টি তে রয়েছে অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট, যা ফুসফুসের প্রদাহ কমাতে খুবই সহায়ক। সম্প্রতি প্রকাশিত একটি প্রতিবেদনে বলা হয়, কোরিয়ার ১ooo জন প্রাপ্ত বয়স্ক ব্যক্তিদের নিয়ে একটি গবেষণা করা হয়। সেখানে দেখা যায়, যারা নিয়মিত গ্রিন টি পান করে না তাদের তুলনায়, যারা নিয়মিত ২ কাপ গ্রিন টি পান করে তাদের ফুসফুস তুলনামূলক অনেক বেশি উন্নত।
৫. হলুদ: হলুদে রয়েছে Curcumin নামক যৌগ, যা প্রাকৃতিকভাবে ফুসফুসকে পরিষ্কার করতে সহায়তা করে এবং শরীরের ডিটক্সিফিকেশন করতেও সহায়তা করে। কার্যকারি উপকারিতা পেতে দুধের সাথে হলুদ গুঁড়া খাওয়া যেতে পারে।
৬. গোলমরিচ: গোলমরিচ চা ফুসফুসকে বিভিন্ন ধরনের সংক্রমণ থেকে রক্ষা করে। নিউমোনিয়ার কারণে ফুসফুসে জমাকৃত শ্লেষ্মা দূরীকরণ এবং গলাব্যথা নিরাময়ে গোলমরিচ চা খুবই উপকারী।
৭. আদা: সর্দি ও কাশি নিরাময়ে আদা খুবই কার্যকারী। পাশাপাশি শ্বাসনালি থেকে বিষাক্ত পদার্থ অপসারণ করতেও সহায়তা করে। আদায় পটাসিয়াম, ম্যাগনেসিয়াম, বিটা- ক্যারোটিন এবং জিংক সহ প্রচুর পরিমাণে খনিজ লবণ রয়েছে। গবেষণায় দেখা যায়, আদার নির্যাস ক্যান্সার কোষ মেরে ফেলতেও সক্ষম।
৮. মধু: গবেষণায় দেখা যায়, মধুতে অ্যান্টিভাইরাল এবং অ্যান্টিব্যাকটেরিয়াল উপাদান রয়েছে। এটি শ্বাসকষ্ট দূর করতে খুবই কার্যকারী এবং কাশি থেকে মুক্তি দিয়ে অনিয়মিত ঘুমকে নিয়মিত করে।
৯. রসুন: রসুনে রয়েছে অ্যালিসিন নামক একটি যৌগ, যা শক্তিশালী অ্যান্টিবায়োটিক হিসেবে কাজ করে। রসুন শ্বাসকষ্ট জনিত সমস্যা দূর করে, ফুসফুসের ক্যান্সারের ঝুঁকি হ্রাস করতেও সহায়তা করে।
তাই, এত দূষণের মাঝে আপনি যদি আপনার ফুসফুসকে প্রাকৃতিক ভাবে সুস্থ এবং পরিষ্কার রাখতে চান, তাহলে উপরোক্ত উপায়সমূহ অবশ্যই নিয়মিত অনুসরণ করবেন!
আমেনা আঁখি/ নিজস্ব প্রতিবেদক
তথ্যসূত্রঃ মেডিক্যাল নিউজ টুডে, টাইমস অফ ইন্ডিয়া