এখন চলছে মধুমাস, সারাদিনই দেখা যায় আম-কাঁঠাল-লিচু-জাম সহ হরেক রকমের ফল খাওয়া হচ্ছে। ফল খুবই উপকারী খাদ্য, যা ভিন্ন পুষ্টিগুণ দিয়ে ভরপুর! স্বাস্থ্যকর ডায়েটের জন্য ফল খুবই গুরুত্বপূর্ণ। ফল এর মধ্যে রয়েছে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন, খনিজ, অ্যান্টিঅক্সিডেন্টসহ আরও অনেক গুরুত্বপূর্ণ খাদ্য উপাদান।
আমাদের মধ্যে অনেকেই আছে, যারা প্রায়ই ফল ও খাদ্যের পুষ্টিগুণ নিয়ে চিন্তিত থাকে। কারণ, সুষম খাদ্যে কোন কোন উপাদান থাকা প্রয়োজন, তা অনেকেই জানি না!
ইউনাইটেড স্টেটস-এর এগ্রিকালচার ডিপার্টমেন্ট এর প্রতিবেদন অনুসারে, “ফল এমন একটি খাদ্য উপাদান, যা ছাড়া আমরা শরীরের পুষ্টি গুণাগুণ পূর্ণ হবার কল্পনাও করতে পারি না। ফল ভিটামিনের অন্যতম উৎস। ফলের মধ্যে প্রচুর পরিমাণে পটাসিয়াম, ফাইবার, অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট এবং ভিটামিন ‘সি’ রয়েছে।”
আচ্ছা, আপনি কি জানেন একজন মানুষের দৈনিক কত গ্রাম ফল খাওয়া প্রয়োজন?
দৈনিক একজন মানুষ কি পরিমাণ ফল খাওয়া প্রয়োজন, তা নির্ভর করে নিন্মোক্ত বিষয় গুলোর উপরে।
- উচ্চতা
- ওজন
- জেন্ডার/ লিঙ্গ
- বয়স
- শারীরিক অবস্থা
- দৈনন্দিক অ্যাক্টিভিটি/ ব্যায়াম
USDA এর পরামর্শ অনুযায়ী, প্রতিদিন একজন প্রাপ্ত বয়স্ক মহিলার ১.৫-২ কাপ এবং প্রাপ্ত বয়স্ক পুরুষের ২-২.৫ কাপ ফল খাওয়া উচিত। যদি কোনো ব্যক্তির বযস ৬o বছর বা তার বেশি হয়ে থাকে, তাহলে তার দৈনিক ২ কাপ ফল খাওয়া উচিত।
আমেরিকান একাডেমি অব পেডিয়াট্রিক্সের প্রতিবেদন অনুসারে, ৭ বছর বা তার উপরে বয়স এমন শিশুদের প্রতিদিন ৮ আউন্স চিনি মুক্ত ফলের জুস খাওয়ানো উচিত এবং যেসকল শিশুদের বয়স ১-৩ বছরের মধ্যে তাদেরকে কখনো ৪ আউন্সের বেশি ফলের জুস খাওয়ানো উচিত নয়। কারণ, অতিরিক্ত ফলের জুস খেলে বিপাকীয় সমস্যা দেখা দিতে পারে।
ফল খাওয়ার ভালো ও খারাপ দিকঃ
প্রাকৃতিকভাবে ফলে প্রচুর পরিমাণে ফাইবার এবং শর্করা রয়েছে। তাই অতিরিক্ত ফল খেলে ডায়রিয়া হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।
গবেষণায় দেখা যায়, নিয়মিত ফল গ্রহণ ওজন হ্রাস করতে খুবই সহায়ক। কারণ, প্রাকৃতিকভাবেই ফল কোলেস্টেরল এবং সোডিয়াম মুক্ত থাকে। তাই ওজন বৃদ্ধি পাওয়ার কোনো সম্ভাবনাও নেই।
স্টার্চ ও ফ্যাট জাতীয় খাবারের তুলনায় ফল অধিক উপকারী। কোনো ব্যক্তি যদি ওজন হ্রাস করতে চায়, তাহলে তার উচিত প্রতিদিন কম ক্যালরি যুক্ত ফল খাওয়া।
ভিন্ন ভিন্ন ২ টি সমীক্ষায় দেখা যায়, ২.২% এবং ৩.৫% ব্যক্তি নিয়মিত ফল এবং শাকসবজি গ্রহণ করে। অন্য একটি সমীক্ষায় দেখা যায়, ৩৭% প্রাপ্ত বয়স্ক ব্যক্তি ফল এবং সবজি কম খায়। কারণ, তারা মনে করে, ফল এ উপস্থিত চিনি তাদের ওজন বৃদ্ধির কারণ হতে পারে। যেহেতু, প্রাকৃতিকভাবেই ফলে প্রচুর শর্করা থাকে, তাই ফল খাওয়ার পরে ব্যায়াম করা উচিত। অন্যথায়, ফলে উপস্থিত চিনি পরবর্তীতে শরীরে চর্বি হিসাবে জমা হতে পারে।
ডায়াবেটিস কেয়ার জার্নালে একটি গবেষণাপত্র প্রকাশিত হয়। সেখানে উল্লেখ করা হয়, ডায়াবেটিস রোগীদের জন্য সরাসরি চিনির মতো ফলের চিনি ক্ষতিকর নয়।
ফলের মধ্যে উপস্থিত অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট শরীরের কোষকে ক্ষতিকর রেডিক্যাল থেকে মুক্ত রাখে। সম্প্রতি একটি গবেষণায় দেখা যায়, ফলের তুলনায় চিনি যুক্ত ফলের রস শরীরের ওজন বৃদ্ধিতে খুব সহায়ক। অতিরিক্ত চিনিযুক্ত ফলের জুস শিশু এবং প্রাপ্ত বয়স্কদের জন্য খুবই ক্ষতিকর। তাই চিনিমুক্ত ফলের জুস খেতে হবে।
বিভিন্ন গবেষণা পর্যালোচনা করে দেখা যায়, প্রতিদিন ফল গ্রহণ করলে ৭%হৃদরোগের ঝুঁকি হ্রাস পায়।ফলের মধ্যে উপস্থিত ফাইবার ইনসুলিনের প্রতিরোধ ক্ষমতা হ্রাস করে এবং মানুষকে টাইপ-২ ডায়াবেটিস থেকে রক্ষা করে। ফলের মধ্যে উপস্থিত পলিফেনল রক্তের শর্করা নিয়ন্ত্রণ করে।
আমেনা আঁখি/ নিজস্ব প্রতিবেদক
তথ্যসূত্রঃ হেলথলাইন, মেডিক্যাল নিউজ টুডে, ইউএসডিএ (USDA)