আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্স ব্যবহার করে মানব দেহে থাকা সবকটি প্রোটিনের সম্ভাব্য গঠনকাঠামো উদ্ভাবন করা সম্ভব হয়েছে! এই আবিষ্কার ঔষধ শিল্পে এক বৈপ্লবিক পরিবর্তন আনতে যাচ্ছে। এখন যেকোনো রোগের চিকিৎসা খুবই কার্যকরীভাবে করা সম্ভব হবে।
প্রতিটি জীবিত প্রাণীর দেহের কোষ এই প্রোটিনে নিমজ্জিত থাকে, তাই এর গুরুত্ব নতুন করে বলার নেই। প্রোটিনের গঠন সম্পর্কে স্পষ্ট ধারণা না থাকায় আজ অবদি কোনো রোগের কার্যকরী ঔষধ তৈরিতে গবেষকদের অনেক বেগ পেতে হয়েছে। কিন্তু হয়তোবা এই সমস্যাটির সমাধান করে দিবে এই প্রোগ্রাম।
কয়েক বছর ধরে, বিজ্ঞানীরা “প্রোটিন ফোল্ডিং” এর সমস্যা নিয়ে গবেষণা করে যাচ্ছেন। সম্প্রতি গুগলের ডিপমাইন্ড দাবি করেছে যে আলফাফোল্ড (AlphaFold)নামে একটি কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা ভিত্তিক প্রোগ্রাম তৈরি করা হয়েছে, যা এই সমস্যাগুলি সমাধান করতে সক্ষম।
AlphaFold নামক প্রোগ্রাম হতে প্রাপ্ত তথ্য বিশ্লেষণ করে গবেষকরা এই ধরনায় উন্নীত হন যে৷ মানবদেহ সহ অন্যান্য সব জীবন্ত প্রাণীদেহে মোট ৩৫০,০০০ প্রোটিন রয়েছে। এর মধ্যে ২০,০০০ এর মতো প্রোটিন রয়েছে কেবল মানবদেহেই!
Deep Mind নামক আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্স কোম্পানির উপ প্রতিষ্ঠাতা Dr Demis Hassabis বলেন, “বর্তমানে এই গবেষণায় প্রাপ্ত ফলাফল, তথা প্রোটিন সংখ্যা হতে পাওয়া সঠিক তথ্য দ্বিতীয়টি নেই”। তিনি যুক্ত করেন, “এটি একইসাথে প্রমাণ করে যে, AI সমাজের কল্যাণে অভূতপূর্ণ ভূমিকা রাখতে পারে”।
এই রিসার্চের দায়িত্বে থাকা University of Portsmouth এর প্রফেসর John McGeehan জানান, AlphaFold মানবদেহে থাকা ৫৮% প্রোটিনের নির্দিষ্ট অবস্থান এবং গঠনকাঠামো নির্ণয়ে সক্ষম হয়। তাছাড়াও ৩৫.৭% এর অবস্থান ধারণা করতে সক্ষম হয়, যা পরবর্তীতে প্রচলিত পদ্ধতি (X-ray crystallography, cryogenic electron microscopy) ব্যবহার করে নিশ্চিত করা হয়। এর পূর্বে কেবল ১৭% এর অবস্থান ও আকৃতি সম্বন্ধে নিশ্চিত ধারণা ছিল। তাই বলা যায় নিঃসন্ধেহে এটি সফল প্রোগ্রাম ছিল।
বর্তমানে ২০০ মিলিয়ন পরিচিত প্রোটিন রয়েছে। এদের যেগুলি সফলভাবে বোঝা গিয়েছে তারা প্রায়শই ব্যয়বহুল এবং সময়োপযোগী কৌশলগুলির উপর নির্ভর করে। এনজাইম, অ্যান্টিবডি বা অনেক ক্ষেত্রেই এবং অনেক ভাবেই বিভিন্ন রোগ প্রোটিনের ভূমিকার সাথে জড়িত।
European Molecular Biology Laboratory (EMBL) এর প্রফেসর Edith Heard বলেন ,”এটি আমাদের বুঝতে সহায়তা করবে জীবন্ত প্রাণীর অঙ্গ কীভাবে কাজ করে, কেননা এই প্রোটিনই সজীব অঙ্গের প্রাথমিক একক”। EMBL এর পরিচালক Dr Ewan Birney বলেন,”মানব জিনোম আবিষ্কারের পর, আজ পর্যন্ত আবিষ্কৃত সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ আবিষ্কার হচ্ছে এই ডাটাসেট”।
নিজস্ব প্রতিবেদক/ জোবায়ের হোসেন সামস
তথ্যসূত্র : BBC