বাংলাদেশকে যত ধরনের প্রাকৃতিক পরিচয় দেয়া হয় তার সবগুলোর পিছনে জুড়ে আছে নদীর ভূমিকা। বাংলাদেশ কৃষিপ্রধান দেশ, ষড়ঋতুর দেশ, শস্য শ্যামল দেশ, মৎস্য নির্ভর দেশ। এসব পরিচয়ের পিছনে সবচেয়ে বড় ভূমিকা নদীমাতৃক বাংলাদেশ। এদেশের জনজীবন, জীববৈচিত্র্য ও জীবিকা নির্বাহের পিছনে হাজার বছর থেকে নদীর ভূমিকা রয়েছে। বাংলার ইতিহাস, ঐতিহ্য, সংস্কৃতি সবই মিশে আছে এদেশের নদীর সাথে। নদীগুলোর দু’পাশেই গড়ে উঠেছে সহস্র নগর ও বন্দর। নদীগুলোর কোনোটি ছোট আবার কোনোটি বড়। কিন্তু প্রতিটি নদীই নির্দিষ্ট অঞ্চলে তার নিজস্ব অবদানের ক্ষেত্রে স্বমহিমায় স্বীকৃত।
পৃথিবীর বৃহত্তম বদ্বীপ বাংলাদেশের অধিকাংশ ভূমি গঠিতই হয়েছে পলি মাটি দিয়ে৷ পলি বা Silt বালি এবং কাদামাটির মাঝামাঝি আকৃতির একটি দানাদার উপাদান, যার খনিজ উৎস কোয়ার্টজ এবং ফিল্ডস্পা। কোয়ার্টজ হল সিলিকনের শক্ত খনিজ ক্রিস্টাল। নদী ভূমি গঠনের এই পলি বহন করে এনেছে, এখনো আনছে৷ এই ভূমি গঠনের হাজার হাজার বছর পর এখনো সেই নদী মানুষের জীবনে নানা অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ডে প্রধানতম ভূমিকা রেখে চলেছে৷
এদেশের ভূমির উর্বরাশক্তি ধরে রাখতেও শতাব্দীর পর শতাব্দী ভূমিকা রেখেছে সেই পলি মাটিই৷ পলি মাটি উর্বর হওয়ার কারণ এতে পর্যাপ্ত পরিমাণ ফসফেট এবং বিভিন্ন ধরনের আয়রন অক্সাইড থাকে। আদিকাল থেকেই বাংলাদেশের মানুষের প্রধান জীবিকা কৃষি৷ সেখানেও মূল ভূমিকায় নদী৷ সাম্প্রতিক সময়ে এই কৃষিতে আধুনিক যন্ত্রপাতি যোগ হয়েছে৷ ব্যবস্থা হয়েছে আধুনিক সেচের৷ এজন্য বড় বড় প্রকল্প গ্রহণ করা হয়েছে৷ এর সবগুলোই গড়ে উঠেছে নদীকে কেন্দ্র করে৷
নদীর অপর দান মাছ৷ বাংলাদেশে সবচেয়ে জনপ্রিয় ও জাতীয় মাছ ইলিশ। বাঙালির ইলিশ নিয়ে, ইলিশের রসনা বিলাস নিয়ে কত গল্প কবিতা হয়েছে, তা কি গুনে শেষ করা যাবে? সেই ইলিশও এই নদীরই দান৷ বিভিন্ন নদ-নদী শুকিয়ে যাওয়ার পরও পরিকল্পিত উপায়ে প্রজনন মৌসুমে মা মাছকে রক্ষা করে বাংলাদেশ এখনো ‘ইলিশের দেশ’ এর খেতাব ধরে রেখেছে৷ আরও কত হাজার রকম মাছ এখানে পাওয়া যায় তার হিসাব করা বড়ই কঠিন৷
সমুদ্র তীরবর্তী অঞ্চল হওয়ায় ভারত উপমহাদেশের প্রায় পাহাড় ও হিমালয়ের পাদদেশ থেকে বিভিন্ন নদী উপনদী প্রবাহিত হয়ে বঙ্গোপসাগরে পতিত হয়। এই সুযোগকে কাজে লাগিয়ে বিশ্বের ঔপনিবেশিক শক্তি বাংলায় ব্যবসা করতে এসেছিল। ব্রিটিশরা প্রায় দুইশ বছর শাসন করে গেছে।
কিন্তু মানুষের অবহেলায়, উদাসীনতায়, অপরিচর্যায়, অপব্যবহারে এদেশের নদী-উপনদী গুলো হারিয়ে যাওয়ার পথে। নদী যেখানে এদেশের অস্তিত্বের প্রতীক, সেখানে নদী হারিয়ে যাওয়া মানে এদেশ অস্তিত্ব সংকটে ভোগা। সার্বিক পরিবেশ বিপর্যয় আমাদের নদ-নদী, জলাশয়ের পানি হ্রাস, জলজ প্রাণী ও সম্পদ উজার তথা সার্বিক নদী বিপর্যয় যেন একসূত্রে গাঁথা, পরস্পরের সম্পূরক।
একাদশ শতাব্দীতে এদেশে নদীর সংখ্যা ছিল প্রায় দেড় হাজার। নদীগুলো ছিল প্রশস্ত, গভীর ও পানিতে টইটম্বুর, বর্ষাকালে প্রমত্তা। তবে সাম্প্রতিক সময়ে জাতীয় নদী রক্ষা কমিশন এর তথ্য মতে, বাংলাদেশে মোট নদ নদীর সংখ্যা ১ হাজার ৮ টি। এসব নদীর বিপুল জলরাশি ২২,১৫৫ কিলোমিটার জায়গা দখল করে দেশের মধ্য দিয়ে প্রবাহিত হয়েছে।
সংখ্যায় অনেক বেশি নদী থাকলেও জীবিত নদীর সংখ্যা খুবই কম। মাত্র ২৩০ টি নদী বর্তমানে জীবিত রয়েছে বলে জানা যায়। জলবায়ু পরিবর্তন, প্রাকৃতিক দুর্যোগ, মানবসৃষ্ট দুর্যোগের ফলে প্রতিনিয়ত ক্ষতির সম্মুখীন হচ্ছে এদেশের নদী, হ্রাস পাচ্ছে জলপ্রবাহ, নদীসমূহ নাব্যতা হারিয়ে ফেলছে, দিন দিন ভাঙনের কবলে পড়ছে নদীর তীর, পলি দিয়ে ভরাট হয়ে যাচ্ছে এদেশের নদী। এসবের ফলে যেমন হুমকির সম্মুখীন হচ্ছে এদেশের নদী, তেমনিভাবে এদেশের জনজীবন ও জীববৈচিত্র্য হুমকির সম্মুখীন হচ্ছে। নদী বিপর্যয়ের বেশ কিছু কারণ নিয়ে এখানে আলোচনা করা হয়েছে।
১. রাসায়নিক দূষণ:
দেশের ১১ ভাগ নদী শিল্প বর্জ্য নিঃসৃত রাসায়নিক দ্রব্য দ্বারা ব্যাপক দূষণের শিকার। এছাড়া রিভার অ্যান্ড রিসার্চ সেন্টার (আরডিআরসি) এক গবেষণা প্রতিবেদনে দেখা যায়, দেশের সবকটি নদী অতিমাত্রায় দূষিত। নদী দূষণের প্রধান কারণসমূহের মধ্যে রয়েছে, শিল্পকারখানার বর্জ্য; শহুরে বর্জ্য, পলিথিন ব্যাগ, প্লাস্টিক দ্রব্যাদি; রাসায়নিক সার, কীটনাশক দ্রব্য, নৌযান নিঃসৃত ময়লা, বর্জ্য ও তেল; বেআইনি দীর্ঘস্থায়ী জৈব দূষণ পদার্থ; দখলদারদের বর্জ্য; হাসপাতাল বর্জ্য; মানুষ ও পশু-পাখির মল-মূত্র, মৃতদেহ; নদীভাঙনের মাটি; গাছ-গাছালির পাতা ও কচুরিপানা; ভাঙা নৌযান, মাছ ধরা ও নির্মাণ সামগ্রী ইত্যাদি।
বিষাক্ত ক্রোমিয়াম মিশ্রিত তরল বর্জ্য মাছের প্রজনন ক্ষমতা হ্রাস করে। ডায়িং কারখানা থেকে বিষাক্ত রঞ্জক পদার্থ প্রাণিকুলের নানা রকম রোগ বৃদ্ধিসহ খাদ্য চক্রের বিষক্রিয়া প্রভাব বৃদ্ধি করছে। পরিবেশ মন্ত্রণালয়ের ঢাকার চারপাশের নদী-খালসমূহের ওপর বিশ্বব্যাংকের সহায়তায় ২০০৮ সালে প্রণীত প্রতিবেদনে বলা হয়েছে যে, এসব নদীদূষণের প্রধান কারণ শিল্পকারখানার বর্জ্য (৬০%), তারপর হচ্ছে ঢাকা ওয়াসা ও ঢাকা সিটি কর্পোরেশনের বর্জ্য (৩০%)। কিন্তু তা এখনও বন্ধ হয়নি, বরং বৃদ্ধি পেয়েছে। নদীর বর্জ্য নদীর তলা ভরাট করে, পানি ধারণ ক্ষমতা কমিয়ে দেয় ও বন্যার প্রকোপ বৃদ্ধি করে।
২. মানবসৃষ্ট বিপর্যয়:
ক্ষমতাবান ও বিত্তশালী মানুষরা প্রতিনিয়ত নদীকে খুন করে যাচ্ছে। নদীর উপর নির্বিচারে বিধ্বংসী উন্নয়ন প্রকল্প স্থাপন ও নদী দখলের মত কাজ করে নদীকে ধ্বংস করে দিচ্ছে। দখলজনিত কারণে দেশে ১৫৮ টি প্রশস্ত নদী আজ ক্ষীণকায় হয়ে পড়েছে। এগুলোর মধ্যে রয়েছে- বুড়িগঙ্গা, বালু, তুরাগ, বংশী (টঙ্গী), কালিগঙ্গা (মানিকগঞ্জ), ভৈরব, চিত্রা, কপোতাক্ষ ও নবগঙ্গা (যশোর), নরসুন্দা ও কলাগাছিয়া (কিশোরগঞ্জ), সুরমা (সিলেট) ও কর্ণফুলী (চট্টগ্রাম)।
এছাড়া নদী ধ্বংসের সঙ্গে যোগ হয়েছে দেশের ভেতরের অনেক অপতৎপরতা। বাংলাদেশের নদ-নদী ও খাল-বিল অর্থাৎ সামগ্রিকভাবে পানিপ্রবাহের ওপর ৫০ দশক থেকে ধারাবাহিক আক্রমণ এসেছে ‘উন্নয়ন’ নামক বিভিন্ন প্রকল্পের সুবাদে। এসব প্রকল্প করা হয়েছে বন্যা নিয়ন্ত্রণ ও সেচ সুবিধা সম্প্রসারণে বাঁধসহ নির্মাণমুখী কর্মসূচি হিসেবে। কিন্তু বন্যা তো নিয়ন্ত্রণ হয়নি, সেচ সুবিধাও কাজ করেনি; সর্বোপরি মূল লক্ষ্য খাদ্য উৎপাদনেও ব্যাঘাত সৃষ্টি হয়েছে। এর অনেক দৃষ্টান্ত আছে।
৩. জলবায়ু পরিবর্তন:
ওয়ার্ল্ড ক্লাইমেট রিস্ক ইনডেক্স-এর সর্বশেষ তথ্য অনুযায়ী, পৃথিবীর যে-সব দেশ সবচেয়ে বেশি জলবায়ু ঝুঁকিতে আছে, তার মাঝে বাংলাদেশের অবস্থান শীর্ষ দশে। এর আগে বাংলাদেশের বিভিন্ন এলাকায় ১৪টি জলবায়ু ঝুঁকি চিহ্নিত করে দীর্ঘমেয়াদে সমন্বিতভাবে জাতীয় অভিযোজন পরিকল্পনা (ন্যাপ) গ্রহণ করেছিলো সরকার। ন্যাপে বলা হয়েছে, ঐ ১৪টি জলবায়ু ঝুঁকি বা দুর্যোগের হার সময়ের সাথে সাথে বাড়বে। বিশেষজ্ঞদের মতে, ঝুঁকিগুলোর তীব্রতা বাড়ছে বলেই আবহাওয়ার প্যাটার্ন তথা ধরনের পরিবর্তন এসেছে। ঝুঁকিগুলোর মধ্যে অতিবৃষ্টি, অনাবৃষ্টি, নদীতে বন্যা, আকস্মিক বন্যা, নদী ভাঙন, সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতা বৃদ্ধি ইত্যাদি উল্লেখযোগ্য।
ন্যাপে বলা হয়েছে যে প্রতিবছর বাংলাদেশের প্রায় ১০ হাজার হেক্টর জমি নদী ভাঙনের শিকার হয়। বাংলাদেশের ৪১% নদী ব্যাপক ভাঙনের শিকার। সেন্টার ফর এনভায়রনমেন্ট অ্যান্ড জিওগ্রাফিক ইনফরমেশন সার্ভিসের (সিইজিআইএস) তথ্যের বরাত দিয়ে এখানে বলা হয়েছে যে ১৯৭৩ থেকে ২০২১ সালের মধ্যে যমুনা নদীর ভাঙন ছিল প্রায় ৯৪ হাজার হেক্টর এবং বৃদ্ধি ছিল সাড়ে ১৪ হাজার হেক্টর। এই সময়ের মাঝে পদ্মায় সাড়ে ৩৩ হাজার হেক্টরের বেশি জমি ভেঙ্গেছে এবং গড়েছে সাড়ে পাঁচ হাজারেরও কম। এছাড়া, যমুনায়ও ২৫ হাজার ২৯০ হেক্টর জমি বিলীন হয়ে গেছে। সিইজিআইএস বলছে, গত ২২ বছরে পদ্মা ও যমুনা নদীর ভাঙনে পাঁচ লাখেরও বেশি মানুষ গৃহহীন হয়েছে।
বৈশ্বিক উষ্ণায়নের কারণে বাংলাদেশে গত ৩০ বছর ধরে উপকূলবর্তী সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতা প্রতিবছর ৩ দশমিক ৮ থেকে ৫ দশমিক ৮ মিলিমিটার পর্যন্ত বাড়ছে। ইন্টারন্যাশনাল সেন্টার ফর ক্লাইমেট চেঞ্জ অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট (আইসিসিসিএডি)-এর তথ্য অনুযায়ী, সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতা বৃদ্ধির ফলে উপকূলের মানুষের ঘরবাড়ি ও জীবিকা বিপন্ন হওয়ার কারণে ২০৫০ সালের মধ্যে বাংলাদেশের দক্ষিণাঞ্চলের প্রায় নয় লাখ মানুষ বাস্তুচ্যুত হতে পারে।
বাংলাদেশ প্রায় প্রতিবছরই নদ-নদীতে পানির প্রবাহ বেড়ে গেলে বন্যা পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়। ন্যাপে বলা আছে, এসব বন্যায় দেশের শতশত নদ-নদী প্লাবিত হয়ে এবং হাজার হাজার হেক্টরের ফসল সম্পূর্ণভাবে বিনষ্ট হয়ে যায়। অনেক পশুপাখি, এমনকি মানুষও মারা যায়। পলি জমে তলা ভরাট হয়ে বাংলাদেশের ১৮৭ টি নদী শুকিয়ে মৃত্যুবরণ করেছে, যা এদেশের মোট নদীর ২৮% ভাগ। প্রতি বছরে মোট নদীবাহিত পলির পরিমাণ ৩.৮ বিলিয়ন টন, যার মধ্যে ৪০-৪৫ টন নদীর তলায় জমা হয়। এদেশের ৭৭% নদীর মুখে পলি জমে পানি প্রবাহ ব্যাহত হচ্ছে এবং ৭৬% নদীতে পলি জমার হার বৃদ্ধি পেয়েছে।
৪. পানিপ্রবাহ হ্রাস ও বাঁধ নির্মাণ:
শুষ্ক মৌসুম আসলে দেখা যায় শতকরা ৯৭ ভাগ নদীর পানির প্রবাহ ও পরিমাণ হ্রাস পায়। ভারত ও বাংলাদেশের অভিন্ন নদী ৫৪টি। বাংলাদেশের অবস্থান ভাটি অঞ্চলে হওয়ায় উজানে যে কোন ধরনের পানি নিয়ন্ত্রণের প্রত্যক্ষ প্রভাব বাংলাদেশকে ভোগ করতে হয়। বাংলাদেশমুখি ভারত-নেপালের অভিন্ন নদীসমূহের উপর শতসহস্র বাঁধ শুষ্ক মৌসুমে যেমন বাংলাদেশে মরুময় পরিস্থিতি তৈরি করে, তেমনই ভয়াবহ বন্যারও প্রধান কারণ হয়ে দেখা দিয়েছে।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, প্রাকৃতিক নিয়মে নদীর বাড়তি পানিপ্রবাহ স্বাভাবিকভাবে সমুদ্রে গিয়ে পড়তো। মধ্যপথে অসংখ্য, নদী-নালা, খাল-বিল ও জলাশয় এসব পানির বিপুল অংশ ধারণ করে সারা বছরের চাহিদা পূরণ করতো। কিন্তু ভারত ও নেপালে বহু সংখ্যক নদীকেন্দ্রিক প্রকল্প করে বড় বড় আধারে পানি আটকে রাখার ব্যবস্থা করা হয়। এই পানি এমনিতেই এসব আধারকে টুইটুম্বর করে রাখে। এর সঙ্গে বর্ষা মৌসুমে অতিবৃষ্টির বিপুল পরিমাণ পানি যুক্ত হয়ে উপচে পড়ে এবং তা দিক-দিগন্তে ছড়িয়ে পড়ে। এরই পরিণতিতে ভারত, নেপাল ও বাংলাদেশে বন্যা সৃষ্টি করছে বলে বিশেষজ্ঞরা মনে করেন।
এদিকে বন্যায় পানির বিপুল চাপ সামাল দিতে না পেরে ভারত প্রায় প্রতিবছর বাঁধের গেটগুলো খুলে দেয়। ফলে আটকে থাকা বাড়তি পানি প্রবল বেগে বাংলাদেশের দিকে ধেয়ে আসে। যা ভরাট হওয়া নদী-খালসহ এখানকার দুর্বল পানির অবকাঠামোর উপর তীব্র চাপ সৃষ্টি করে। একারণে বিভিন্ন স্থানে বেড়ি-বাঁধগুলো ভেঙে গিয়ে জনপদ ও ফসলি জমি গ্রাস করে বন্যার পানি। একই সঙ্গে লাখ লাখ মানুষ উদ্বাস্তু হয়ে পড়ে প্রতি বছর।
বাংলাদেশে প্রায় ৫৭টি নদীই আন্তর্জাতিক নদী। যার ৫৪টি ভারত থেকে এদেশে প্রবেশ করেছে। কিন্তু এই নদীগুলো বিভিন্ন স্থানে বাধার মুখোমুখি হয়ে বদলে নিচ্ছে গতিপথ। পানির স্রোত স্বাভাবিক থাকছে না। নদীতে যে বাঁধগুলো দেওয়া হচ্ছে- তা কখনও দেওয়া হচ্ছে সেচ প্রকল্পের জন্য, আবার কখনও বা বিদ্যুৎ প্রকল্পের জন্য। বেশিরভাগ বাঁধ নদীর উজানে দেওয়ায় বাংলাদেশে প্রবেশের পর এসব নদী মোটামুটি মৃতপ্রায়। উত্তর দিক থেকে প্রবেশ করা তিস্তার বিভিন্ন স্থানে বাঁধ প্রকল্প নির্মিত হয়েছে।
তিস্তার উজানে ভারতের পশ্চিমবঙ্গে গজলডোবা ইউনিয়নের ১২০ কিলোমিটার উজানে ব্যারেজ তৈরি করা হয়েছে। ২১২.৫৩ কি.মি দীর্ঘ ৪৪টি স্লুইস গেট সহ এই বাঁধটির তিনটি পর্যায় রয়েছে। প্রথম পর্যায় সেচ প্রকল্প, দ্বিতীয় পর্যায় পানি বিদ্যুৎ প্রকল্প আর তৃতীয় পর্যায় গঙ্গা-ব্রহ্মপুত্র সংযোগ খাল খনন করে নৌপথ তৈরি। এসব বাঁধের কারণে জলের প্রাপ্যতা অনেক কমে গেছে। বাঁধ দিয়ে পানি সরিয়ে নেওয়ার পাশাপাশি পলিও সরিয়ে নেওয়া হয়, ফলে নদীর প্রতিবেশের অনেক পরিবর্তন ঘটে।
জলবিদ্যুৎ বাঁধের ক্ষেত্রে পানি ধরে রেখে পরবর্তীতে ছেড়ে দিলেও পলি কিন্তু সেখানে জমা থেকেই যায়। আর তার কারণে নদীর বিভিন্ন জলজ প্রাণী ও উদ্ভিদের খাদ্যশৃঙ্খলেও পরিবর্তন আসে। এমন অনেক সময়ই হয়ে থাকে, নদীর পানি ও তার সঙ্গে বয়ে চলা পলির ওপর নিয়ন্ত্রণ চলে এলে বিভিন্ন জলজ উদ্ভিদ, অণুজীব বিলুপ্ত হয়ে যায় অজান্তেই।
বাংলাদেশ সীমান্ত থেকে ১৮ কিলোমিটার উজানে ভারত গঙ্গা নদীতে বিতর্কিত ফারাক্কা ব্যারাজ চালুর পর গত চার দশকে এটি গঙ্গা অববাহিকায় ব্যাপক পরিবর্তন ঘটিয়ে চলেছে। ফারাক্কা বাঁধ নির্মাণের আগে দেখা যেত ইলিশ মাছ পদ্মা থেকে উজান অঞ্চলে-ভারতের এলাহাবাদ পর্যন্ত সাঁতরে চলে যেত। কিন্তু ফারাক্কা নির্মাণের কারণে এখন ইলিশের বিচরণক্ষেত্র কমে গেছে। ইলিশ বেশ গভীর পানিতে বিচরণ করতে পছন্দ করে। তাই ইলিশের জন্য গভীর খালগুলো সংরক্ষিত রাখতে পারলে জীববৈচিত্র্য হারাবার সম্ভাবনা কম।
বিশেষজ্ঞদের মতে, ফারাক্কা ব্যারেজের বিরূপ প্রভাবে বাংলাদেশের মাটির উর্বরতা কমে গেছে, প্রায় ২১ শতাংশ অগভীর নলকূপ ও ৪২ শতাংশ গভীর নলকূপ ব্যবহার অনুপযোগী হয়ে পড়েছে। গঙ্গা পানি বণ্টন চুক্তি অনুযায়ী ২০ হাজার কিউসেক পানির ভাগ নিশ্চিত করে যেখানে বাংলাদেশ বাঁধ নির্মাণের আগে শুষ্ক মৌসুমে ৭০ হাজার কিউসেক পানি পেত। ফারাক্কা ব্যারেজের কারণে দেশের প্রায় ২ হাজার কিলোমিটার নৌপথ বন্ধ, হাজার হাজার জেলে কর্মসংস্থান হারিয়েছে, বিশ্বের বৃহত্তম ম্যানগ্রোভ সুন্দরবনের ১৭ শতাংশ লবণাক্ততায় হারিয়ে গেছে।
একটি সমীক্ষায় দেখা যায়, ফারাক্কা ব্যারেজের কারণে ১৯৭৫ থেকে ১৯৯২ সাল পর্যন্ত বাংলাদেশের সামগ্রিক ক্ষতি হয়েছে এক লাখ ৮ হাজার ৫০০ কোটি টাকা। এরপর থেকে আজ পর্যন্ত প্রতি বছর প্রায় ৫ হাজার কোটি টাকা লোকসান হচ্ছে। এছাড়া ভারত আগামী ৫০ বছরের ক্রমবর্ধমান পানির চাহিদা পূরণের লক্ষ্যে গঙ্গা, ব্রহ্মপুত্র এবং এর সকল অববাহিকার নদ-নদীর পানি বাঁধ, জলাধার ও সংযোগ খালের মাধ্যমে প্রত্যাহার করে ভারতের বিভিন্ন রাজ্য ঘুরে দক্ষিণের কাবেরী নদী পর্যন্ত টেনে নেবে এবং রাজস্থানের থর মরুভূমিসহ ঐ সকল রাজ্যের খরাপীড়িত অঞ্চলে পানি সরবরাহের জন্য যে মহাপরিকল্পনা হাতে নিয়েছে এটাই River Linking Project বা আন্ত:নদী সংযোগ প্রকল্প।
এই প্রকল্পের অধীনে ৯ হাজার ৬০০টি খাল খননের মাধ্যমে নিজ সীমানায় ৪৪টি নদীকে সংযুক্ত করার পরিকল্পনা রয়েছে ভারতের। ভারতের নদীকেন্দ্রিক কর্মপরিকল্পনার লক্ষ্য প্রধানত তিনটি।
১. কৃষি জমিতে সেচ ব্যবস্থার সম্প্রসারণ,
২. জলবিদ্যুৎ উৎপাদন এবং
৩. বন্যা নিয়ন্ত্রণ।
বাংলাদেশের অভ্যন্তরে প্রবহমান নদীগুলোর উৎস মুখে বাঁধ নির্মাণের ফলে বাংলাদেশের অসংখ্য নদী তার নব্যতা হারিয়ে ফেলেছে। নৌ-যোগাযোগ বারো ভাগের ১ ভাগে নেমে এসেছে।
বাংলাদেশের মাটির আভ্যন্তরীণ পানির স্তর আশাংকাজনকভাবে নিচে নেমে গেছে। সেচ ব্যবস্থা বিপন্ন হয়ে পড়েছে। প্রতিবছর বন্যা কবলিত হয়ে পড়ছে বিশাল অঞ্চল। এছাড়া অতিবৃষ্টি বা বাঁধের জলাধারে অতিরিক্ত পানি জমে যাওয়ার ফলে মাঝে মাঝে কর্তৃপক্ষ এসব বাঁধের গেইট খুলে দিতে বাধ্য হয়। তখন আকস্মিক বন্যায় তলিয়ে যায় বাংলাদেশ, ভারতের বিশাল অংশ। বাংলাদেশের নদীসমূহের এমন করুন দশার দিকে দ্রুত নজর না দিলে দশক দুয়েকের মধ্যে বাংলাদেশের অস্তিত্ব পুরোপুরি সংকটে পড়বে। এই সংকট মোকাবেলায় অতিদ্রুত কিছু পদক্ষেপ নেয়া জরুরি হয়ে পড়েছে।
১. ন্যায্য হিসাব অনুযায়ী পানি বণ্টন:
বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় সমস্যা বর্ষা মৌসুমে ঘন ঘন ও আকস্মিক বন্যায় তলিয়ে যাওয়া আর শুষ্ক মৌসুমে পানির তীব্র অভাব দেখা দেয়া। এসময় বাংলাদেশে একটা অভিযোগ ব্যাপক ভাবে ছড়িয়ে পড়ে। তা হলো ভারত বাংলাদেশকে তার ন্যায্যতা অনুযায়ী আন্তর্জাতিক নদীর পানি ব্যবহারের সুযোগ দেয় না। বাংলাদেশের ৫৭ টা আন্তর্জাতিক নদীর ৫৪ টি ভারতের সাথে। এর মধ্যে অন্তত ৩০ টি নদীতে ভারত বিভিন্নভাবে বাঁধ দিয়ে পানি প্রবাহ কমিয়ে দিয়েছে। এর ফলে শুষ্ক মৌসুমে বাংলাদেশে যেমন পানির অভাব দেখা দেয়, তেমনি বর্ষায় বাঁধের অতিরিক্ত পানি খুলে দেয়ার কারণে আকস্মিক বন্যায় তলিয়ে যায়।
আন্তর্জাতিক নদী আইন অনুযায়ী একটি নদী যদি দুই বা ততোধিক রাষ্ট্রের ওপর দিয়ে প্রবাহিত হয় তবে ঐ নদীর পানি সম্পদের ব্যবহার আন্তর্জাতিক আইন অনুযায়ী পরিচালিত হবে। আন্তর্জাতিক নদীর ব্যবহার সম্পর্কে ১৮১৫ সালের ভিয়েনা সম্মেলন, ১৯২১ সালে দারিপুর নদী কমিশন কর্তৃক প্রণীত আইন, আন্তর্জাতিক নদীর পানি ব্যবহার সংক্রান্ত ১৯৬৬ সালে আন্তর্জাতিক আইন সমিতির হেলসিংকি নীতিমালার ৪ ও ৫নং অনুচ্ছেদ, ১৯৯২ সালের ডারলিন নীতিমালার ২নং নীতি, প্রতিটি ক্ষেত্রে ভাটির দেশের স্বার্থ রক্ষিত হয়েছে।
আন্তর্জাতিক আইন সমিতির হেলসিংকিং নীতিমালার ৪ ও ৫নং অনুচ্ছেদে বলা হয়েছে, প্রতিটি অববাহিকাভুক্ত রাষ্ট্র, অভিন্ন নদীসমূহ ব্যবহারের ক্ষেত্রে অবশ্যই অন্য রাষ্ট্রের অর্থনৈতিক, সামাজিক প্রয়োজনকে বিবেচনায় নিতে হবে। তা অবশ্যই অন্য রাষ্ট্রের কোনো ক্ষতি না করেই হতে হবে।
এ সম্পর্কে প্রখ্যাত আন্তর্জাতিক আইন বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক ওপেনহেইম বলেন,
‘‘কোন রাষ্ট্রকে নিজ ভূখণ্ডের প্রাকৃতিক অবস্থা এমন করে পরিবর্তন করতে দেয়া যাবে না যার ফলে প্রতিবেশী কোন রাষ্ট্রের ভূখন্ডের প্রকৃত অবস্থায় কোন অসুবিধা সৃষ্টি করতে পারে।’’
আন্তর্জাতিক নিয়মকে তোয়াক্কা না করে ভারত বাঁধ নির্মাণ করলেও পরবর্তীতে বাংলাদেশ বিভিন্ন সমঝোতায় গিয়ে অধিকার আদায়ের লড়াই করতে থাকে। এরই ধারাবাহিকতায় ১৯৯৬ সালে ৩০ বছর মেয়াদি গঙ্গা পানি বণ্টন চুক্তি সাক্ষরিত হয়। এই চুক্তি অনুযায়ী যে কোনো সংকটের সময় বাংলাদেশকে ৩৫,০০০ কিউসেক পানি সরবরাহ করা হবে। যদিও অভিযোগ রয়েছে, এ চুক্তি অনুযায়ী বাংলাদেশ পানি সঠিকভাবে পায় না। এছাড়া এ চুক্তির মেয়াদও ২০২৬ সালে শেষ হতে যাচ্ছে। সম্প্রতি চুক্তি নবায়নের বিষয়ে দুই দেশের প্রধানমন্ত্রীর মধ্যে আলোচনা হলেও তীব্র আপত্তি জানান পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। ফলে এ চুক্তির ভবিষ্যৎ নিয়েও সংশয় দেখা দিয়েছে।
তাই বাংলাদেশের নায্য অধিকার পাওয়ার জন্য জাতীয় ও আন্তর্জাতিক পর্যায়ে ব্যাপক জনমত ও আলোচনা করতে হবে। দু’দেশের পররাষ্ট্রনীতিতে এ বিষয়টির গুরুত্ব তুলে ধরতে হবে। কারণ শুষ্ক মৌসুমে প্রয়োজনীয় পানি সরবরাহের কথা বলে যদি সেখানে চাহিদা অনুযায়ী কম পানি দেয়া হয় সেক্ষেত্রে তা গুরুত্বের সাথে দেখতে হবে। দেশকে বাঁচাতে হলে নদী বাঁচাতে হবে।
প্রতিবেশী দেশ ভারতের সাথে গঠনমূলক ও সৃজনশীল আলোচনায় ফারাক্কাসহ সকল সমস্যা মিটিয়ে ফেলতে হবে। চীন, ভারত, নেপাল ও ভূটানসহ প্রতিবেশী দেশগুলোর সঙ্গে পানি সমস্যার সমাধানে আঞ্চলিক সহযোগিতা জোরদার করতে হবে। সাথে সাথে এ লক্ষ্যে আঞ্চলিক নদী কমিশন গঠন করা ও আন্তর্জাতিক নদীর পানি ব্যবহারের নিয়মনীতির বাস্তব প্রয়োগ ঘটানো ও তদারকি করতে হবে। ভারত আন্তর্জাতিক নদী আইন মানতে না চাইলে আন্তর্জাতিক আদালতে শরণাপন্ন হওয়া।
২. বাঁধ প্রতিরোধী ব্যবস্থা:
সাম্প্রতিক সময়ে দেশের দক্ষিণাঞ্চল, দক্ষিণ-পূর্বাঞ্চলসহ দেশে তীব্র বন্যার কারণে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে একটা দাবি উত্থাপিত হয়েছে। দাবি অনুযায়ী বাঁধের প্রতিরোধে দেশের অভ্যন্তরে আরেকটি বাঁধ নির্মাণ করে বন্যা ও পানির অভাব মোকাবেলা করা হবে। কিন্তু এটা কখনোই বাস্তবসম্মত বা স্বাভাবিক সমাধান নয়। বাংলাদেশ ভাটির দেশ। নদীর পানির ধর্ম উজান থেকে ভাটির দিকে প্রবাহিত হবে। বাংলাদেশের অভ্যন্তরে বাঁধ দিলে বাঁধ পরবর্তী নদী পানির অভাবে বলি দিয়ে পূর্ণ হয়ে যাবে।
দ্বিতীয়ত, ভরত থেকে বেশি উচ্চতার বাঁধ দিয়ে ভারত যখন বাঁধ খুলে দিবে তখন বাংলাদেশের বাঁধ বন্ধ করে দিলে বন্যার পানি পুনরায় ভারতে চলে যাবে। ব্যাপারটা কিন্তু এভাবে ঘটবে না। নদীর পানি সবসময় বাংলাদেশের দিকেই আসবে। বাংলাদেশে কোনো বাধা সৃষ্টি হলে সেই বাধা অতিক্রম করে যেকোনো ভাবেই সেই পানি বঙ্গোপসাগরে পতিত হবে। সেটি হতে পারে বাঁধ ভেঙ্গে অথবা নদীর গতিপথ পরিবর্তন করে। সবশেষে কিন্তু বাংলাদেশেরই ক্ষতি হবে।
এই ক্ষতি থেকে কাটিয়ে উঠতে সেচ প্রকল্প বা মেগা স্কেলে রিজার্ভার প্রকল্প হাতে নিতে হবে। খুব সহজ ভাষায় যদি বলি, নদীর প্যারালালে একটা কৃত্রিম খাল/রিজার্ভার খনন করে রেখে বন্যার সময় নদীর পানি উপচে এই খাল/রিজার্ভারে জমা হবে। যা খরার মৌসুমে চাষাবাদের কাজে ব্যবহার করা যাবে। তবে এক্ষেত্রে ফসলি জমির উর্বরতা কমে যাওয়ার খুব সম্ভবনা রয়েছে। কারণ বন্যার পানির সাথে যে পলি আসবে সেগুলো কৃষি জমিতে না গিয়ে খালে জমা হবে।
এছাড়া নদীর নাব্যতা রক্ষা করেও এই সমস্যা কাটিয়ে উঠা যাবে। বাংলাদেশ ঘনঘন বন্যা হওয়ার পেছনে অন্যতম বড় কারণ হচ্ছে ভারতীয় অংশে বাঁধ থাকার কারণে বাংলাদেশি অংশে নদীর প্রস্থতা এবং গভীরতা কমে যাওয়া। নদীর এই ক্ষয়ে যাওয়া নাব্যতাকে পরিকল্পিত ড্রেজিং বা অন্য কোন উপায়ে রক্ষা করতে পারলেও বন্যার ক্ষয়ক্ষতি কমানো সম্ভব।
৩. তথ্য বিনিময়:
ভারত শুধু বাঁধ দিয়েই বাংলাদেশের পানি বঞ্চিত করছে না, বরং বাংলাদেশকে তথ্য সহযোগিতা না করেও বড় ক্ষতির সম্মুখীন করছে। সাম্প্রতিক সময়ে গৌমতি নদীর উপর ডম্বুল বাঁধ খুলে দেয়ার আগে সতর্ক না করার কারণে বাংলাদেশে তীব্র অসন্তোষ দেখা গিয়েছে। এজন্য ভারতকে আগে থেকে সতর্ক করার জন্য চাপ দিবে বাংলাদেশ।
এছাড়া ভারত চাইলে বাঁধগুলোকে স্মার্ট বাঁধ বানিয়ে নিতে পারে। বাঁধ এর নিচে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা সম্পন্ন সেন্সর লাগিয়ে এই কাজ করা যাবে। এসব সেন্সর বাঁধ সংলগ্ন এলাকার তথ্য, বাঁধের স্থায়িত্ব, পানির অবস্থা, স্রোতের প্রবাহ, ভূ-পৃষ্ঠ ও ভূগর্ভস্থ পানির স্তর, পানির গুণমান, পানির দূষণের মাত্রা এসব পরিমাপ করতে পারে। এতে করে যেমন জনবল ও ব্যয় সংকোচন হবে তেমনিভাবে আগাম সতর্কতা পাওয়া যাবে।
এছাড়া বাংলাদেশ ও ভারতের নদীতে হাইড্রোলজিক্যাল জরিপ হতে পারে। বাংলাদেশে আন্তর্জাতিক নদী সম্পর্কে যথাযথ ও পর্যাপ্ত তথ্যের অভাবে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করতে পরে না। এর ফলে বাংলাদেশের নদী দিন দিন অতিমাত্রায় দূষিত হয়ে যাচ্ছে। নদীর পানির ধরন পরিবর্তন হয়ে যাচ্ছে। জীববৈচিত্র্য হারিয়ে ফেলছে। যথাযথ ও পর্যাপ্ত তথ্যের বিশ্লেষণ করে বাংলাদেশ তার নদী সম্পর্কে উপর্যুক্ত ব্যবস্থা নিতে সক্ষম হবে।
সর্বশেষে বলতে হয়, বাংলাদেশের নদী বাংলাদেশের অস্তিত্বের ধারক বাহক। নদী হারিয়ে গেলে বাংলাদেশের অস্তিত্বও হারিয়ে যাবে অতল গহ্বরে। এদেশের অস্তিত্ব, জীববৈচিত্র্য, জনজীবন ইত্যাদি স্বাভাবিক রাখতে বাংলাদেশের মানুষকে নদী বাঁচাতে এগিয়ে আসতে হবে। নদীকে দখলমুক্ত করে, দূষণমুক্ত করে হারানো ঐতিহ্য ফিরিয়ে আনলেই বাংলাদেশ এগিয়ে যাবে। এগিয়ে যাবে এদেশের মানুষের জীবন।
মোহাম্মদ রিফাতুল ইসলাম মারুফ / নিজস্ব প্রতিবেদক
তথ্যসূত্র: প্রথম আলো, সায়েন্স ডাইরেক্ট, ডয়চে ভেলে