বর্তমান পৃথিবীর অবস্থা নিয়ে খুব অসন্তুষ্ট? এই সব মহামারি, নষ্ট রাজনীতি বা পরিবেশ নিয়ে হতাশ? তাহলে আপনার কানে কানে একটা সুখবর দিয়ে খবরটা শুরু করতে চাই। একটা নতুন, একেবারেই আনকোরা একটা গ্রহ আবিষ্কার হয়েছে যেটা আপনার জন্য একদমই যথাযথ হতে পারে, যদি আপনি নিজেই সেখানে যাবার ব্যবস্থা করতে পারেন!
জ্যোতির্বিজ্ঞানীরা জানিয়েছেন, তারা পৃথিবীর মত একটি বাসযোগ্য গ্রহ পেয়েছেন যা এখন পর্যন্ত আবিষ্কৃত বাসযোগ্য গ্রহগুলোর মধ্যে সবচেয়ে কাছাকাছি। আশ্চর্যজনক হলেও সত্যি, এই নতুন গ্রহ কোন আধুনিক স্পেস টেলিস্কোপ আবিষ্কার করেনি, বরং করেছে প্রায় কর্মহীন মৃত একটা স্পেস টেলিস্কোপ।
আপাতত নতুন গ্রহের নাম হয়েছে কেপলার-১৬৪৯সি। এটি একটি পাথুরে গ্রহ,যা পৃথিবী থেকে মাত্র ৬% বড়। এই মাসেই এস্ট্রোফিজিক্যাল জার্নাল লেটারসে প্রকাশিত হয়েছে, গ্রহটি একটি ‘লাল বামন তারা’ কে প্রদক্ষিণ করছে এবং এমন এক দূরত্বে অবস্থান করছে, যেখানে পর্যাপ্ত আলো, তরল পানি আর জীবন থাকার সম্ভাবনা রয়েছে, যাকে বিজ্ঞানীরা সাধারণত হ্যাবিটেবল জোন বলে থাকেন।
হয়ত সুপারম্যানের ক্রিপটন গ্রহের মত শোনাচ্ছে ব্যাপারটা। এখন পর্যন্ত কোন প্রমাণ পাওয়া যায়নি যে ওখানে এলিয়েন আছে, কিন্তু এই সম্ভাবনাকেও উড়িয়ে দেওয়া যাচ্ছে না যে অন্য কোনো প্রাণি নেই।
গ্রহটির নামকরণ করা হয়েছে এর আবিষ্কারক টেলিস্কোপ এর নামানুসারে, “কেপলার/কে২ স্পেস টেলিস্কোপ”। এই টেলিস্কোপটি তার চার বছরের মিশনে প্রচুর পরিমাণ ডাটা পৃথিবীতে পাঠিয়েছে যা বিজ্ঞানীদের সম্ভাব্য পৃথিবী সদৃশ গ্রহ সম্পর্কে বুঝতে সাহায্য করেছে। দীর্ঘ মিশনে তার পাওয়ার সাপ্লাই বন্ধ হয়ে যাবার আগ পর্যন্ত এটি প্রায় ২,০০,০০০ টির মত নতুন তারার সন্ধান পেতে সাহায্য করেছে।
একটি কম্পিউটার এ্যালগরিদম এই নতুন গ্রহকে মরিচিকা ধরে এর সম্ভাবনাকে প্রায় উড়িয়েই দিচ্ছিল, কিন্তু বিজ্ঞানীরা থেমে থাকেননি। তারা আরো উপাত্ত সংগ্রহ করেন এবং দ্বিতীয় বারের চেষ্টায় গ্রহটিকে শনাক্ত করেন।
ফোর্বসকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে জেফ কফ্লিন বলেন, “আকার আকৃতি এবং তাপমাত্রার দিক থেকে এটিই পৃথিবীর সবচেয়ে বেশি কাছাকাছি গ্রহ যা এখন পর্যন্ত কেপলারের সাহায্যে পাওয়া গেছে”, তিনি এখন SETI ইন্সটিটিউট এ কাজ করছেন, যা মহবিশ্বের অন্যপ্রান্তে প্রাণের সন্ধানে নিয়োজিত।
তিনি আরো বলেন, “আমার খুব আশ্চর্য লাগছে এটা ভেবে যে, উপাত্ত সংগ্রহের সাত বছর পর আমরা গ্রহটা খুঁজে পেয়েছি যখন কেপলার তার কাজ থেকে অবসর নিয়েছে !”
নাসা কেপলার-১৬৪৯ সি কে বাসযোগ্য গ্রহের স্বীকৃতি দিয়েছে যা অনেকদিন চোখের আড়ালে ছিল! নাসা তাদের ওয়েবসাইটে আরও বলেছে, ৩০০ আলোকবর্ষের ভেতর এখন পর্যন্ত যত এক্সোপ্ল্যানেট পাওয়া গেছে তার ভেতর এটাই পৃথিবীর প্রায় সমান এবং তাপমাত্রায় কাছাকাছি। এই এক্সোপ্ল্যানেট এর ব্যাপারে একটু হেঁয়ালি আছে।
প্রসঙ্গক্রমে বলে রাখি, এক্সোপ্ল্যানেট হলো, যে গ্রহগুলো পৃথিবীর সৌরজগতের মতোই অন্য কোনো নক্ষত্রকে ঘিরে ঘুরে। কিন্তু এক্সোপ্ল্যানেটের নক্ষত্র গুলোকে “এম-ডোয়ার্ফ” নামকরণ করা হয়। জ্যোর্তির্বিজ্ঞানীরা বলছেন, “এমন বামন ধরণের নক্ষত্রগুলি সাধারণত আমাদের সূর্যের মত ভারী নক্ষত্রের তুলনায় জীবনধারণের জন্য কম উপযোগী হয়, কিন্তু কিছু নক্ষত্রের গ্রহের ক্ষেত্রে হয়ত ব্যাপারটা সম্ভব হয়েছে”
সোজা কথায় বলতে গেলে, বিজ্ঞানীরা এখনো নিশ্চিত নন এই ধরণের নক্ষত্র কোনো প্রাণ ধারণ করতে সক্ষম এমন কোনো গ্রহের জন্য ভালো না খারাপ!
কেপলার তার বন্ধ হয়ে যাবার আগ পর্যন্ত ৪১৪৪ টি গ্রহ আবিষ্কার করে গেছে, বিশেষত ‘Goldilocs’ অঞ্চলে, যেখানে সম্ভাব্য প্রাণ সম্পন্ন গ্রহ থাকতে পারে। কেপলার এর মত আরেকটি স্পেস টেলিস্কোপ, যার নাম TESS, ২০১৮ সাল পর্যন্ত তার গ্রহ খোঁজার অভিযান চালিয়ে গেছে।
এখন পরিবর্তী কাজ হলো কেপলার-১৬৪৯ সি তে জীবনের অস্তিত্ব প্রমাণের জন্য এর আবহাওয়া পর্যবেক্ষণ। এ বিষয়ে এই পর্যবেক্ষনের সহকারী লেখক পামেলা রোডেন বলেন, “একই সময়ে আমরা এই পাথুরে গ্রহে পানির সন্ধান করে যাচ্ছি, হয়ত ২০ বা ৩০ বছরের ভেতর আমরা সে বিষয়ে ঘোষণা দিতে সক্ষম হব”।
হয়তো, যদি না তারা (ভিনগ্রহবাসীরা) আমাদেরকে আগে খুঁজে না পায়!
ঋভু / নিজস্ব প্রতিবেদক