ধরুন, একটি প্লাস্টিকের বোতল আপনি ড্রেনে ফেলে দিলেন। এটি এখন কোথায় যাবে? অবশ্যই ড্রেন থেকে খাল, খাল থেকে নদী, নদী থেকে সোজা সমুদ্রে। সমুদ্রে গিয়ে প্লাস্টিকের এই আবর্জনাগুলো একেকটা বিশাল স্তূপ তৈরি করছে। অবাক করার মতো হলেও সত্যি, প্রশান্ত মহাসাগরের প্লাস্টিকের স্তূপ এর আয়তন ফ্রান্সের তিন গুণ হবে। পানির ওপরে ভাসমান মাইলের পর মাইল প্লাস্টিকের আবর্জনা দেখলে মনেই হবে না যে এটা কোনো সমুদ্রের ছবি৷ সমুদ্রে গিয়ে আবর্জনাগুলো অতি ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র কণায় পরিণত হয় যার কারণে সমুদ্র প্রায় দেখা যায় না বললেই চলে।
এখন প্রশ্ন হচ্ছে, এসব ময়লা আবর্জনা কি সামুদ্রিক বাস্তুতন্ত্রের ক্ষতি করছে?
হ্যাঁ, অবশ্যই ক্ষতি করছে। তবে প্রকৃতি কিন্তু এর সাথে নিজেকে মানিয়ে নেয়ার পথও বের করে ফেলেছে। বিজ্ঞানীরাও এই ব্যাপারে বেশ অবাক হয়েছিলেন যখন তারা প্রথম বিষয়টি পর্যবেক্ষণ করেন।
আমেরিকার জর্জটাউন ইউনিভার্সিটির মেরিন বায়োলজিস্ট রেবেকা হেলম বলেন,
“সমুদ্রের যে স্থানগুলোকে আমরা আবর্জনার অর্থাৎ, প্লাস্টিকের স্তূপ হিসেবে চিহ্নিত করেছি সেগুলো আসলে সামুদ্রিক বাস্তুতন্ত্রে একটি বড় ভূমিকা রাখছে এবং এ বিষয়ে আমরা খুব অল্পই জানতাম।”
সমুদ্রে ভাসমান এইসব আবর্জনাতে প্রাণের সন্ধান মিলেছে যা থেকে ধারণা পাওয়া যায় প্রকৃতি কিভাবে আবর্জনার মধ্যে নিজেকে খাপ খাওয়াচ্ছে। এইসব আবর্জনার স্তূপে সমুদ্রের উপরিতলে ভাসমান ও তীরবর্তী অঞ্চলের প্রায় কয়েক ডজন প্রজাতির ক্ষুদ্র জীবের সন্ধান পেয়েছেন বিজ্ঞানীরা। এদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো নীল সি ড্রাগন ও জেলিফিশ যারা বসবাস ও আত্মরক্ষার ক্ষেত্রে প্লাস্টিকের টুকরোকে ব্যবহার করছে।
যুক্তরাষ্ট্রের জাতীয় খাদ্য ও কৃষি ইনিস্টিউটের বিজ্ঞানীদের একটি দল ২০১৮ ও ২০১৯ এর মাঝামাঝিতে তিন মাস ধরে সামুদ্রিক আবর্জনার নমুনা নিয়ে গবেষণা চালান৷ ১০৫ টি নমুনা হতে তারা প্রায় ৪৬ প্রজাতির সামুদ্রিক ক্ষুদ্র জীবের সন্ধান পান যাদের অধিকাংশরই দেখা মেলে সমুদ্র তীরবর্তী অঞ্চলগুলোতে। বড় আকারের প্রাণীগুলোও এর সাথে খাপ খাওয়াচ্ছে কিনা তা নিয়ে এখনও গবেষণা চলছে। কিছু প্রজাতির মাছ, সামুদ্রিক পাখি ও কচ্ছপের অন্ত্রে ক্ষুদ্র আবর্জনার ও আবর্জনায় বসবাসকারী জীবের অস্তিত্ব পেয়েছেন বিজ্ঞানীরা যা থেকে বোঝা যায় যে বড় মাপের প্রাণীও খাদ্য হিসেবে এদের গ্রহণ করছে।
আমেরিকার ওয়েস্টার্ন রিভার্স ইউনিভার্সিটির সমুদ্র বিজ্ঞানী এন উইলিয়াম ওমটা বলেন,
“এটা খুবই উল্লেখযোগ্য একটি সন্ধান। কারণ প্লাস্টিক তো এমনিতেই জীবের জন্য ক্ষতিকর হিসেবে বিবেচিত। তাছাড়াও প্রশান্ত মহাসাগরের পানিতে বসবাসকারী জীবের জন্য আবর্জনার স্তূপে প্রয়োজনীয় পুষ্টিকর পদার্থের পরিমাণও অনেক কম।”
সামুদ্রিক বাস্তুতন্ত্রে এর প্রভাব কতোখানি এবং সমুদ্রের সব জায়গাতেই কি একই বাস্তুতন্ত্র গড়ে উঠছে কিনা এ বিষয়ে জানতে বিজ্ঞানীরা এখনও কাজ করে যাচ্ছেন। ভবিষ্যতে হয়তো সামুদ্রিক প্রকৃতির বৈচিত্র্যতা আমরা আরো ভালোভাবে জানতে পারবো।
তাই বলে যদি সত্যিই আপনি প্লাস্টিক সমুদ্রে ফেলে থাকেন তাহলে কিন্তু প্রকৃতির জন্য ভালো কিছু হবে না। এটি আসলেই ক্ষতিকর। প্রকৃতি শুধু এই ক্ষতি কাটিয়ে ওঠার চেষ্টা করছে। আমাদের উচিত এ সময় প্রকৃতিকে সাহায্য করা ও ক্ষতিকর বিষয়গুলো চিহ্নিত করে সে অনুযায়ী প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ করা।
মুরছালিন রহমান / নিজস্ব প্রতিবেদক
সোর্স: ন্যাশনাল জিওগ্রাফিক, সিএনএন