‘এনভায়রনমেন্টাল ওয়ার্কিং গ্রুপ‘ পরীক্ষাগারে ‘ট্যাল্ক’ ভিত্তিক প্রসাধনীর পরীক্ষা করে জানায় যে, “ট্যাল্ক ভিত্তিক প্রসাধনীতে অ্যাসবেস্টস রয়েছে, যা একটি মারাত্মক কার্সিনোজেন অর্থাৎ এর জন্য মানবদেহে ক্যান্সার হতে পারে।”
‘এনভায়রনমেন্টাল হেলথ ইনসাইটস’ জার্নালে প্রকাশিত হয়, “সুপরিচিত ব্যান্ডের বডি ও ফেসিয়াল পাউডারে ট্যাল্ক ব্যবহার করা হয়, যা থেকে শ্বাস কষ্ট হতে পারে।”
(অ্যাসবস্টেস হচ্ছে প্রাকৃতিক ভাবে প্রাপ্ত ছয় সিলিকেট খনিজের একটি সেট, রেশম ও পশমের চারিত্রিক বৈশিষ্ট্যের সাথে এই খনিজের মিল রয়েছে)
EWG এর ভাইস প্রেসিডেন্ট নিনিকা লাইবা বলেছেন, “আমাদের স্কিন ডিপ অনলাইন ডাটাবেসে আমরা ২০০০ টির বেশি ব্যক্তিগত যত্নের পণ্য সনাক্ত করেছি, যেগুলোতে ট্যাল্ক ব্যবহার করা হয়েছে। সনাক্ত করা পণ্যের মাঝে আছে ১০০০ টির ও বেশি প্রেসড বা লাইট পাউডার, যা দেহের ভেতরে গেলেও মারাত্মক ক্ষতির সম্ভাবনা রয়েছে।”
চলতি বছরের মে মাসে ‘জনসন এন্ড জনসন’ কোম্পানি কানাডা ও যুক্তরাষ্ট্রে তাদের ট্যাল্ক ভিত্তিক বেবি পাউডার বিক্রি বন্ধের ঘোষণা দেয়। তখন হাজার হাজার মানুষ দাবি করেছিল যে ট্যাল্ক ভিত্তিক জনসন বেবি পাউডার ক্যান্সারের কারণ, তাই তারা কোম্পানিটির বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করেছিল।
‘EWG’ এর একজন প্রবীণ বিজ্ঞানী তাশা স্টোবার বলেছেন, “ট্যাল্কে থাকা অতি ক্ষুদ্রতম পরিমাণ অ্যাসবেস্টসও শ্বাসকষ্ট, মেসোথেলিয়োমা এবং অন্যান্য মারাত্মক রোগের কারণ হতে পারে।” তিনি আরও বলেছেন, “ঠিক কতটুকু পরিমাণ ট্যাল্ক আপনার দেহে প্রবেশ করলে আপনি এসব রোগে আক্রান্ত হবেন তা জানা খুবই কঠিন কিন্তু আপনার ফুসফুসে একবার অ্যাসবেস্টস এর একটি ছোট তন্তু আটকে যাওয়াই আপনার ক্যান্সার, মেসোথেলিয়োমা বা অ্যাসবেস্টোসিস এর মত মারাত্মক রোগের কারণ হতে পারে।”
একটি প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, “মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে অ্যাসবেস্টসের খুব কম পরিমাণ ব্যবহার সত্ত্বেও অল্প বয়সীদের মধ্যে মেসোথেলিয়োমাতে আক্রান্ত হয়ে মৃত্যুর পরিমাণ খুবই বেশি। ‘EWG অ্যাকশন ফান্ড’ অনুমান করেছে যে, প্রতিবছর ১৫,০০০ জন আমেরিকান মানুষ অ্যাসবেস্টস এর প্রভাবে হওয়া বিভিন্ন রোগে মারা যায়।”
ভূতাত্ত্বিকভাবে, ট্যাল্ক এবং অ্যাসবেস্টস একই রকম আদি শিলা দিয়ে গঠিত, যা প্রসাধনী শিল্পে ব্যবহার করা হয়। ট্যাল্ক আর্দ্রতা শোষণ করতে সক্ষম, তাই প্রসাধনী শিল্পে এর ব্যবহার ব্যাপক। যেসকল পণ্যগুলোতে অ্যাসবেস্টসের উপস্থিতি রয়েছে, সেসকল পণ্য পরীক্ষা করা হয় গ্রিসবারো, এন.সি এর ‘বৈজ্ঞানিক বিশ্লেষণমূলক ইন্সটিটিউট‘-এ। পরীক্ষায় দেখা যায়, নানা রকম ফেইস ও বডি পাউডার, আই শ্যাডো, ফাউন্ডেশন ইত্যাদিতে অ্যাসবেস্টস পার্টিকেল আছে।
প্রসাধনী সামগ্রীতে যে ট্যাল্ক রয়েছে তা দীর্ঘদিন ব্যবহারের ফলে ফুসফুস এবং ত্বকে ক্যান্সার হতে পারে। শুধু ক্যান্সার নয়, শ্বাসকষ্টসহ অনেক জটিল রোগ হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। তাই প্রসাধনীতে ট্যাল্কের ব্যবহার নিষিদ্ধ করে জনগণের সুরক্ষা নিশ্চিত করতে হবে। ট্যাল্ক ভিত্তিক প্রসাধনী ব্যবহার করার পূর্বে তা পরীক্ষা করে নেওয়া উচিত, সেখানে কোনো অ্যাসবেস্টসের উপস্থিতি আছে কি না।
মার্চ ২০১৯ এ রিপোর্টার ডেবি ডিঙ্গেল একটি আইন প্রস্তাব করেছিলেন, যেখানে উল্লেখ ছিল “অ্যাসবেস্টসের পণ্যগুলোতে সর্তকতা লেবেল ব্যবহার করতে হবে।”
এই ডিঙ্গেল বিল অনুসারে, “কোম্পানি গুলোকে প্রসাধনী সামগ্রী যে অ্যাসবেস্টস মুক্ত তা আগে প্রমাণ করতে হবে, আর যদি প্রমাণ করতে না পারে তবে প্রসাধনী সামগ্রীতে সতর্কতামূলক লেবেল ব্যবহার করতে হবে। কারণ, ট্যাল্কের তৈরি প্রসাধনীতে অ্যাসবেস্টসের উপস্থিতিই ক্যান্সার হওয়ার প্রধান কারণ!”
নিজস্ব প্রতিবেদক/ আমেনা আঁখি
তথ্যসূত্রঃ সাইন্সটেক ডেইলি।