সাধারণ আমরা যে টিকা গুলো গ্রহণ করি সেগুলো বিভিন্ন ডোজের হয়ে থাকে। কোনোটি দুই বা তারও বেশি ডোজের হয়ে থাকে। সম্প্রতি ইউনিভার্সিটি অফ কানেকটিকাটের নেচার বায়োমেডিকেল ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের প্রফেসর Thanh Nguyen মানব শরীরে সিংগেল ডোজের পরিবেশবান্ধব মাইক্রোনিডল টেকনোলজির বিষয়ে একটি গবেষণা পত্র প্রকাশ করেছে। এই মাইক্রোনিডলগুলো নিজেই নিজের শরীরে ব্যবহার করা যাবে এবং কারো সাহায্য প্রয়োজন হবে না। যা বর্তমানে এবং ভবিষ্যতে অনেক বেশি কার্যকরী হতে পারে৷
এর আগেও Thanh Nguyen ২০১৭ সালে SEAL (StampEd Assembly of Polymer Layer) নামক পরিবেশবান্ধব প্রযুক্তি ব্যবহার করে সিংগেল ডোজের টিকা তৈরির চেষ্টা করেছিলেন। তবে সেই চেষ্টা খুব একটা আলোর মুখ দেখেনি।
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা(WHO) অনেক বছর আগে থেকেই সিংগেল ডোজের ইঞ্জেকশন টিকা এর উপরে গবেষণা করছে। কারণ একাধিক ডোজের টিকা গ্রহণের ক্ষেত্রে অনেক ভোগান্তির শিকার হতে হয়৷ অনেকে যথা সময়ে টিকা গ্রহণ করেন না, আবার কেউ কেউ ডোজ সম্পন্ন করেন না। সেক্ষেত্রে সিংগেল ডোজ টিকা আবিষ্কার করা সম্ভব হলে তা সকলের জন্য সহজলভ্য হবে এবং অর্থ ব্যয় কমবে। যেমন বাংলাদেশ সহ অন্যান্য দেশে টিটি টিকা ৫ ধাপে নিতে হয়। টিটি ১ম ডোজ ১৫ বছর পূর্ণ হবার পর অথবা গর্ভবতী হলে ৪র্থ মাস থেকে।
টিটি ২য় ডোজ টিটি ১ম ডোজ দেয়ার ৪ সপ্তাহ পর।
টিটি ৩য় ডোজ ,টিটি ২য় ডোজ দেয়ার ৬ মাস পর অথবা পরবর্তী গর্ভবতী অবস্থায়।
টিটি ৪র্থ ডোজ, ৩য় ডোজ দেয়ার ১ বছর পর অথবা পরবর্তী গর্ভবতী অবস্থায়।
টিটি ৫ম ডোজ, টিটি ৪র্থ ডোজ দেয়ার ১ বছর পর অথবা পরবর্তী গর্ভবতী অবস্থায়।
একই ভাবে ‘হেপাটাইটিস বি’ এর ক্ষেত্রে ৩ টি টিকা বিভিন্ন সময়ে গ্রহণের পরবর্তীতে সর্বশেষ বুস্টার ডোজ গ্রহণ করতে হয়। যা একটি দীর্ঘকালীন প্রক্রিয়া।
Thanh Nguyen বলেন, ” অনেক আগে থেকে প্রচলিত একাধিক ডোজের টিকা যেমন শরীরে ব্যথার সৃষ্টি করে, অনেকে একারণে টিকা নিতে অনাগ্রহী হয়।
ইঞ্জেকশন বানানোর উপাদান গুলো পরিবেশের ক্ষতি করে। সহজে মাটিতে মিশে যায় না এবং এটির বিষয়ে যথাযথ পদক্ষেপ না নিলে এই বর্জ্য গুলো ভবিষ্যতে পরিবেশের জন্য মারাত্মক ক্ষতির কারণ হতে পারে। পরিবেশ বান্ধব এবং বায়োগ্রিডেবল পদার্থের মাধ্যমে সিরিঞ্জ তৈরি করা এখন সময়ের দাবী। এছাড়া এই ব্যবহার হয়ে যাওয়া সিরিঞ্জগুলি বায়োলজিক্যাল হ্যাজার্ড তৈরি করে। একাধিক ডোজের টিকাদান কাজ পরিচালনার ক্ষেত্রে সরকার কিংবা ব্যক্তিগতভাবে সময়ের অপচয় এবং ব্যাপক অর্থ অপচয় হয়। তাই এখন সময় এসেছে সিংগেল ডোজের টিকা নিয়ে ভাবার এবং যা হবে পরিবেশ বান্ধব।”
বাংলাদেশ সহ অনেক উন্নয়নশীল দেশে পর্যাপ্ত স্বাস্থ্যকর্মী নেই যারা বাড়ি বাড়ি গিয়ে টিকাদান করতে পারে। এছাড়াও বুস্টার ডোজ (বুস্টার ডোজ কোন আলাদা টিকা নয়। পূর্বে দেয়া কোন প্রাথমিক টিকার কার্যকারিতা উজ্জীবিত করতে যে বাড়তি ডোজ দেয়া হয় তাকেই ঐ টিকার বুস্টার ডোজ বলে) গুলো একাধিক ধাপে নিতে হয় তাই সেই বিষয়ে অনেকেই উদাসীন থাকে এবং কালক্ষেপণের জন্য যথাসময়ে টিকা গ্রহণ না করায় টিকার কার্যকারীতা কমে যায়। তাই এমন টিকা উদ্ভাবন করা প্রয়োজন যেখানে ব্যথা কম লাগবে এবং মানুষ নিজেই নিজের শরীরে তা ব্যবহার করতে পারবে।
মহামারী পরিস্থিতিতে স্বাস্থ্যকর্মীরা বর্তমানে বাড়ি বাড়ি গিয়ে টিকা পৌছে দিতে পারছেনা। এমন পরিস্থিতি ভবিষ্যতে মোকাবিলার জন্য নিজেই ব্যবহার করা যায় এমন প্রযুক্তি দরকার,যা মাইক্রোনিডল প্রযুক্তিতে আছে। এটি ব্যবহারে সঠিক পরিমাণ ভ্যাক্সিন শরীরের প্রবেশ করবে।
মাইক্রোনিডল প্রযুক্তি এখন পর্যন্ত এনিমেল ট্রায়ালে সফল হয়েছে। মানবদেহে প্রয়োগ উপযোগিতা পরীক্ষা নিরিক্ষার মধ্যে আছে। তবে Thanh Nguyen আশা করছেন তা মানব শরীরের যথাযথ ভাবে প্রয়োগ করলে সফলতা পাওয়া যেতে পারে৷
সাবিদ ইবনে নূর/ নিজস্ব প্রতিবেদক
তথ্যসূত্রঃ
University of Connecticut Journal reference: Tran, K. T. M., et al. (2020) Transdermal microneedles for the programmable burst release of multiple vaccine payloads. Nature Biomedical Engineering. doi.org/10.1038/
এগুলো পড়ুন
অজান্তেই প্রাণ বাঁচাতে ভূমিকা রেখেছেন যে নারী:হেলা কোষ |