ধরুন, একজন ব্যক্তি নতুন কোনো শহরে গেলেন। তিনি ঘুরতে ঘুরতে অপরিচিত কোনো এক রাস্তায় চলে এলেন। কিন্তু হারিয়ে যাবার ভয় নেই। চাইলেই হাতে থাকা স্মার্ট ফোনের ম্যাপে চট করে দেখে নিতে পারবেন নিজের অবস্থান। কিন্তু এই ব্যাপারটা তো শুধু পৃথিবীর ক্ষেত্রে প্রযোজ্য হবে। কিন্তু কোনো ব্যক্তি যদি চাঁদের পৃষ্ঠে হারিয়ে যায় তাহলে কীভাবে দিকনির্দেশনা খুঁজে পাবে?
মানুষের পায়ের ছাপ চাঁদের বুকে পড়েছে প্রায় অর্ধশত বছর আগে। সেই চাঁদের পৃষ্ঠে অনুসন্ধান কাজে যখন ন্যাভিগেশন পদ্ধতির প্রয়োজন ঠিক তখনই আলোচনায় উঠে আসে ৮০০ বছর পুরোনো এক গাণিতিক পদ্ধতির কথা। হাঙ্গেরির Eötvös Loránd University এর ভূ-পদার্থবিদ্যার শিক্ষার্থী ‘কামিলা সিজিরাকি’ গবেষণার মাধ্যমে দেখিয়েছেন কীভাবে সহজেই চাঁদের পৃষ্ঠে ন্যাভিগেশন বা দিকনির্দেশনা ব্যবস্থা গড়ে তোলা সম্ভব।
সেই গাণিতিক পদ্ধতির নাম “Fibonacci sphere”। স্কুলে থাকতে ”ফিবোনাক্কি রাশিমালা” সম্পর্কে পড়তে যেয়ে গণিতবীদ ফিবোনাক্কি সম্পর্কে সবাই জেনেছি। সেই ফিবোনাক্কির দেয়া ৮০০ বছর পূর্বে গাণিতিক পদ্ধতি ব্যবহার করেই, জিওফিজিক্সে বিশেষজ্ঞ দ্বিতীয় বর্ষের জিওসায়েন্সের ছাত্র, কামিলা সিজিরাকি এবং তার সুপারভাইজার, জিওফিজিক্স এবং স্পেস সায়েন্সেস বিভাগের প্রধান, গ্যাবর টিমার এর সাথে কাজ করেছেন এবং হিসাব করেছেন কিভাবে পৃথিবীর বুকে ব্যবহৃত GPS এর মতো চাঁদের মাটিতেও ব্যবহার করা যায় পজিশনিং সিস্টেম, যা সাহায্য করবে চাঁদের বুকে দিকনির্দেশনায়।
সহজভাবে বললে Fibonacci sphere হলো কোনো গোলকের পৃষ্ঠে নির্দিষ্ট সংখ্যক বিন্দু সুবিন্যস্তভাবে স্থাপন করার সবচেয়ে সহজ পদ্ধতি। তবে চাঁদ পুরোপুরি গোলাকার তো নয়। কিছুটা চ্যাপ্টা অর্থাৎ, উপবৃত্তাকার যাকে বলে।
আমরা জানি, সুষম গোলকের একটাই অক্ষ থাকে। কিন্তু উপবৃত্তাকার এর ক্ষেত্রে তা ভিন্ন। একটা বৃহৎ অক্ষ, অন্যটি ক্ষুদ্রাক্ষ, যার সাথে সাদৃশ্য রয়েছে চাঁদেরও। যাদের মান যথাক্রমে ৩৮৪,৪০০ কিমি ও ৩৮৩,৮০০কিমি। আর পৃথিবীর তুলনায় চাঁদের ঘূর্ণন গতি কম হওয়ার ফলে চাঁদ পৃথিবীর তুলনায় অধিক গোলাকার (পৃথিবীর পৃষ্ঠ তার ঘূর্ণনের ফলে তুলনামূলক কম মসৃণ)। ফলে সিরিজিকি ও তার দল এই Fibonacci sphere এর পদ্ধতিটা আরো নিখুঁতভাবে ব্যবহার করতে সক্ষম হয়েছেন। তারা একটি ঘূর্ণায়মান উপবৃত্তাকার মডেল ব্যবহার করে সকল গাণিতিক হিসাব করেছেন।
আর সেই ঘূর্ণায়মান উপবৃত্তাকার মডেলের ক্ষুদ্রাক্ষ ও বৃহৎ অক্ষ হিসাব করে দেখা যায় ১০০,০০০ টি কাল্পনিক বিন্দু স্থাপন করলে সেই মডেলে একটি ন্যাভিগেশন ব্যবস্থা তৈরি করা সম্ভব। এই পদ্ধতি ব্যবহার অত্যন্ত সহজ ও কার্যকর।
কামিলা সিজিরিকির এই গবেষণার ফলাফল অদূর ভবিষ্যতে চাঁদের বুকে হতে পারে পৃথিবীর মতোই GPS সিস্টেম। তখন আর পৃথিবীর মতো চাঁদের বুকেও হারিয়ে যাবার ভয় থাকবে না। চাইলেই ঘুরে দেখা যাবে পুরো চাঁদ। আরো ভালোভাবে পরিচালনা করা যাবে অনুসন্ধানের কাজ।
জুম্মান আল সিয়াম / নিজস্ব প্রতিবেদক
তথ্যসূত্র: সাইন্স অ্যালার্ট, ডেইলি সাইন্স, উইকিপিডিয়া, আরজিভ-ভ্যানিটি
+1
+1
4
+1
2
+1
+1
1
+1
+1