একটি আধুনিক সমাজের জন্য গণিতের উপর জ্ঞান অর্জন করা অপরিহার্য। গ্রিক গণিতবিদ আর্কিমিডিসের ভাষায়, গণিত তার কাছেই তার সৌন্দর্য নিয়ে ধরা দেয়, যে বিশুদ্ধ মন ও ভালোবাসা নিয়ে গণিতের দিকে অগ্রসর হয়।
গাণিতিক সমস্যাগুলি প্রায়শই আমাদের দৈনন্দিন জীবনে ঘটে থাকে। আপনার যদি সঠিক দক্ষতা না থাকে তাহলে গণিত একটি কঠিন বিষয় হতে পারে। কিন্তু যদি একবার গণিতের কৌশল সম্পর্কে অবগত হতে পারো তাহলে তোমাকে আর হতাশ হতে হবে না, কারণ আপনি সাফল্যের অনেক নিকটবর্তী চলে এসেছেন। আর গাণিতিক সমস্যা নিখুঁতভাবে সমাধানের জন্য অনুশীলনের প্রয়োজন। কারণ যত বেশি চর্চা করবেন তত নিখুঁতভাবে ও দ্রুত সমাধান করতে পারবেন। বিজ্ঞানীরা দেখিয়েছেন যে, অনুশীলনের মাধ্যমেই গণিতের উপর দক্ষতা অর্জন করা যায়- মেধার মাধ্যমে নয়।
গণিতশাস্ত্রকে উন্নত করার সর্বোত্তম উপায় হল এর নতুন নিদর্শনগুলো অনুসন্ধান করা। মিসৌরি বিশ্ববিদ্যালয়ের গণিত শিক্ষার অধ্যাপক স্যামুয়েল ওটেন ব্যাখ্যা করেছেন, “গণিত সম্পর্কে আমাদের আরো চিন্তাভাবনা করা উচিত, কারণ ভালো প্রশ্ন জিজ্ঞাসা করা বা অন্তর্দৃষ্টিপূর্ণ পর্যবেক্ষণ করা ঠিক ততো গুরুত্বপূর্ণ হওয়া উচিত”।
সুতরাং প্রশ্নটি হল: আপনি কোন ধরনের গণিত শিখতে চান অথবা আপনি কি এর থেকে বেরিয়ে আসতে চান?
যদি আপনি বেরিয়ে আসতে চান তবে এটি সমস্যার সমাধান নয়। আপনি যদি আপনার দক্ষতা বিকাশ করতে চান তাহলে নিম্নলিখিত কৌশলগুলো ব্যবহার করতে পারেন-
১. আপনার যদি কিছু বুঝতে অসুবিধা হয় তাহলে পরবর্তী বিষয়ে যাওয়ার আগে সে বিষয়টিতে আপনি ভালভাবে মনোনিবেশ করুন। এটি শুনতে সহজ তবে এটি খুবই প্রয়োজনীয়। মনে করুন, একজন শিক্ষার্থী বীজগণিত শিখছে। সে কিভাবে ধনাত্মক ও ঋণাত্মক সংখ্যা যোগ করবে এবং বিয়োগ করবে তা বোঝার জন্য খুবই কঠিন সময় কাটাচ্ছে। এই পরিস্থিতিতে কিছু শিক্ষার্থী বিষয়টি শিখতে পারবে না বলে তারা অন্য বিষয়ে চলে যায়। তাই ওই শিক্ষার্থীদের প্রয়োজন অন্য বিষয়ে যাওয়ার আগে সেই বিষয়ের উপর মনোযোগ দেওয়া এবং চর্চা করা। কারণ বারবার অনুশীলনের মাধ্যমে সে বিষয়টি ভালোভাবে বুঝতে পারা যায়।
২. আপনার পড়াশোনার সময়সূচি নির্ধারণ করুন এবং গণিত অনুশীলনের জন্য প্রতিদিন সময় দিন। আপনার যদি প্রতিদিন বাড়ির কাজ বা অ্যাসাইনমেন্ট না থাকে তবুও আপনি চর্চা করতে থাকুন এবং আপনার গাণিতিক সমস্যাগুলো পর্যালোচনা করতে থাকেন। গণিত অধ্যায়নের সময় মনে রাখবেন, গণিত অনুশীলনী মাধ্যমে আপনি সমস্যার সমাধান করতে পারবেন, যা আপনার সাফল্যের জন্য সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ।
৩. আপনি যখন পড়াশোনা করবেন তখন একটি শান্ত জায়গা খোঁজার চেষ্টা করুন। আপনি স্কুলের লাইব্রেরিতে বা আপনার বাড়িতে একটি শান্ত জায়গা সন্ধান করুন, যাতে আপনি আপনার কাজটি দ্রুত সম্পন্ন করতে পারেন এবং ভালোভাবে অধ্যায়নে মনোনিবেশ করতে সক্ষম হবেন।
৪. যদি কেউ আপনাকে সাহায্যে জন্য জিজ্ঞাসা করে তবে আপনি সেই বিষয়টি তাদের যথাসম্ভব ব্যাখ্যা করার চেষ্টা করুন। এটি এই তালিকার জন্য আপনাদের কাছে কিছুটা অদ্ভুত মনে হচ্ছে। যারা অন্যকে শিক্ষা দিতে পারে তারা তাদের পার্থিব জ্ঞান উপলব্ধি করতে পারে। আপনি কেবল অন্য কাউকে সফল হতে সহায়তা করছেন তেমন বোধ করবেন না, বরং আপনি তাকে তার অধ্যায়নের জন্য সাহায্য করেছেন যা একদিকে আপনারও অনুশীলন হয়ে যাচ্ছে এবং পড়াশোনা চালিয়ে যাওয়ার ক্ষেত্রে আপনাকে সহায়তা করবে।
৫. অধ্যায়নের জন্য ভালো অভ্যাস তৈরি করুন। খুব গভীর রাত পর্যন্ত পড়াশোনা করবেন না। কারণ গভীর রাতে কাজ করার সময় আমাদের প্রায় ঘুম চলে আসে এবং শরীরে ক্লান্তিও অনুভব হয় যার ফলে আমরা সম্পূর্ণ সমাধান করতে পারিনা বরং ভুল উত্তর চলে আসে। তাই গভীর রাতে অধ্যায়ের না করাই ভালো।
৬. আপনি যদি প্রথমে কিছু বুঝতে না পারেন, তাহলে আপনার শিক্ষকের সাহায্য নিন। এবং যে বিষয়ে বুঝতে সমস্যা হচ্ছে সেটি ভালোভাবে বুঝে নিন এবং নিজেও চর্চা করতে থাকুন। যার ফলে আপনি সঠিক প্রশ্নের সন্ধান করতে পারবেন এবং দ্রুত সমাধান করতে পারবেন।
৭. আপনি সমস্যার সমাধান গুলো নোট করে রাখুন। যাতে পরবর্তী সময়ে আপনাকে আর সমস্যায় পড়তে না হয় এবং সমস্যাগুলো চর্চা করে থাকুন। তাহলে আপনি গণিতে দক্ষ হয়ে উঠবেন। প্রতিদিন বিভিন্ন ধরণের সমস্যা সমাধান করুন, শতাংশ গণনা করুন, দীর্ঘ বিভাগ তৈরি করুন, দশমিক সংখ্যা আরও অনেক কিছু !
৮. মনোযোগ সহকারে পড়ুন, বুঝুন এবং সমস্যার ধরনটি শনাক্ত করুন। গণনার সময় আপনি সংখ্যাগুলি দ্রুত মনে রাখতে আপনার আঙ্গুলগুলি ব্যবহার করতে পারেন তবে এটি করার জন্য আপনার স্মৃতিশক্তি ব্যবহার করার চেষ্টা করুন।
৯. আপনি সমস্যা সমাধানের জন্য আলাদা সময় নির্বাচন করুন এবং সে সময়ে আপনি শান্ত মাথায় সমস্যাটি সমাধান করার চেষ্টা করুন।
১০. আপনি নিজের প্রতি বিশ্বাস রাখুন। আপনার কাজ সঠিক সময় করার চেষ্টা করুন এবং অতিরিক্ত সময়ে আপনি গাণিতিক সমস্যার সমাধান করতে পারেন এবং পাশাপাশি আপনি আপনার শিক্ষকেরও সহায়তা নিতে পারেন।
১১. আপনি গাণিতিক সমস্যা সমাধানের জন্য অবশ্যই ক্যালকুলেটর ব্যবহার করতে পারেন। জটিল সমস্যার সমাধান ক্যালকুলেটর এর সাহায্যে করা যায়। আপনার যদি কোনও নির্দিষ্ট ধারণা নিয়ে সমস্যা হয় তবে এগিয়ে যাওয়ার জন্য এই পদক্ষেপটি এড়িয়ে যাবেন না। পরিবর্তে, আপনি ধারণাটি আয়ত্ত না করা পর্যন্ত আপনার শিক্ষক বা অভিভাবককে সাহায্যের জন্য জিজ্ঞাসা করুন।
১২. আপনার গাণিতিক সমাধান পরীক্ষা করুন। আপনার কাজটি পর্যালোচনা করুন এবং নিশ্চিত করুন যে আপনি প্রশ্নের উত্তর সঠিক দিয়েছেন।
১৩. সমস্যাটি সমাধান করার জন্য আপনার কোন দক্ষতা এবং ধারণাটি ব্যবহার করা উচিত তা চিহ্নিত করুন। এটি আপনাকে সমাধানটি খুঁজে পেতে কী করতে হবে তার সামগ্রিক ধারণা দেবে।
১৪. গাণিতিক সমস্যা সমাধানের জন্য আপনার গাণিতিক সূত্র ও মনে রাখা দরকার। গাণিতিক সূত্রের মাধ্যমেই আপনি খুবই দ্রুত সমাধান করতে পারবেন।
১৫. আপনি যদি আপনার শিক্ষকের ক্লাস চলাকালীন প্রশ্ন জিজ্ঞাসা করতে ভয় পান তবে প্রশ্নগুলি একটি কাগজের টুকরোতে লিখে ক্লাসের পরে বা ক্লাসের সময় আপনার শিক্ষকের সাথে আলোচনা করুন।
সবকিছুর শেষে, আপনাকে প্রতিদিন অবশ্যই গণিত চর্চা করতে হবে।
মোঃ মিরাজুল ইসলাম/নিজস্ব প্রতিবেদক
আরো পড়ুন বিজ্ঞানের হিসেব নিকেশে শ্রেষ্ঠ সুন্দরী বেলা হাদিদ প্রাচীন গ্রীসের জ্যোতির্বিজ্ঞানীদের বিস্ময়কর কিছু অবদান বিগ ব্যাং এর আগে কি ঘটেছিলো মহাবিশ্বে? সময় ও কালের নতুন ধারণা |
তথ্যসূত্রঃ পপসায়েন্স , উইকিহাউ , ম্যাথগুডিস