কোভিড-১৯ এর করাল গ্রাসে গোটা বিশ্ব এখন অসহায়। এই মুহূর্তে যা সবচেয়ে বেশি প্রয়োজনীয় তা হল কোভিড-১৯ এর ভ্যাকসিন। এ বছরের ১০ই জানুয়ারি চীন করোনা ভাইরাসের এক নতুন জেনেটিক ক্রমবিন্যাস এর আবিস্কার করেছে। চাইনিজ বিজ্ঞানীদের আবিষ্কৃত এই জেনেটিক ক্রমবিন্যাস কোভিড-১৯ এর ভ্যাকসিন তৈরীতে দিনরাত অক্লান্ত পরিশ্রম করে কাজ করা সকল গবেষকদের জন্য আশার বাণী এনেছে।
যদিও ভ্যাকসিন তৈরীর কাজ এখনও অনেকদূর বাকি তবে ডাক্তাররা বর্তমানে যেসব ঔষধ অন্যান্য রোগের ক্ষেত্রে ব্যবহার হয় সেগুলো করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত রোগীদের ক্ষেত্রে পুনঃব্যবহার করছেন।
এপ্রিলের শেষ সপ্তাহ থেকেই মানবদেহে পরীক্ষামূলকভাবে করোনা ভাইরাসের ভ্যাকসিন প্রয়োগ করার প্রক্রিয়া চলছে। অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের বিজ্ঞানীরা ভ্যাকসিন নিয়ে কাজ করছেন এবং তারা ভ্যাকসিন সর্বপ্রথম মার্কিন ভলেন্টিয়ারদের উপর প্রয়োগ করার চিন্তাভাবনা করছেন।
সারাহ গিলবার্ট, ভ্যাকলনলজি এর প্রফেসর এবং টিম নির্দেশক বলেছেন, ‘’এই শরৎতেই জনসাধারণের জন্য ভ্যাকসিন তৈরী হবে এবং সেপ্টেম্বরের মধ্যে অন্তত ১ মিলিয়ন মানুষের জন্য ভ্যাকসিন ডোজ তৈরী হবে বলে আমরা আশা করছি‘’।
নতু্ন ভ্যাকসিন তৈরীর পাশাপাশি পুরোনো ভাইরাস যেমন, ইবোলা , ম্যালেরিয়া, এইডস এসব ভাইরাসগুলোর ভ্যাকসিনগুলোকেও পরীক্ষা করা হচ্ছে এবং এর ফলাফল আশা উদ্দীপক হলেও চিকিৎসকরা মানবদেহে এর প্রয়োগ করার ব্যাপারে দ্বিধায় ভুগছেন। গত সপ্তাহের এক রিপোর্টে বলা হয়েছে, ২০২০ সালের শেষের নাগাদ ভ্যাকসিন তৈরী কাজ সম্পন্ন হবে।
অন্যদিকে চীনে কোভিড-১৯ এর দুটি ভ্যাকসিন ১ম ও ২য় পর্যায়ে পরীক্ষামূলকভাবে প্রয়োগের অনুমোদন পেয়েছে ন্যাশনাল মেডিকেল এডমিনিস্ট্রেশন অব চায়না থেকে। এ দুটি ভ্যাকসিন যথাক্রমে তৈরী করেছে চীনের রিসার্চ ইন্সটিটিউট “উহান ইন্সটিটিউট অব বায়োলজিকাল প্রোডাক্ট” এবং “সিনোভাক রিসার্চ ও ডেভেলপমেন্ট”।
আশার বাণী দিয়েছেন চায়না একাডেমী অব ইঞ্জিনিয়ারিং ও রিসার্চ একাডেমির চেন উই এর টিম। তারা বলছেন মার্চের ১৭ তারিখে তৈরী ভ্যাকসিন ক্লিনিকগুলোতে পরীক্ষামূলকভাবে প্রয়োগ করার অনুমোদন পেয়েছেন তারা। চায়না একাডেমী অব ইঞ্জিনিয়ারিং ও রিসার্চ একাডেমির গবেষক ওয়াং জুনঝি বলেন, ‘’ আমরা গোটা বিশ্বের কথা মাথায় রেখেই কোভিড-১৯ এর ভ্যাকসিন তৈরীর কাজ করছি”। তিনি আরো উল্লেখ করেন তাদের সফলতার ৪টি ধাপের কথা, প্রাথমিক অবস্থা, সঠিক নির্দেশনা, বিজ্ঞানসম্মত চিন্তা ও এসবকিছুর সমন্বয় ।
কোভিড-১৯ এর ভ্যাকসিন তৈরী এমন কোনো দূরবর্তী সম্ভাবনা নয় এখন আর, বরং কোভিড-১৯ মোকাবিলায় এখন একমাত্র হাতিয়ার হচ্ছে ভ্যাকসিন। চায়না একাডেমী অব ইঞ্জিনিয়ারিং ও রিসার্চ একাডেমির চেন উই এর টিম শুরু থেকেই দায়িত্বশীলতা ও ধৈর্য্যের সাথে ভ্যাকসিন তৈরীর কাজ করে যাচ্ছেন এবং এই টিমই সর্বপ্রথম সফলতার মুখ দেখেছে।
লিও চাওজি, ডিপার্টমেন্ট অব সাইন্স এন্ড টেকনোলজি এর প্রধান জানিয়েছেন ভ্যাকসিন তৈরীর কাজ ইতিমধ্যে শেষের দিকে এবং এপ্রিল এর মাঝেই ভ্যাকসিনগুলোকে পরীক্ষামূলকভাবে ল্যাবে ইঁদুর, খরগোশ সহ অন্যান্য প্রাণীদের উপর প্রয়োগ করা হবে।
কিন্তু এরপরেও ভ্যাকসিন তৈরিতে এত সময় কেন লাগছে এ প্রশ্ন থেকেই যাচ্ছে। ভ্যাকসিন গবেষণা ও উন্নয়ন অর্গানাইজেশন যা CPEI নামে পরিচিত, তাদের উদ্দ্যোগে ২০১৪ থেকে ২০১৬ সালে আফ্রিকায় ঘটে যাওয়া ইবোলা ভাইরাসের সময়ে অনুদান দেওয়া হয়েছিল। CPEI যেকোনো মহামারীতে আর্থিক সহায়তা করে। বর্তমানে তারা ৮টি ভ্যাকসিন তৈরি করছেন এবং আশা করছেন মে মাস নাগাদ ভ্যাকসিন প্রস্তুত হয়ে যাবে। ভ্যাকসিন তৈরি ও জনসাধারণের মাঝে বিতরণ এসব বেশ অর্থবহুল তবে CPEI ২ বিলিয়ন ডলার ফান্ডিং বরাদ্দ রেখেছে এজন্য। অন্যদিকে মার্কিন যুক্তরাজ্য ২৫০ মিলিয়ন ডলার ফান্ডিং দিবে বলে আশ্বস্ত করেছে।
নাজিফা সিন্থি / নিজস্ব প্রতিবেদক
করোনাভাইরাস প্রসঙ্গ-
- রক্তের গ্রুপ ‘A’ হলে করোনা ঝুঁকি বেশি, ‘O’ হলে সবচেয়ে কম – বলছে চীনা গবেষণা
- লবণ মেশানো গরম পানি কি করোনা ভাইরাস প্রতিরোধ করে ?-না
- করোনা যেভাবে আপনার শরীরের নিয়ন্ত্রণ নিচ্ছে !(ইন্টারেক্টিভ ডিজাইনসহ)
- ফ্যাক্ট চেক: (মিথ্যা) এক টুকরা লেবুতেই ধ্বংস হবে করোনাভাইরাস
- আমেরিকা বা চীনের ষড়যন্ত্র নয়।করোনাভাইরাস এসেছে প্রকৃতি থেকেই-গবেষণা
- করোনাভাইরাস স্মার্টফোনে প্রায় ৯ দিন জীবিত থাকতে পারে – গবেষণা
- করোনা ভ্যাকসিন বাজারজাত করতে বছর সময় লেগে যেতে পারে