প্লাস্টিক দূষণ বর্তমানে জলবায়ু সমস্যা ও পরিবেশ বিপর্যয়ের অন্যতম একটি কারণ। আর তাই প্লাস্টিক ব্যবহার বন্ধে কাগজের বোতল-এ পানীয় বাজারজাত করবে কোকা-কোলা। প্যাকেজিং থেকে বাজারজাতকরণ সর্বত্র প্লাস্টিকের ব্যবহার সম্পূর্ণরূপে বন্ধ করতে কোকা-কোলা কোম্পানি কাগজের বোতলের একটি পরীক্ষা চালায়।
একটি চ্যারিটি সংস্থার জরিপে গত বছর বিশ্বের শীর্ষ প্লাস্টিক দূষণকারী প্রতিষ্ঠান হবার রেকর্ড অর্জন করে কোকা-কোলা। অবশ্য বেশ আগে থেকেই প্লাস্টিকের বিকল্প উদ্ভাবনের চিন্তা করেছে কোম্পানিটি। এরই ধারাবাহিকতায় কাগজের বোতলে পানীয় সরবরাহের প্রস্তুতি গৃহীত হয়। কোকা-কোলার লক্ষ্য, ২০৩০ সালের মাঝে এই প্লাস্টিক দূষণ শূন্যতে নামিয়ে নিয়ে আসা।
বিবিসির একটি প্রতিবেদন থেকে জানা যায়, যদি কোনো ব্যবস্থা গ্রহণ না করা হয়, তবে ২০৪০ সালের মাঝে বিশ্বে (জলভাগ ও স্থলভাগ মিলিয়ে) প্লাস্টিক দূষণের পরিমাণ হতে যাচ্ছে ১.৩ বিলিয়ন টন।
কোকা-কোলা এ ব্যাপারে ডেনমার্কের উদীয়মান কোম্পানি ‘পাবোকো‘র সাথে অংশীদারীত্বের ভিত্তিতে কাজ করে যাচ্ছে। দীর্ঘ সাত বছর ল্যাবরেটরিতে কাজ শেষে এই গ্রীষ্মে কোম্পানিটি কোকা-কোলার ফলের জুস Adez এর একটি বোতলের নকশা উন্মোচন করেছে। পরীক্ষামূলক ভাবে এখানে প্রথমে প্রায় দুই হাজার বোতল থাকবে।
সাধারণত কোমল পানীয়গুলোকে উচ্চচাপে বোতলজাত করা হয়। তাই বোতলকে তীব্র পানীয় চাপ সহ্য করার সক্ষমতা রাখতে হয়। এছাড়াও স্বাদ অক্ষুণ্ণ রাখার ক্ষেত্রেও বেশ কিছু চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি হতে হবে এই উদ্যোগকে। ডেনিশ কোম্পানিটিকে এই কাগজের বোতল তৈরির জন্য কাগজটিকে ছাঁচে ফেলতে হবে, বিভিন্ন ব্র্যান্ডের জন্য আলাদা আকার তৈরি করতে হবে এবং লেভেলগুলো মুদ্রণের জন্য কালি ব্যবহার করতে হবে।
তবে পাবোকো’র জন্য বড় চ্যালেঞ্জ থাকবে বোতলের ভেতরে। এখানে কাগজের সূক্ষ্ম আঁশ পানীয়তে মিশে যেতে পারে। এতে স্বাদে পরিবর্তন ছাড়াও পানীয় নষ্ট হবার ঝুঁকি, স্বাস্থ্যঝুঁকি রয়েছে। তাই মোড়কের ভেতর একটি পাতলা প্লাস্টিকের আস্তরণ রয়েছে। তবে কোকা-কোলার লক্ষ্য প্লাস্টিকের ব্যবহার একেবারে শূন্যতে নিয়ে আসা। তাই প্লাস্টিকের এই পাতলা ফয়েলের পরিবর্তে ভবিষ্যতে উদ্ভিজ্জ পলিমার ব্যবহারের পরিকল্পনা রয়েছে।
শুধু কোকা-কোলা নয়, অন্যান্য বিভিন্ন কোম্পানি এই প্রকল্পে আগ্রহী। ভদকা প্রস্তুতকারক প্রতিষ্ঠান ‘Absolut‘ যুক্তরাজ্য ও সুইডেনে পেপার বোতলের কাজ শুরু করতে যাচ্ছে। বিয়ার কোম্পানি ‘Carlsberg‘ ইতোমধ্যে কাগজের বিয়ার বোতলের প্রটোটাইপ তৈরি করেছে। বড় বড় শিল্প প্রতিষ্ঠানের এ সমস্ত উদ্যোগ ভবিষ্যৎ পৃথিবীর জন্য সুখবর বটে।