আমরা জানি, অ্যালকোহল আসক্তি শরীরের বিরুপ প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি করার পাশাপাশি মস্তিষ্কের কার্যক্ষমতা হ্রাস করে এবং দীর্ঘমেয়াদি ক্ষতির কারণ হয়ে থাকে। তবে, স্নায়ুবিদ্যার নতুন গবেষণা থেকে বিষয়টি সম্পর্কে আরো সুনিপুণ ধারণা পাওয়া গিয়েছে। অতিরিক্ত অ্যালকোহল আসক্তি মস্তিষ্কের প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা অতিমাত্রায় সক্রিয় করে ফেলে- এমনটিই বলছে গবেষণা।
অ্যালকোহলে আসক্তি আমাদের মস্তিষ্কের অবকাঠামোগত পরিবর্তন করতে সক্ষম। তাছাড়া, আমাদের শরীরের প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা সক্রিয় হওয়ার মাধ্যমে অ্যালকোহল আসক্তিকে স্থায়ী করে ফেলতে পারে। স্পেনের ইনস্টিটিউট অফ নিউরোসায়েন্স এবং জার্মানির হাইডেলবার্গ বিশ্ববিদ্যালয়ের যৌথ গবেষণায় অ্যালকোহল সেবনে মস্তিষ্কের উপর এর প্রভাব সম্পর্কে বিস্তর ধারণা পাওয়া গিয়েছে।
বিজ্ঞানীরা ইঁদুর ও মানুষের উপর পরীক্ষা করে দেখতে পান, অ্যালকোহলে আসক্তি যত বাড়ে, মস্তিষ্কের গঠন তত পরিবর্তিত হতে থাকে, মূলত মস্তিষ্কের গ্রে ম্যাটার বা ধূসর অংশে এই পরিবর্তন লক্ষ্য করা যায়।
মস্তিষ্কের নিরাপত্তা প্রদানে বিভিন্ন প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা সক্রিয় থাকে। মাইক্রোগ্লিয়া নামক কিছু কোষ মস্তিষ্কের প্রতিরক্ষা ব্যবস্থায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। মূলত অতিরিক্ত অ্যালকোহল সেবনে এই কোষগুলোই মস্তিষ্কের ধূসর অংশে অবকাঠামোগত পরিবর্তন করে থাকে।
অতিমাত্রায় মস্তিষ্কের প্রতিরক্ষা কোষগুলোকে সক্রিয় করে ফেলে, যার দরুণ কোষগুলোর আকার ও উপাদানগুলো পরিবর্তিত হয়ে কোষগুলো গোলাকার বা অ্যামিবার মত আকার ধারণ করে। আমাদের মস্তিষ্কের বিভিন্ন কর্মকাণ্ডের জন্য বিভিন্ন হরমোন বা নিউরোট্রান্সমিটার নি:সৃত হয়, যেমন পুরস্কার প্রাপ্তি ও আসক্তির সময় মস্তিষ্ক থেকে ডোপামিন হরমোন নি:সৃত হয়, যার কারণে আমাদের ভাললাগা কাজ করে।
প্রতিরক্ষা কোষের আকার পরিবর্তনের কারণে মস্তিষ্কে এই উপাদানগুলো নি:সরণের হার বেড়ে যায় এবং দ্রুত কোষের চারপাশে ছড়িয়ে পড়ে। ডোপামিন ছাড়াও গ্লুটামেট, নিউরোপেপটাইড এর মত অন্যান্য উপাদানগুলো দ্রুত ছড়িয়ে পড়তে থাকে এবং মস্তিষ্কে এদের পরিমাণ বাড়তে থাকে যার কারণে অ্যালকোহল সেবনের আসক্তি তৈরী হয়। তারা বারবার তাদের এই বিভিন্ন হরমোনের কারণে সৃষ্ট অনুভূতি গুলো পেতে চায়, ফলে তারা অ্যালকোহল ছাড়তে পারেনা। একটা সময় অ্যালকোহল গ্রহণ ছাড়াও অনিয়ন্ত্রিত ভাবে এই নিউরো ট্রান্সমিটার গুলো ছড়াতে থাকে।
অ্যালকোহলের অতিরিক্ত সেবন এতোটাই ভয়ংকর যে, এটি সেবন বন্ধ করার পরেও এটি মস্তিষ্কের ক্ষতি করতে থাকে। প্রতিরক্ষা কোষগুলোর অতিমাত্রায় সক্রিয় হওয়ার দরুণ কোষের উপাদানগুলো চারপাশে ছড়িয়ে পড়ে, যার প্রভাব অ্যালকোহল সেবন বন্ধ করার পরেও চলমান থাকে।
ইকবাল হোসেন নাফিজ/ নিজস্ব প্রতিবেদক