আপনি কি কখনও ভেবে দেখেছেন অন্যান্য গ্রহের সূর্যাস্ত দেখতে কেমন? আমরা যতবারই দেখি না কেন, সূর্যাস্ত সবসময়ই দেখতে দর্শনীয়। কিন্তু সৌরজগতের অন্য গ্রহগুলোতে যখন সূর্য ডুবে যায় তখন কোন রঙ উপস্থিত হয়?
উত্তরটি গ্রহের উপর নির্ভর করে। মঙ্গল গ্রহে, সূর্য নীল আভা দিয়ে আসে এবং নীল আভা দিয়েই যায়। নাসার তথ্য অনুসারে, ইউরেনাসে সূর্যাস্তের আকাশ নীল থেকে ফিরোজাতে রূপান্তরিত হয়। শনি গ্রহের অন্যতম চাঁদ টাইটানে, দিগন্তের নীচে সূর্য ডুবে যাওয়ার সময় আকাশ হলুদ থেকে কমলাতে, কমলা থেকে বাদামি হয়ে যায়।
নেভাডার ট্রকি কমিউনিটি কলেজের (Truckee Community College) গণিতের অধ্যাপক কার্ট এহলার্সের মতে, সূর্যাস্তের রঙগুলি ভিন্ন। কারণ এই রঙগুলি প্রতিটি গ্রহের বায়ুমণ্ডল এবং গ্রহের মধ্যে থাকা কণাগুলি কীভাবে সূর্যের আলো ছড়িয়ে দেয় তার উপর নির্ভর করে। অ্যাপ্লাইড অপটিক্স (Applied Optics) জার্নালে ২০১৪ সালে প্রকাশিত তার একটি গবেষণাপত্রে তিনি মঙ্গলগ্রহের সূর্যাস্তকে কেন নীল দেখায় তা বলেছিলেন।
তিনি বলেন, “এটি খুব জটিল। প্রত্যেকেরই পূর্ব ধারণা ছিল যে অন্য গ্রহের সূর্যাস্তের প্রক্রিয়াগুলো আমরা পৃথিবীতে যা দেখি তার মতো।” তবে ঘটনাটি তা নয়।
আলোর যে রংগুলোর তরঙ্গদৈর্ঘ্য কম (যেমন বেগুনি এবং নীল) সেগুলো বেশি তরঙ্গদৈর্ঘ্যের আলো (যেমন কমলা এবং লালের) চেয়ে বেশি বিক্ষিপ্ত হয় এবং এর ফলে আকাশে আমরা নানা রং-এর আলোর অসাধারণ বিচ্ছুরণ দেখি। পৃথিবীর বায়ুমণ্ডল ক্ষুদ্রতর গ্যাসের অণু, মূলত নাইট্রোজেন এবং অক্সিজেন নিয়ে গঠিত, যা আলো ছড়িয়ে ছিটিয়ে দিতে বেশি কার্যকর। ছোট অণু দ্বারা সৃষ্ট ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা এই অবস্থাকে ‘Rayleigh Scattering‘ বলা হয়। মধ্যাহ্নে এটি আমাদের নীল আকাশ উপহার দেয়। তবে সূর্যাস্ত এবং সূর্যোদয়ের সময় যখন সূর্যের আলো আরও দূরে থাকে তখন নীল আলো আরও বেশি ছড়িয়ে ছিটিয়ে পড়ে। নীল আলো বিক্ষিপ্ত হয়ে পড়ার কারণে এসময় লাল এবং হলুদ তরঙ্গদৈর্ঘ্য, লাল রঙ এর প্রাণবন্ত আকাশের সৃষ্টি করে। যদি কোনও গ্রহের বায়ুমণ্ডলে গ্যাস ছাড়া অন্য কিছুর আধিপত্য থাকে, তবে সেখানে সূর্যাস্ত সম্পূর্ণ আলাদা। উদাহরণস্বরূপ, মঙ্গলগ্রহের নীল সূর্যাস্ত। এখানের বায়ুমণ্ডলে গ্যাসের ঘনত্ব মাত্র ৮০ ভাগের ১ ভাগ। এই গ্রহে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা ধূলোর বৃহৎ কণাগুলোয় বায়ুমন্ডলে আধিপত্য বিস্তার করে।
গ্যাসের অণুগুলি , সব দিকে আলো ছড়িয়ে দেয়। বিপরীতে, ধুলো প্রাথমিকভাবে এক দিকেই আলো ছড়িয়ে দেয় – সামনের দিকে। পাশাপাশি, ধুলার কণাগুলি নীল আলোর চেয়ে লাল আলোকে অনেক বেশি বিস্তৃতভাবে ছড়িয়ে দেয়। যেহেতু নীল আলো এখানে খুব বিস্তৃত হতে পারে না, তাই এটি আরও ঘনীভূত হয়ে পড়ে। একারণে মঙ্গল গ্রহে নীল আলো লাল আলোর চেয়ে প্রায় ছয় গুণ তীব্র। এহলার্স বলছিলেন, “আপনি যখন মঙ্গলগ্রহের সূর্যাস্তের দিকে তাকান, আপনি আসলে দেখতে পাবেন যে সূর্যের ডিস্কটি সাদা। কারণ গ্রহটির বায়ুমন্ডলের মধ্য দিয়ে যাওয়ার সময় আলো রঙ বদলায় না। সূর্যের চারপাশে একটি নীল আভা থাকে এবং আরও বাইরের দিকে আকাশ লালচে থাকে।”
নাসার বিজ্ঞানী গেরোনিমো ভিলানুয়েভা (Geronimo Villanueva) একটি চমকপ্রদ অ্যানিমেশন তৈরি করেছেন যা আমাদের সৌরজগতের অন্যান্য গ্রহে সূর্যাস্ত কেমন লাগে তা দেখায়। নাসা বলেছিল, “অ্যানিমেশনগুলিতে সূর্যকে এই পৃথিবীর কারও দৃষ্টিকোণ থেকে দেখা যাচ্ছে”। বিশেষত, ইউরেনাসের সূর্যাস্তটি খুব সুন্দর, নীল রং থেকে যা রাজকীয় নীল হয়ে যায়।
নাসা ব্যাখ্যা করেছে, “এই নীল-সবুজ রঙটি গ্রহের বায়ুমণ্ডলের সাথে সূর্যের আলোর মিথস্ক্রিয়া থেকে আসে। যখন সূর্যের আলো – যা রংধনুর সব রঙের সমন্বয়ে গঠিত – ইউরেনাসের বায়ুমণ্ডলে পৌঁছে, তখন হাইড্রোজেন, হিলিয়াম এবং মিথেন আলোর দীর্ঘ-তরঙ্গদৈর্ঘ্যের লাল অংশকে শোষণ করে নেয়।” এরপর আলোর সংক্ষিপ্ত-তরঙ্গ দৈর্ঘ্যের নীল এবং সবুজ অংশ ছড়িয়ে পড়ে। অনুরূপ ঘটনায় পৃথিবীর আকাশকে পরিষ্কার দিনে নীল দেখায়। ভিলানুয়েভা আশা করেন যে, ইউরেনাসে সম্ভাব্য ভবিষ্যতের মিশনের জন্য কম্পিউটার মডেলিংয়ের সরঞ্জাম তৈরি করার সময় সিমুলেশনটি সহায়তা করবে।
আপনিও উপভোগ করে আসুন অ্যানিমেশনটি এই লিংক থেকে – https://m.youtube.com/watch? feature=youtu.be&v=vrLfHv6sze0
পৃথিবী থেকেই উপভোগ করুন অন্য গ্রহের সূর্যাস্ত!
কায়েস মোহাম্মদ সাইফুল্লাহ/ নিজস্ব প্রতিবেদক
তথ্যসূত্র : Live Science, NASA, Youtube, Mirror
+1
+1
+1
2
+1
+1
+1
+1