যেহেতু অন্যান্য নক্ষত্রের মত সূর্যও একটি নক্ষত্র, সেহেতু সূর্যও অন্যান্য নক্ষত্রের মতই সৃষ্টি হয়েছে। হাইড্রোজেন এবং হিলিয়াম পরমাণু যখন চতুর্দিকে আন্তঃনাক্ষত্রিক মেঘ রূপে ছড়িয়ে ছিটিয়ে ছিল, তখন বিশাল আকৃতির মেঘ মণ্ডলের কেন্দ্রের দিকে পরমাণু গুলো ক্রমান্বয়ে পতিত হতে থাকে। ফলে আন্তঃনাক্ষত্রিক মেঘ গুলো ঘন হতে থাকে ফলে সৃষ্টি হতে থাকে একটি কেন্দ্রের। ক্রমান্বয়ে যখন কেন্দ্র সঙ্কুচিত হতে থাকে, তখন তার কেন্দ্রের ভর বৃদ্ধি পেতে থাকে এবং পরমাণু গুলোর মধ্যে সংঘর্ষ শুরু হয়, সৃষ্টি হয় বহির্মুখী চাপের। প্রচণ্ড চাপ সৃষ্টি হয় এবং শুরু হয় নিউক্লিয় ফিউশান বিক্রিয়া ফলে তাপ বৃদ্ধি পেতে থাকে। তাপমাত্রা বৃদ্ধির এক পর্যায়ে তাপমাত্রা ২০০০ কেলভিন অতিক্রান্ত হলে হঠাৎ কেন্দ্রটি জ্বলে উঠে এবং জন্ম হয় সূর্যের। তার গ্যাসীয় চারপাশ ছিল চ্যাপ্টা আকৃতির, ফলে এই অঞ্চলে গ্রহ গুলোও থালার ন্যায় চ্যাপ্টা আকৃতি হয়ে সূর্যের চারপাশে প্রদক্ষিণ করে।
প্রায় ৪.৬ বিলিয়ন বছর পূর্বে তৈরি হয় সূর্য, যা কোটি কোটি নক্ষত্রের তুলনায় মাঝারি সাইজের। সূর্যের ব্যাস ৮৬৪,০০০ মাইল, পৃথিবীর ব্যাসের ১০৯ গুন বড়। সূর্যের ভেতরে এরকম দশ লক্ষ পৃথিবী রাখা সম্ভব হলেও এর ওজন পৃথিবীর তুলনায় মাত্র ৩০,০০০ গুন বেশি। সূর্যের ভর 1.989★10 to the power 30 kg. পৃথিবীর তুলনায় সূর্যের অভিকর্ষ বল ২৮ গুন বেশি। সূর্যের গ্যাসীয় ঘনত্ব পানির ঘনত্বের মতই, কিন্তু এর কেন্দ্রস্থল সীসার চেয়েও দশগুণ বেশি ঘনত্বের। সূর্যের ভেতরের তাপমাত্রা ১০ মিলিয়ন ডিগ্রী এবং বাহিরের তাপমাত্রা ৬০০০ কেলভিনের মত। সূর্যের এই প্রচণ্ড তাপে বাহির অঞ্চলের গ্যাস গুলো আয়নিত হয় আংশিক ভাবে, কিন্তু ভেতরাঞ্চলে সম্পূর্ণ রূপে আয়নিত হয়ে পরমাণু হতে ইলেকট্রন বিচ্ছিন্ন হয়ে যায়। সূর্যের অণু ও আয়ন পরস্পরকে তীব্র বেগে টানে বলেই সূর্যের সাইজ গোলাকার। সূর্যের কেন্দ্রের দিকে চলছে প্রচণ্ড অভিকর্ষিক চাপ, যা সব কিছু কেন্দ্রের দিকে টানে এবং প্রচণ্ড উত্তপ্ত গ্যাস সৃষ্টি করে বহির্মুখী চাপ, ফলে এক ধরনের ভারসাম্য প্রতিষ্ঠিত হয়, যাকে বলে হাইড্রোস্ট্যাটিক ইকুইলিব্রিয়াম।