নিকোলা টেসলা বনাম এডিসন – উদ্ভাবকদের মধ্যে যুদ্ধ! এই মহান দুই উদ্ভাবকদের মধ্যে কেন, কেমন যুদ্ধ হয়েছিল, এসবে যাওয়ার আগে তাদের সম্পর্কে একটু জেনে নেওয়া যাক।
টিভির রিমোট ছাড়া যদি আপনার একটা দিনও পার করতে কষ্ট হয়, তাহলে নিকোলা টেসলাকে ধন্যবাদ দিন কারণ এ অসম্ভবটাকে সম্ভব তিনিই করেছেন। এমন আরও শত প্রযুক্তি আছে, যেমন- রিমোট কন্ট্রোল, নিয়ন এবং ফ্লুরোসেন্ট লাইট, ওয়্যারলেস ট্রান্সমিশন, কম্পিউটার, স্মার্টফোন, লেজার বিম, এক্স-রে, রোবোটিক্স এবং সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ এসি কারেন্টঃ আমাদের বর্তমান বৈদ্যুতিক সিস্টেমের ভিত্তি ইত্যাদি উদ্ভাবনের পিছনে রয়েছে এ মহান মানুষটার প্রত্যক্ষ এবং পরোক্ষ অবদান।
অন্যদিকে বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির ইতিহাসের আরেকজন গুরুত্বপূর্ণ এক বিজ্ঞানী টমাস এডিসন। তার উদ্ভাবিত ডিরেক্ট কারেন্টের (ডিসি) কথা আমাদের সকলের জানা। শুধু বিদ্যুৎই নয়, বাতিও তারই উদ্ভাবন। এছাড়াও সাউন্ড রেকর্ডিং, ভিডিওগ্রাফির মত উদ্ভাবন সহ মোট ১০৯৩টি উদ্ভাবনের পেটেন্ট রয়েছে তার নামে। পাশাপাশি টমাস এডিসন ছিলেন ইতিহাসের সেরা একজন সফল উদ্যোক্তা।
এখন আসি তাদের মধ্যকার সেই ঐতিহাসিক যুদ্ধ নিয়ে, যা ‘কারেন্ট ওয়ার’ নামে খ্যাত। এডিসনের কোম্পানিতে কাজ করতেন নিকোলা টেসলা। এডিসন বৈদ্যুতিক বাতির জনক। কিন্তু সেই বাতি অতটা কার্যকর ছিল না। এডিসন টেসলাকে বলেন, যদি একটা এমন বৈদ্যুতিক বাতি তৈরি করতে পারে যা উন্নত মানের ডিসি জেনারেটরে চালানো যায়, তাহলে তাকে ৫০ হাজার ডলার দিবে।
আরও পড়ুনঃ ভুল সময়ে জন্ম নেয়া পৃথিবীর ইতিহাসে সব থেকে রহস্যময় ও বিস্ময়কর বিজ্ঞানী
টেসলা কঠোর পরিশ্রম করে ঠিকই একটা কার্যকর বৈদ্যুতিক বাতির মডেল তৈরি করতে সফল হন। পরে এডিসনকে টাকার কথা মনে করিয়ে দিলে এডিসন তখন হেসে বলেন, ‘আমেরিকানদের মশকরা তুমি বুঝনি। ৫০ হাজারের প্রতিশ্রুতিটা নিতান্ত ফান ছিল।’ এডিসন শুধু টেসলার সাপ্তাহিক বেতনটা ১০ ডলার বাড়িয়ে দেন।
এতে টেসলা ভীষণ মর্মাহত হয়ে চাকরি ছেড়ে দেন। নতুন নতুন জিনিস তৈরি করতে থাকেন এবং সেগুলোর পেটেন্ট করান। এরপর পরিচয় হয় এডিসনের প্রধান প্রতিদ্বন্দ্বী জর্জ ওয়েস্টিংহাউসের সঙ্গে। তিনি টেসলার সঙ্গে কথা বলেন এবং নিজের কোম্পানিতে চাকরির প্রস্তাব দেন। তখন এডিসনকে জব্দ করার ভালো সুযোগ পেয়ে গেলেন।
দুজন মিলে গবেষণা করলেন এসি কারেন্ট নিয়ে। সফলভাবে এগিয়ে চলছিল এসি বিদ্যুতের জয়যাত্রা। সেটাই এডিসনের জন্য হুমকি হয়ে ওঠে। তখনই আসল যুদ্ধ শুরু হয়। এডিসন বুঝতে পারছিলেন তার ডিসি কারেন্টের ব্যবহার বেশি দিন চলবে না, মানবসমাজে একচ্ছত্র আধিপত্য নেবে টেসলার এসি কারেন্ট। এসি কারেন্টের ভয়াবহতা যদি দেখানো যায় লোকসমাজে, সংবাদমাধ্যম যদি ফলাও করে সে সংবাদ প্রচার করে, তবে হয়তো থামানো যাবে টেসলাকে। কারণ তখন কারেন্টের শক খাওয়া বিষয়ে মানুষ জানতো না। তাই এডিসন এসি কারেন্ট নিয়ে ভুল প্রচারণা শুরু করেন।
রাস্তায় রাস্তায় ক্যাম্প বানিয়ে প্রাণীর (কুকুর,হাতিসহ) দেহে এসি বিদ্যুতের শক দিয়ে জনসম্মুখে হত্যা করে মানুষের মনে ভয় সৃষ্টি করতে লাগলেন। একজন মৃত্যুদণ্ড প্রাপ্ত আসামিকেও শক দিয়ে হত্যা করার জন্য প্রশাসনকে বোঝান।এই ঘটনা গুলো ঘটিয়ে মানুষের মনে ত্রাস সৃষ্টি করে এডিসন নিকোলা টেসলার কোম্পানিকে চরমভাবে আর্থিক বিপর্যয়ে ফেলতে সফল হন। কিন্তু মানুষ পরবর্তীতে ঠিকই এসি কারেন্টের প্রয়োজনীয়তা বুঝতে পারে।
সব মিলিয়ে কারেন্ট ওয়ারে শেষ পর্যন্ত হেরে গিয়েছিলেন এডিসন। ঘরে ঘরে জায়গা করে নিয়েছিল এসি কারেন্ট। তবে ব্যাটারিতে এখনো সেই ডিসি কারেন্টই ব্যবহৃত হয়। অর্থাৎ ব্যাটারিচালিত যত কিছু আমরা ব্যবহার করি তা এডিসনেরই উদ্ভাবিত ডিসি কারেন্টের।
এডিসন একটু স্বার্থপর টাইপ ছিলেন, তাই নিন্দাও কম পাননি । কিন্তু আজকের প্রযুক্তিনির্ভর পৃথিবীর পেছনে তার অবদানকে কোনোভাবেই অস্বীকার করা যাবে না। এখন দুজনের মধ্যে আপনার কাকে বেশি পছন্দ কমেন্টে জানাতে ভুলবেন না কিন্তু!