জামি এবং সামি দুই যমজ ভাই। এদের মধ্যে কেউ একজন একটি মূল্যবান অ্যান্টিক শোপিস ভেঙে দিয়েছে এবং কেউ নিজের ভুল স্বীকার করছে ন! এখন এদের মধ্যে কে এই কাজটি ঘটালো তা শনাক্ত করার একমাত্র উপায়ই হচ্ছে ফিঙ্গারপ্রিন্ট। অবিকল একই দেখতে এই যমজ বাচ্চাগুলোর বাহ্যিক অবয়ব একই রকম দৃষ্টিগোচর হলেও তাদের ফিঙ্গারপ্রিন্ট বা আঙ্গুলের ছাপ কিন্তু পুরোপুরি ভাবে আলাদা। ব্যাপারটা কিন্ত ভাববার বিষয়, তাই না? ঠিক কেনো এমনটা হয় তাই নিয়ে আজ আলোচনা করবো।
ফিঙ্গারপ্রিন্ট বর্তমানে অপরাধী শনাক্তকরণে এবং দৈনন্দিন জীবনে বিভিন্ন প্রয়োজনে ঠিক কতটা অভাবনীয় পরিবর্তন এনেছে তা বলার অপেক্ষা রাখে না। ১৮৮০ সালের শেষের দিকে বিজ্ঞানীরা বিভিন্ন তথ্যসূত্রে প্রমাণ পেয়েছেন মানুষের আঙুলের ছাপ শুধু প্রত্যেকটি মানুষের ক্ষেত্রে একক তাই-ই নয়, বরং এটি আপনার পুরো জীবন জুড়ে অপরিবর্তিত থাকে।
এখন আসা যাক আমাদের মূল আলোচনায়, অনুরূপ চেহারার অধিকারী দুই জমজ বাচ্চার DNA সিকোয়েন্স একই হলেও মাতৃগর্ভে থাকা অবস্থায় জিনগত এবং পরিবেশগত কারণে তাদের আঙ্গুলের ছাপ একে অপর থেকে কিছুটা ভিন্ন হতে পারে। সাধারণত জমজ বাচ্চা দুই ধরনের হতে পারে: ফেটার্নাল এবং আইডেন্টিক্যাল। ফেটার্নাল যমজ বাচ্চারা সাধারণত পৃথক ডিম্বাণু এবং দুটি পৃথক শুক্রাণু থেকে বিকাশ লাভ করে সুতরাং ফেটার্নাল যমজরা একে অপরের DNA ভাগ করে না। অপরদিকে আইডেন্টিক্যাল যমজ বাচ্চারা একই ডিম্বাণু হতে তৈরি হয় যা পরবর্তীতে দুটি ভাগে বিভক্ত হয়। ফলে দুটি ব্যক্তির DNA হুবহু একই থাকে। এখন মনে হতে পারে যেহেতু আইডেন্টিক্যাল যমজ, ডিএনএ হুবহু একই রকম, সেক্ষেত্রে আঙ্গুলের ছাপও একই হবে। ন্যাশনাল ফরেনসিক সায়েন্স এবং টেকনোলজি প্রমাণ করেছে যে আইডেন্টিক্যাল যমজ সহ পৃথিবীতে কোন মানুষের আঙুলের ফিঙ্গারপ্রিন্ট একে অপরের সঙ্গে মিলবে না।
এই ভিন্নতার কারণ হলো, মাতৃগর্ভে থাকাকালীন ১৩ থেকে ১৯ সপ্তাহের মধ্যেই আঙুলের ছাপ গঠন হওয়া শুরু করে। গর্ভাশয়ে ভ্রুণের অবস্থান, নাভির দৈর্ঘ্য, রক্তচাপ ও পুষ্টির কারণে আঙ্গুলের বৃদ্ধি, এতে অবস্থান করা সরু লুপ এবং এতে আঁকাবাঁকা করা ঘূর্ণন কেমন হবে তা নির্ভর করে। বয়স বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে যখন দেহের উচ্চতা এবং ওজন বৃদ্ধি পেতে থাকে সেই সঙ্গে ছোট ছোট পার্থক্যগুলো আরোও স্পষ্ট হতে থাকে।
যদিও আইডেন্টিক্যাল যমজদের ক্ষেত্রে আপাতদৃষ্টিতে আঙ্গুলের ছাপ অনেকটা একই রকম তবুও ফরেনসিক বিশেষজ্ঞ এবং অত্যাধুনিক প্রযুক্তির মাধ্যমে এই সূক্ষ্ম পার্থক্য টাও খুব সহজে ধরে নেয়া যায়। সুতরাং অপরাধী যতই ধূর্ত হোক না কেন ফিঙ্গারপ্রিন্ট কিন্তু অনেক গুরুত্বপূর্ণ একটি প্রমাণ হিসেবে কাজ করবে!